সম্পর্কের মারপ্যাঁচ #ভয়ানক আবাস #Nadia Afrin | #বিন্নি ধানের খই #পর্ব-৫৫ #মিদহাদ আহমদ | Breastfeeding 8 Month Baby Jasper

#অনুগল্প

আমার বিয়ের আজকে ৫বছর হতে চলল। আমার কোনো বাচ্চা কাচ্চা হয়না। খুব শখ করেই বাবা ২বোন কে একই পরিবারে ২ভাইয়ের কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন।
আমার বিয়ের ৩বছর পর বিয়ে হয় আমার বোনের আর আমার ছোটো দেবরের।
আমার শাশুড়ি আমাকে প্রথম প্রথম ভালোবাসলেও বাচ্চাকাচ্চা না থাকায় এখন উনি সবসময় আমার উপরে রেগে থাকেন, সব জিনিসে ভুল ধরেন।
বাধ্য হয়েই স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম টেস্ট করাতে। রিপোর্টে আসলো আমি বন্ধ্যা। আমার কখনো বাচ্চা হবেনা।

আমার স্বামীও এখন আর আমায় তেমন গুরুত্ব দেয়না।
রিপোর্টের কথা জানার পর আমার শাশুড়ি আমায় বলল, দেখো মা যা হওয়ার মেনে যাও। আমি আমার বড় ছেলেকে আমি আবার বিয়ে করাবো আমার সংসারের তো একটা আলোর প্রয়োজন আছে। তুমি থাকতে পারো এই বাড়িতে সমস্যা নাই।
 
আমি জানি আমার স্বামী ও তাই চায় তাই মেনে নিলাম। কারন আমার আদরের আরেক বোন যে আমার দেবরের বউ। আমি কিছু বললে যদি তার সংসার ভাঙে।
বিয়ে টা হয়ে গেলো আর আমার স্বামী ও এখন ওর নতুন বউ নিয়ে ব্যাস্ত।
আমিও একটা ছোটো জব নিয়ে নিলাম নিজের জন্য।
২বছরের মাথায় দেখতে পেতাম আমার বোন কেও আমার শাশুড়ি যা তা বলে কথায় কথায় অপমান

করতো। আর আমার বোন আমার কাছে বসে কাদঁতো।
একদিন আমার শাশুড়ি বলল, তোর বোন ও বাচ্চা দিতে পারেনি আমার বড় ছেলেকে এখন তুই ও তোর বোনের মতোই বন্ধ্যা নাকি।
 
আমার শাশুড়ি এই কথা আমার গায়ে জ্বালা ধরানোর জন্য যথেষ্ঠ ছিলো।
আমার দেবর ও আমার বোন কে নিয়ে পরীক্ষা করাতে গেলো। আর রিপোর্টে আসলো,
আমার ছোটো দেবর কোনোদিন বাবা হতে পারবেনা,
হয়তো ভাগ্যের চাকা এভাবেই ঘুরে যায়,
আমার শাশুড়িকে ওইদিন বলতে শুনেছিলাম,
দেখো মা তুমি মেয়ে মানুষ,

আমার ছেলে তো তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো তাইনা.? তুমিও তাকে অনেক ভালোবাসো, জীবনে তো বাচ্চাই সব না, আমরা কয়দিন ই বা বাচবো আর।
কষ্ট করে থেকে যাও আমার ছেলের ভালোবাসায়, সে তোমায় আগলে রাখতে চায়। তুমি ছেড়ে গেলে সে ভেঙে যাবে।
আমার বোন আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুঁচকি হাসি দিয়ে আমার শাশুড়ি ২হাত ছেড়ে দেয় আর বলে,

মা একদিন আমার বোন কে আপনি বলেছিলেন মেয়েদের জীবনে বাচ্চাই সব। মা না হলে তাদের জীবনের কোনো মুল্য নেই।
ওইদিন যে আমার বোন টা ভেঙে গিয়েছিলো, আমার বোনের ভালোবাসার মানুষটাকে আপনি অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
কোথায় ছিলো আপনার এই ন্যায় কথা?

শাশুড়ি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়, সাথে থাকা আমার স্বামী ও।
আমি ওইদিন আমার বোন কে অবাক হয়ে দেখেছিলাম।
ও আমার হাত ধরেই বাড়ি ছেড়ে দেয়।
আজ আমার বোনের ২টা ছেলে আর ১টা মেয়ে আছে।
ওর সুখের সংসারে।

আর আমার ২টা জমজ মেয়ে আছে। আমি একজন কে বিয়ে করেছিলাম বাবার পছন্দে, তার ওয়াইফ ডেলিভারির সময় মারা যায়।
আমি তার মেয়েদের নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসি, তারা জানেনা আমি তাদের মা নই।
আমিও তাদের জানাইনি।
হোক না আমারি তারা।
জন্ম না দিলে কি মা হওয়া যায়না...!!!!!

#নারী
তাসমিয়া

আপনি কি জানেন? যারা বিড়াল পালতে পছন্দ করে কিংবা ভালোবাসে তাদের ক্যাট ফ্যানসিয়ার বা লাভার বলা হয়। 🤍✨
বিজ্ঞান বিড়াল পালন করতে উৎসাহিত করে কেনো জানেন? বিড়াল বুঝতে পারে আপনার ভিতরে বিদ্যমান নেগেটিভিটি এবং একাকিত্ব।
আমাদের পৃথিবীতে ৫০০ মিলিয়নের উপরে গৃহপালিত বিড়াল রয়েছে৷ এবং আমাদের সাথে এদের সম্পর্ক ১০,০০০ বছরের কাছাকাছি।

বিড়ালের রয়েছে ২০-১৪০ হার্জ অনুভব শক্তি যা মেডিক্যালি থেরাপিউটিক বলা হয়। আপনার অসুস্থতা এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে বিড়াল আপনাকে হেল্প করতে পারে।
বিড়াল গৃহপালিত প্রানিদের মধ্যে অন্যতম একজন ভালবন্ধু হিসেবে আপনাকে সঙ্গ দিতে পারে। যার ফলে আপনি মানষিক প্রশান্তি পেতে পারবেন।
 
======== 00 ============= 00 =============== 00 ==================
সম্পর্কের_মারপ্যাঁচ
পর্ব-৭
tani_tass_ritt

হঠাৎ ই তিথি রুদ্রের হাত ধরে ফেললো।
"আমার দিকে তাকাও।দেখোতো আমাকে কালো শাড়ী তে কেমন লাগছে? কালো রং না তোমার খুব পছন্দ। "
 
রুদ্র তিথির দিকে ভালো করে তাকালো।
আসলেই মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।কালো শাড়ী, কপালে কালো টিপ, ঠোঁটে লাল লিপ্সটিক,চোখে হালকা কাজল, খোলা চুলে অসম্ভব মায়াবী লাগছে।
রুদ্র তিথিকে দেখে মনে মনে প্রভাতিকে কল্পনা করছে।পিচ্চিটাকে না জানি কত সুন্দর লাগতো এই সাজে।

"তুমি কিছু বলছোনা যে আমাকে কেমন লাগছে?"
তিথির কথায় রুদ্রের হুশ ফিরলো।
"ভালো লাগছে।"
তিথি রুদ্রের হাত টা ছেড়ে দিলো।
মুচকি হেসে,
"প্রভাতির কথা চিন্তা করছো বুঝি? কি ভাবছো প্রভাতিকে এমন করে সাজলে কেমন লাগবে?"

রুদ্র হতভম্ব হয়ে গেলো তিথির কথা শুনে।এই মেয়ে মনের কথা বুঝে কিভাবে।
রুদ্র চুপ করে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না।

তিথি কিছুক্ষন চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজের মনে সাহস যোগাচ্ছে।কেনোনা এখন সে যা করবে তার জন্য তার সাহস লাগবে।ভেঙে পরলে চলবে না।
কিন্তু তার যে প্রচন্ড কান্না আসছে।এই বুঝি চোখের পানি বের হয়ে যাবে।অনেক কষ্টে তিথি তার কান্না আটকালো।লম্বা একটা শ্বাস নিলো।
 
"রুদ্র তুমি প্রভাতির কাছে ফিরে যেতে পারো।আমি তোমাকে আর আটকাবো না।আর এই কদিনের জন্য আমি দঃখিত।আমি জানি আমার জন্য তোমাদের বিশেষ করে তোমার অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।"

রুদ্র নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সে কি ভুল শুনছে নাকি ঠিক শুনছে।সে অবাক হয়ে তিথির দিকে চেয়ে আছে।
"এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।আমিও মানুষ।আমি তোমার প্রেমে এতোটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছিলো।আমার মনে জিদ চেপে গিয়েছিলো তোমাকে পাওয়ার।কেনোনা ছোটবেলা থেকে আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।তোমাকে পাব না এটা মানতে পারছিলাম না।"

রুদ্র কিছু বলতে যাবে তখনি
"আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।আমি আগে শেষ করি তারপর না হয় তুমি যা বলার বলো।"
রুদ্র মাথা নাড়লো।

"তুমি যখন রিয়াদের বাসায় এসেছিলে তখন থেকেই আমার তোমাকে ভালোলাগে।আর এই ভালোলাগা যে কবে ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝিনি।আর এই ভালোবাসার থেকেই আমার পাগলামি শুরু।
জানো আমি রোজ তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।তুমি বারান্দায় বসে থাকতে পছন্দ করতে। আমি তোমাকে জানালা দিয়ে দেখতাম।তুমি যতক্ষন বারান্দায় বসে থাকতে আমি ততক্ষন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তোমাকে দেখা তৃষ্ণা আমার দিন দিন বেরেই যাচ্ছিলো।
 
একদিন না দেখলে পাগল পাগল লাগতো।আমি জানি তুমি এগুলো কিছুই জানোনা।এমনকি কোনো দিনো খেয়ালও করোনি।তোমার যত ভাবনা সব তো প্রভাতিকে নিয়ে।
তোমার চোখে পরার জন্য কতকি করেছি। তোমার পছন্দের রঙের জামা পরেছি।যাতে একটু আমার দিকে তাকাও।কিন্তু আফসোস আমার দিকে তাকিয়েও দেখনি তুমি।"
এতো টুকু বলে থেমে গেলো তিথি।

রুদ্রের খারাপ লাগছে তিথির কথা শুনে।কিন্তু সে ও যে নিরুপায়।প্রভাতিকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবা তার দ্বারা সম্ভব না।
 
"আমি ভেবেছিলাম তুমি পড়াশুনা নিয়ে বিজি থাকো তাই হয়তোবা আমার দিকে খেয়াল করো না।কিন্তু আমার ভুলটা ভেঙে গেলো যখন আমি তোমাদের বাড়ি গেলাম।সেখানে প্রভাতিকে দেখেই সবটা বুঝে গিয়েছিলাম।প্রভাতির জন্য তোমার যে কেয়ার সেটা দেখে যে কেউই বুঝে যাবে। কিন্তু এটা আমি মানতে পারিনি।কেননা প্রভাতি গ্রামে থাকে।ও তেমন স্মার্ট ও না।আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে জয় করতে পারবো।তুমি আমার ভালোবাসা দেখে প্রভাতিকে ভুলে যাবে।এটাই আমার সব থেকে বড় ভুল ছিলো।

তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি এতোটাই নিচে নেমে গিয়েছি যে নিজের দিকে তাকাতেও আমার লজ্জা লাগছে।নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হচ্ছে আমার।
এইকদিন তুমি আমার সাথে ছিলে এটার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি আমার সাথে থেকেও আমার সাথে ছিলে না।তোমার চোখে কোনোদিন আমি আমার জন্য নূন্যতম কোনো অনুভুতি দেখিনি।খালি দেখেছি বিরক্ত।আমি তোমার ভালোবাসার মানুষ নাই হতে পারি কিন্তু বিরক্তিকর হতে পারবো না। 

আজকের পর থেকে আমি তোমাকে আর জ্বালাবো না।তুমি মুক্ত।"
তিথি আর থাকতে পারছেনা।তার বুক ফেটে কান্না আসছে।চোখের অবাধ্য পানিগুলোকে কোনোভাবেই থামাতে পারছে না।"
রুদ্র তিথি এক হাতে ধরে,
 
"তুমি অনেক ভালো মেয়ে তিথি।তোমার জন্য আরো ভালো কেউ অপেক্ষা করছে।যে তোমাকে তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসবে।"
তিথি রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
"আমি তোমাকে কোনোদিনও ভুলতে পারবোনা।তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা।আমি খুব হিংসে হয় প্রভাতিকে। ভালোবাসলে এতো কষ্ট কেনো পেতে হয়!"
রুদ্র কিছু বলছে না।মেয়েটা কাঁদুক। কাঁদলে মন হালকা হবে। সে তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এভাবে কতক্ষণ পার হলো কেউ জানেনা।একটা সময় তিথিই নিজ থেকে রুদ্রকে ছেড়ে দিলো।

"তুমি প্লিজ এখান থেকে যাও।তোমাকে দেখে আমার কষ্ট আরো বাড়ছে।আবার দেখা যাবে আমি তোমাকে আটকে ফেলেছি।"
রুদ্র তিথির গাল টেনে দিলো।

"ভালো থেকো।" বলেই রুদ্র হাটা শুরু করলো।পিছ ফিরে আর তাকালো না।তাকালে দেখতে পেতো তিথির সেই মায়া ভরা মুখটা। আর এই মায়ায় যে একবার জড়িয়ে যায় সে আর বের হতে পারেনা।

রুদ্র যাওয়ার পর তিথি ফ্লোরেই বসে পরলো।
তিথির মা রুমে এসে তার মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
তিথি তার মায়ের কোলে শুয়ে রইলো।এই কষ্ট থেকে বের হওয়ার উপায় তার জানা নেই।
রুদ্র প্রথমেই রিয়াকে ফোন দিয়ে সব বললো। এবং এটাও জানালো সে বাসায় আসবে না ডিরেক্ট এখান থেকে বাড়ি যাবে।সে আর দেরি করতে চায় না।এমনিতেই অনেক বাধা পরেছে। 
 
রিয়াও আর না করলোনা।কেননা এতোদিন পর তাই ভাইটাকে এতো বেশি খুশি খুশি লাগছে।।
রুদ্র বাসে বসে আছে।তার আর তর সইছে না।কখন সে পৌছাবে তার প্রভাতির কাছে।
এইদিকে আয়শা বেগম রিয়ার কাছে শুনলেন রুদ্র নাকি বাড়ি যাচ্ছে।তার মাথায় আকশ ভেঙে পরলো।কেননা তার বোন তাকে বার বার না করে দিয়েছে যাতে রুদ্র কোনোভাবেই এখন বাড়ি না আসে।
 
কেনোনা সে তৌকির আর প্রভাতির বিয়ের কথা ভাবছে।এখন রুদ্র আসলে নির্ঘাত কোনো ক্যালেংকারি করবে।
আয়শা বেগম দ্রুত তাএ বোনকে ফোন দিলেন।দুবার রিং বাজার পর ফোনটা রিসিভ হলো।
"হ্যালো বুবু ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।"
"কি হয়েছে? "
 
"বুবু রুদ্র বলে বাড়ি যাচ্ছে।"
"মানে কি বলছিস? তোকে না বলেছিলাম ও যাতে কোনোভাবে এখানে না আসে।"
"আরে বুবু আমি জানতাম নাকি।আমি রিয়ার থেকে শুনলাম।রুদ্র তিথির বাসার থেকে ডিরেক্ট বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।"
রুবি বেগম ভেবে পাচ্ছেন না সে এখন করবে টা কি।
"আচ্ছা তুই ফোন রাখ দেখছি আমি কি করা যায়।"
রুবি বেগম ফোনটা কেটেই সালমা বেগম কে ফোন দিলেন।
" শুন আমি চাচ্ছি তুই আর তৌকির কালই এসে পর।আমি তৌকির আর প্রভাতির বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি।"
"তুই এতো তাড়াহুড়ো কেন করছিস? আর প্রভাতি তো এখনো ছোট।"
"আচ্ছা।"
 
সালমা বেগম আর কিছু বললেন না।
তৌকিরের রুমে গিয়ে,
"তৌকির বাবা শুনছিস তোর রুবি আন্টি কাল যেতে বলেছে।তোর আর প্রভাতির বিয়ের কথা বার্তা বলতে।"
"মা তোমার মনে হচ্ছে না উনি খুব জলদি করছে।"
"হ্যা রে আমারো কেমন যেনো লাগছে।"
"আচ্ছা মা তুমি যাও। আমি দেখছি।"
তৌকিরের সব কিছু কেমন যেনো লাগছে।মনে হচ্ছে অনেক বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।
 
★★★★★★
 
রুদ্র বাড়ি এসেই ডিরেক্ট প্রভাতির রুমে চলে গেলো।
যেয়ে দেখলো প্রভাতি ফোনে হেসে হেসে কথা বলছে।সে অবাক হলো প্রভাতির হাতে ফোন দেখে।
প্রভাতি দরজার দিকে চোখ পরতেই আৎকে উঠলো।
"রুদ্র ভাইয়া।" বলেই তার হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো।অপর পাশ থেকে তৌকির হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।
রুদ্র কে দেখে তার হাত পা কাঁপছে।অসম্ভব ভালো লাগছে তার।
"কেমন আছিস রে? "
 
প্রভাতি কিছু বলতে যাবে তখনি রুবি বেগম প্রভাতির রুমে এলেন।
রুদ্র কে দেখে তার রাগ উঠে গেলো।
"তুই আমার সাথে দেখা না করে এই রুমে কি করছিস?"বলেই রুদ্রকে সেখান থেকে নিয়ে গেলো।
 
" তুই ফ্রেশ হয়ে নে। আমি তোকে খাবার দিচ্ছি।"
রুদ্র ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো।তার যে আর তর সইছে না প্রভাতি রুম থেকে বের হচ্ছে না বলে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
তখনি রুদ্রের ফোন বেজে উঠলো।রিয়া কল দিয়েছে।
"হ্যালো ভাইয়া কি অবস্থা তোর? প্রভাতির সাথে কথা হলো?"
"আর বলিস না।মা তো ওর ধারের কাছেই ঘেষতে দিচ্ছে না।"
"উফ তুই তাহলে কখন বলবি?"
"আজ কালের মধ্যে যেভাবেই হোক আমি ওকে প্রপোজ করবো।।আমি আর দেড়ি করতে চাইনা। "
 
"আচ্ছা ভাইয়া।"
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
রুদ্র পিছে ফিরে চমকে গেলো। দরজার সামনে....
চলবে....
============= 00 ============ 00 ============= 00 =============
------শেষে Twist আছে_____
 
বান্ধবীর সাথে অনেকদিন দেখা হয়না, তাই আজকে বান্ধবী আমার বাসায় এসে থাকবে। বিকেলে বের হওয়ার আগে মেসেজ দিয়ে বললো বান্ধবী বের হইছি। আমি বললাম আচ্ছা।
এক ঘণ্টা পর মেসেজ দিলাম কিরে কই আছিস দেখি মেসেজ ডেলিভারি হয়না। এরপর কল দিলাম দেখি বন্ধ। টেনশনে পড়ে গেলাম এরপর ঠিক সন্ধ্যায় বান্ধবী আমার বাসায় এসে পৌঁছালো।
 
খেয়াল করলাম হঠাৎ করে ওর চুল গুলো অনেক লম্বা হয়ে গেছে। কথাবার্তার ধরণ ও অনেকটা চ্যাঞ্জ। আমি ভাবলাম মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসতেই পারে এই ভেবে কোলাকুলি করে রুমে নিয়ে আসলাম।
 
অনেক গল্প গুজব করলাম, একটা বিষয় খেয়াল করলাম বান্ধবী কেমন জানি লোভী লোভী নজরে আমার দিকে তাকায়। রাতের খাবার শেষে রুমে আসতেই কারেন্ট চলে গেলো। মোবাইল টাও অন্ধকারে খুঁজে পাচ্ছিনা।
 
হঠাৎ খেয়াল করলাম কেমন জানি কাঁচা মা'ছের গন্ধ। বান্ধবী ও চুপচাপ কোনো কথা বলেনা। তার উপর কেমন জানি নুপুরের শব্দ পাচ্ছি। হঠাৎ কারেন্ট চলে আসলো বান্ধবী দেখি আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো আমার দিকে তাকিয়ে। 
 
পরে বললাম কিরে ডাকি জবাব দেস নাই যে? এরপর গিয়ে মোবাইল টা হাতে নিলাম। হাতে নিতেই দেখি বান্ধবীর মেসেজ "সরি দোস্ত আসতে পারিনাই আর কিছু জানাতেও পারিনাই। টেনশনে ছিলি হয়তো আসলে আমার মোবাইল টা রাস্তায় চুরি হয়ে গেছে তাই আর আসিনাই আজকে।
এখন আপাতত মোবাইল হাতে শক্ত হয়ে দাঁড়ায় আছি.....
========== 00 ============== 00 =============== 00 ==============
#ভয়ানক_আবাস
#Nadia_afrin
{২}
'খুব ভোরে ঘুম ভাঙে আমার কাকিমার।কাকিমা নিচে নেমে দেখে জামাকাপড় সব এদিক সেদিক পড়ে আছে।
নিচের তলায় জামা কাপড়ের লাগেজ গুলো রাখা ছিল।মনে হচ্ছে কেউ যেন খুব রাগ নিয়ে জিনিসগুলো ছুড়ে দিয়েছে।

"কাকির মনে খটকা লাগলেও সে কিছু বলে না কাউকে"।
নিজ দায়িত্বে জিনিস গুলো গুছিয়ে রাখে।
সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরী করে সবাইকে ডাকে কাকিমা।
"আমরা খাবার খেয়ে যে যার কাজে লেগে পড়ি"।
'আমি ও মহুয়া দুজন মিলে ঘর গোছাচ্ছিলাম।
'মহুয়ার ঘরের সঙ্গে একটি বারান্দা ছিল। এডজাস্ট বাথরুম ছিল।
আমি দাড়িয়ে কাপর ভাজ করছিলাম।মহুয়া বই গোছাচ্ছিলো।
"হটাৎ আমার মনে হলো খাটের নিচ থেকে কেউ আমার পায়ে হাত দিল"।ভীষণ ঠান্ডা সেই হাত।
 
আমি দ্রুতই নিচে তাকালাম।
কাউকে দেখতে পেলাম না ঠিকই তবে মনে হলো আমি তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু যেন খুব দ্রুত খাটের নিচে চলে গেল।

'আমি খাটের নিচ দেখার জন্য নিচে বসলাম।
ঝুকে খাটের তলায় উকি দেব এমন সময় মহুয়া ডেকে ওঠে আমায়।
খাটের নিচে আর দেখা হলো না আমার।অন্য কাজে মনোনিবেশ করলাম।
"বিকালের মাঝেই সব কাজ শেষ এলো আমাদের"।
'আমরা ও ফুফু-ফুফা ওপরের তলায় থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
মহুয়া আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে গোসলে গেল।
'বাথরুমের দরজা বন্ধ করতেই মহুয়ার মনে হলো এক ঠান্ডা হাওয়া তার শরীর ছুয়ে গেল।
মহুয়া মৃদু কেপে উঠলো।

"মহুয়ার চোখে সমস্যা থাকার জন্য সে সব সময় চশমা ব্যবহার করতো"।
তো যথারীতি চশমা খুলে এক সাইডে রেখে পানির শাওয়ার ছেড়ে চোখ বুজে পানির নিচে দাড়ালো সে।
"কিছু সময় অতিবাহিত হতেই ওর মনে হলো পাশ থেকে কেমন যেন গড়গড় শব্দ শোনা যাচ্ছে"।
মহুয়া চোখ মেললো,আবছা নয়নে দেখলো লোমশ আকৃতির ভয়ংকর চেহারার কেউ দাড়িয়ে আছে ওর পাশে।

মহুয়া ঘাবড়ে গেল,দ্রুত পেছন ঘুরে চশমা পড়ে নিল।
পুনরায় সেদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।
মহুয়া ভাবলো মনের ভুল।কেননা খুবই আবছা ছিল সেই অবয়ব।
'গোসল শেষে মহুয়া আমাকে সঙ্গে নিয়ে খাবার খেল।
'আমার ফুফুকে আমরা আন্টি বলে ডাকতাম।
আন্টি আমার ছোট চাচাতো ভাই মেহের কে সঙ্গে নিয়ে ছাদে গেল।ছাদে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করা ছিল।

মেহের বেশ হাশিখুশি ছিল।ছাদে গিয়েও বেশ হাসছিল।
আচমকা মেহের হাসি থামিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে চারপাশে অদ্ভুতভাবে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো।
আন্টি তা দেখে বেশ আশ্চর্যবোধ করলো।সে মেহেরের গালে হাত ছুলো।সঙ্গে সঙ্গে মেহের বেজায় চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।
আন্টি দূতই মেহেরকে নিয়ে নিচে নেমে এলো।
সে রাতে মেহেরের বেশ জর আসলো।
"আমার রুমের পাশে আরেকটি রুম ছিল",যে রুমের একটি দরজা আমার ঘরের ভেতরে ছিল।সে ঘর ফাকাই ছিল।

ডান পাশের ঘরটি ছিল মহুয়ার।তার পাশের রুম আঙ্কেল-আন্টির।
'সন্ধ্যায় নাশতা করে আমি,মহুয়া ও আন্টি বসার ঘরে বসে আলোচনা করছিলাম।আম্মু আর কাকিমা রান্নাঘরে ছিল।রান্নাঘর থেকে বসারঘর ও ডাইনিং রুম স্পষ্ট দেখা যেত।এবং বসার ঘর থেকেও ডাইনিং রুম বেশ ভালোভাবেই দেখা যেত।
হটাৎ আন্টির চোখ যায় ডাইনিং রুমে।আন্টি দেখে ডান দিকের চেয়ারে কেউ বসে আছে মাথা নিচু করে।মনে হচ্ছে খাবার খাচ্ছে।
আন্টি ভাবে আঙ্কেল হয়ত।

সে আবারও আমাদের আলোচনার দিকে মন দেয়।
কী যেন মনে করে পুনরায় ডাইনিং রুমে তাকালে দেখে কেউ নেই সেখানে।
আন্টি বোকা বনে যায়।"ডাইনিং রুম থেকে বের হওয়ার দরজা একটিই",যেটি বসার ঘর দিয়ে।অর্থাৎ আঙ্কেল যদি বের হতো তাহলে আমাদের সামনে দিয়েই যেতে হতো তাকে।
আন্টি চোখের ভ্রম মনে করে।
সেদিন রাতে যা হয় আমাদের সঙ্গে 😳
=========== 00 ============ 00 ============= 00 =============
#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_৫৫
#মিদহাদ_আহমদ

গভীর অন্ধকার। বিছানায় শুয়ে আছে আসিফ। ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে নুপুর। দুজন দুজনের পাশে থেকেও যেনো যোজন যোজন দূরে।
আসিফ আমার উপর তার ডান হাত রাখতেই আমি বিছানায় উঠে বসলাম। কোন কথা বললাম না৷ আসিফও উঠে বসলো। লাইট জ্বালালো৷ তারপর বললো,
'আই এম সরি নুপুর। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জীবনে কখনো ভাই হয়ে বোনের উপর নিজের কর্তব্য পালন করিনি। তাই এখন ভেবেছি, হয়তো নিজের বোন এক স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে নিজের মাঝে, সেই স্বপ্নকে যেনো লালন করতে দেই৷ কিন্তু এখন রিয়েলাইজ করছি, আমি ভুল। আমার চিন্তা ভুল। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও নুপুর। আমি এই অন্যায় চিন্তার কারণে নিজের কাছেই নিজে লজ্জিত।'

আসিফের এক নাগাড়ে বলা কথাগুলো আমি শুনলাম শুধু। কোন জবাব দিলাম না৷ আসিফ আমার হাতের উপর তার হাত রেখে বললো,
'তুমিই তো আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছো নুপুর৷ তোমার উপর ভরসা করেই তো আমি আমার জীবনে ফিরে এসেছি। আর আজ যখন আমি আমার জীবনে করা কোন এক ভুলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি, তখন তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না বলো?'
'আমার গল্প...'

আসিফ এবার আমাকে তার বাহুতে নিয়ে ধরে বললো,
'আমার গল্প, তোমার গল্প, আমাদের গল্প। আমাদেরই আছে সে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি নুপুর, আবদার আবদারের জায়গায় রেখে দিয়েও আমি তোমাকে তোমার গল্প ফিরিয়ে দিবো। আমি আমার বোনের চিন্তাও করছি, কিন্তু একজন মায়ের বুক থেকে তার বাচ্চা কেড়ে নিয়ে অন্যের সংসারের চিন্তা নয়!'

আমি আর সামলাতে না পেরে ঢলে পড়লাম আসিফের বুকে। কিছুক্ষণ কান্না করলাম তাকে জড়িয়ে ধরে। বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম,

'আমার মেয়েটাকে আমি নিজ থেকেই আমার দূরে সরিয়েছি। আমার চেয়ে খারাপ মা এই পৃথিবীতে আর একটাও নেই। আমার পেটের সন্তান রেখে আমি কীভাবে দেশের বাইরে এভাবে পড়ে রইলাম। কীভাবে!'
'কোন ভুল নাই এখানে নুপুর। লাইফে সবকিছুর দরকার আছে। আর দরকার যখন আমাদের গল্পের, তখন আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমাদের গল্প আমাদের মাঝেই ফিরে আসবে। আমাদেরই থাকবে।'
'সত্যি তো?'
'হ্যাঁ নুপুর। সত্যি।'
পরেরদিন সকালে আমি খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠলাম। শাশুড়ি আমাকে সকাল সকাল উঠতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
'কী হলো? এত সকাল যে? কোথাও যাওয়া আছে নাকি?'
'না মা। গল্পের ক্লাস না?'

'না তো। আজ তো গল্পের ক্লাস না। আজ শনিবার না? ওর স্কুল শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। আজ সে ড্রইং ক্লাসে যাবে। এখন বাজে সাতটা। ড্রইং ক্লাস সকাল এগারোটায়।'
আমার কেমন জানি এক অসহায় অসহায় মনে হলো নিজেকে। আমার নিজের মেয়ের কখন কোন ক্লাস, কখন স্কুল আর কখন ড্রইং মা হয়ে এর কোনকিছু আমি জানি না। এরচেয়ে বড় অসহায়ত্ব আমি এর আগে কখনো অনুধাবন করতে পারিনি। শ্বশুর ডাক দিয়ে বললেন,

'মা এক কাপ চা বানিয়ে দাও তো এনে। কতদিন আমার মেয়ের হাতের বানানো চা খাই না। '
আমি মুখে হাসি এনে শ্বশুরের জন্য চা বানাতে গেলাম রান্নাঘরে৷ মা রান্নাঘরেই ছিলেন আসিফের জন্য পায়েস রান্না করায়। মা আমাকে অভয় দিয়ে বললেন,
'তোর শাশুড়ি মায়ের কথাগুলো তো এমনই। এগুলো মনে নেয়ার কী আছে? তারচেয়ে বরং দেখতে হবে কীভাবে গল্পের মা হওয়া যায়। তাইনা?'

আমি জবাব দিলাম না আর। চা বানিয়ে শ্বশুরের রুমে নিয়ে গেলাম। শাশুড়িও বসা ছিলেন বিছানায়৷ শাশুড়ি আমাকে কাছে এনে বসালেন৷ শ্বশুর চায়ের কাপ পিরিতে লাগিয়ে হালকা মৃদু শব্দ করে কেশে উঠলেন দুইবার। শাশুড়ি বললেন

'মারে, আমি বুঝতে পারছি তোর সব কষ্ট৷ একজন মা আর যাই হোক, তার পেটের সন্তানকে অন্তত অন্যকারো কাছে দেখে শান্তি পায় না।'
'না না মা। এ আপনি কী বলছেন? তানিয়া আপা তো...'
 
'না রে মা। আমি একদিকে মেয়ে অন্যদিকে বউ, এই দুইয়ের পাতাটনে পড়ে কোনদিকে যাব কিছু বুঝতে পারছি না। একবার না, বারবার আমার মনে হয়, আমি আমার জায়গায় অপারগ। আমার শক্তি নাই। তোমরা যখন আমেরিকা চলে গেলা, তখন গল্পই আমার মেয়েকে জীবন দিয়ে দিলো। ডাক্তার জানিয়েছে তানিয়া যে মানসিক ট্রমার মাঝে আছে সেই ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব৷ যেকোন সময়ে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। তানিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে পারে। এবং এখনও সে মানসিক ভারসাম্যহীন। গল্পকে যদি আমি কেড়ে নেই তার থেকে, তাহলে সে যদি তার উদগ্রীব কোনকিছু থেকে গল্পের খারাপ কোনকিছু করে বসে!'

'কী বলছো এসব আসিফের মা। যা মুখে আসবে তাই বলে দিবা? একটু তো মহল বুঝবা নাকি?'
শ্বশুর জোর গলায় বললেন কথাগুলো। শাশুড়ি জবাব দিলেন,
'সত্যকে আমি আর চাপা দিয়ে রাখতে চাই না আসিফের বাবা। নুপুর মা আমার, গতরাতে আমার সামনেই তানিয়া গল্পকে তোমায় ডাইনি বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তানিয়া এখন যেকোন ভাবেই চাইবে, গল্প তার হোক। পেটে না ধরলেও, পিঠে ধরে সে বড় করছে গল্পকে। গল্প ছাড়া তানিয়া কখনোই নিজের জীবন কল্পনা করতে পারবে না আর। এদিকে আমি এই অন্যায় আর দেখতে দিতে পারবো না।'
 
এমন সময় আসিফ রুমে এসে ঢুকলো। আসিফ শাশুড়ির পাশে গিয়ে বসে বললো,
'মা, আমি কী করতে পারি এখন? আমি এই অন্যায় হতে দিতে পারবো না। একদিকে আমার বোন অন্যদিকে...'

আসিফ কথাগুলো শেষ করার আগেই ডাইনিং রুম থেকে চিল্লাচিল্লির শব্দ আসতে লাগলো। আমরা সবাই উঠে গেলাম। গিয়ে দেখি ননাস জোর করে দুধ খাওয়াচ্ছেন গল্পকে। গল্প খাবে না৷ সে না করছে বারবার। আমি এগিয়ে গেলাম। চেয়ার টেনে বসতেই গল্প উঠে গেলো চেয়ার থেকে। গল্প তাকালো ননাসের দিকে একবার। আমি গল্পকে টেনে কাছে আনলাম। ননাসের দিকে গল্প আবার তাকালো। বুঝতে পারলাম গল্প তার মায়ের অনুমতি নিচ্ছে। ননাস চোখের পলক ফেলে গল্পকে আমার কোলে বসিয়ে দিয়ে বললো,

'লক্ষ্মী মেয়ের মতো এবার দুধগুলো খেয়ে ফেলো মা।'
'তারপর আমাকে কিন্ডারজয় দিবে?'
ননাসকে জিজ্ঞেস করলো আমার মেয়েটা। ননাস বলার আগেই আমি বললাম,
'হ্যাঁ মা। কেন দিবো না? অবশ্যই দিবো। তুমি দুধ খেয়ে নাও আগে।'
'তুমি দিবে?'

আবারও শিশুসুলভ প্রশ্ন করলো গল্প। ননাস বললো,
'হ্যাঁ আমি দিবো, সেও দিবে। তুমি আগে লক্ষ্মী বাচ্চার মতো খেয়ে নাও দেখি।'
গল্পের দুধ খাওয়ার পাট চুকিয়ে গল্পকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলো ননাস। দশটা নাগাদ সে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো গল্পকে নিয়ে। মা পাশে থেকে বললেন,
'তানিয়া, নুপুরকে নিয়ে যা আজ তোর সাথে। সে দেখে এলো। '
তানিয়া আপা বললো,

'নুপুউউর, যাবে আজ? বাইরে অনেক গরম। অন্যদিন যাবে? আজ আমি নিয়ে যাই গল্পকে? তাছাড়া তার এখন মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করা লাগবে। এক্সিবিশন আছে সামনে। আমি গেলাম।'
কোন কথা না বাড়িতেই গল্পকে নিয়ে রওনা দিলো তানিয়া। ঘরের দরজা পেরোনোর আগেই আমি ডাক দিলাম গল্পকে। আমার হাতে থাকা এক বক্স কিন্ডারজয় দেখাতেই গল্প দৌঁড় দিয়ে এগিয়ে এলো। উৎসুক চোখ নিয়ে গল্প বললো,
'এসব আমার জন্য এনেছো?'
'হ্যাঁ মা তোমার জন্য।'
'সবগুলা?'
'হ্যাঁ হ্যাঁ সবগুলা।'

তানিয়া আপাও এগিয়ে এলো। বক্সটা তার হাতে নিলো৷ গল্পকে আরেক হাতে ধরে বললো,
'আমরা কারে বসে বসে খাবো। তাড়াতাড়ি চলো। লেইট হয়ে যাচ্ছে মা।'
গল্প তানিয়া আপার হাতে ধরে ধরে বাইরের দিকে রওনা হলো। বারবার পেছনে ফিরে মেয়েটা আমার হাসছিলো। তার এই হাসিটা হয়তো কৃতজ্ঞতার হাসি। মা মেয়ের আত্মিক সম্পর্ক কি আর কেউ ভেঙ্গে দিতে পারে?
 
শ্বশুর, শাশুড়ি, মা আর আসিফ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। শ্বশুর বললেন,
'দেখিস মা, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই তোর পাশে আছি।'

এদিকে ড্রইং ক্লাসের ফারুক টিচার, যিনি এক্সিবিশনের জন্য গল্পকে রেডি করছিলেন, তিনি আজ ক্লাসে আসেননি। তানিয়া এক ঘন্টা বসে থেকেও টিচারকে আসতে না দেখে আর্ট স্কুলের আরেকজন টিচারকে জিজ্ঞেস করলে উনি জানালেন, ফারুক স্যারের চার বছর বয়সী মেয়ে অসুস্থ। তাই তিনি আসতে পারেননি। স্যারের স্ত্রী মারা গিয়েছেন তার মেয়েকে জন্ম দিতে গিয়ে৷ সেই থেকেই তিনি তার মেয়েকে একা একাই দেখাশোনা করছেন।

(চলবে----)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url