বাপের বাড়ির লোক | People of father's house : Story


বিয়ের আগেই কোনো এক মারফতে জানতে পেরেছিলাম যে, আমার বরের কাজল খুব পছন্দ। তো আমিও ঠিক করলাম বিয়েতে শুধু কাজলই পরব। ভারি সাজ দিতে এমনিতেও ইচ্ছে করতেছিল না।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। বিয়ের দিন শুধু কাজল আর লিপস্টিকটা পরলাম। মাগরিবের আগে আগে ওজু করে কাজল পরলাম যাতে পরে আবার ওজু করতে না হয়। ওজু করতে গেলেই তো কাজল মুছে যাবে। ওদিকে আমি তো নিজে নিজে কাজল লাগাতেও পারি না। মুছে গেলে পরে কাজল দিয়ে দিবে কে? যার জন্য কাজল দিলাম তাকেই যদি না দেখাতে পারি তবে লাভ কী এই কাজল দিয়ে?
যাইহোক, 
 
বিয়ে টিয়ে পরানোর ঝামেলা শেষে এবার এলো বিদায় বেলা। বিয়ের সময় আমার অনার্সের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বিয়ের একদিন পরও একটা এক্সাম ছিল। তাই কথা হয়েছিল এভাবে যে, বিয়ের পরদিন সকালে আমাকে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যাবে। এক্সাম টেক্সামের ঝামেলা শেষ হলে তারপর পার্মানেন্টলি যাব শ্বশুর বাড়ি।
 
তো আমি ভাবলাম, যেহেতু সকালেই চলে আসব সেহেতু আর কান্নাকাটির দরকার কী! সত্যি বলতে, বিয়ের দিন কান্নাকাটি করে বুক ভাসানোর পক্ষপাতি আমি আগে থেকেই ছিলাম না। তারমধ্য সেদিন আবার চোখে কাজল দিয়েছি। কান্না করে কাজল দিয়ে ভূত সাজার প্রশ্নই আসে না। ওদিকে আম্মু তো কান্না শুরু করে দিছে। কী আজব! কাল সকালেই তো আসতেছি। কান্না করা লাগবে ক্যান তাহলে? আম্মুর কান্না দেখে আমার চোখেও পানি টলমল করছে। উফ, কী মুসিবত বাবাহ্!
 
আম্মুকে ফিসফিস করে বললাম, "কান্না কইরেন না আম্মু। আমার কান্না চলে আসবে।"
সবার কাছ থেকে একযোগে বিদায় নিয়ে হনহন করে বরের সাথে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠলাম। কারো দিকে আর তাকাই নাই। কাল সকালে তো চলেই আসব। এক রাতের জন্য এত ইমোশনাল হয়ে কান্নাকাটি করে কাজল নষ্ট করার প্রয়োজন কী!
চলে গেলাম শ্বশুর বাড়ি। অবশেষে আমার স্বাদ পূরণ হলো। শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর পরই একটা রুমে কয়েক মিনিটের জন্য তার সাথে একান্তে দেখা হলো। আহ্ শান্তি! দেখা হয়েছে, এখন মুখ ধুতে আর বাঁধা নেই।
 
এশার নামাজের সময় ওজু করতে গিয়ে দেখি পানি লাগালেও কাজল ধুয়ে যাচ্ছে না। কী আজব! এটা কি তবে ওয়াটারপ্রুফ ছিল? হায় আল্লাহ, এটা আগে জানলে তো একটু হলেও কাঁদতাম আম্মুর সাথে। অন্তত লোক দেখানোর জন্য হলেও কান্না করা উচিত ছিল। লোকে এখন কী ভাবছে আমাকে, ছিঃ!
এরপর যখন বাড়ি গেছি সবাই আমাকে খাবলা মেরে ধরল।- কী নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে। এভাবে কেউ ঢ্যাং ঢ্যাং করে জামাইর সাথে আগে আগে গাড়িতে গিয়ে উঠে? তোর ভাইগো কাছে কইয়া যাস নাই। তোর ভাইরা তোরে উঠাইয়া দিয়া আইসা কান্নাকাটি কইরা অস্থির। আক্ষেপ করল কত। তোর দিলে কি মায়াদয়া নাই? এমন নির্লজ্জ কেউ হয়?
 
বাপের বাড়ির লোকরা বলে তো বলেই। শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও ছাড়ে না। তাদেরও একই কথা- বিয়ের একটা দিন, তাও আমি কাঁদলাম না। কী মেয়ে রে আমি বাবাহ্! পুরাই নিষ্ঠুর...
এদিকে আমি বেচারি তাদের কীভাবে বুঝাই! কাঁদলে যে আমার কাজল নষ্ট হয়ে যেত। আমি কি আর জানতাম যে, কাজল ওয়াটারপ্রুফ ছিল!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url