#চৈত্রিকা #অন্তিম পর্ব (প্রথম অংশ) #বোরহানা আক্তার রেশমী | #সময়ের বিচ্ছেদ ভালোবাসার নয় #সমুদ্রিত সুমি | Breastfeeding Attachment (English) - Breastfeeding Series


দুদিন হলো আম্মু বাসায় নেই।
আম্মু নেই মানেই তো সব কাজ তার মেয়ের (আমার) উপর বর্তায়। সকালে উঠে রুটি বানাচ্ছিলাম, সাথে ডিম ভাজা। একটু তো হিমশিম খাচ্ছিলামই। দুই একটা রুটি পুড়েও গিয়েছিলো।
সব কাজ সেরে খেতে বসলাম, পোড়া রুটিগুলো নিজের পাতে তুলে নিলাম। ভালো রুটিগুলো খেয়ে,ছোট ভাইয়াটা'কে তো পোড়া রুটি খেতে দিতে পারিনা।
একটা গল্প পড়তে পড়তে রুটি চিবুচ্ছিলাম আনমনে, হঠাৎ করেই একটু পোড়া অংশ মুখে যেতেই খুব জঘন্য স্বাদ পেলাম।
মা, কীভাবে তুমি এইভাবে সংসার সামলে যাচ্ছো? আমি নাহয় আজ পোড়া রুটিটা পাতে তুলে নিচ্ছি৷ তুমি কি আমাদের অগোচরে এভাবেই পোড়া রুটি পাতে তুলে নাও? জঘন্যতম স্বাদটা কি তুমি সবসময়ই পেয়ে থাকো?

~মা~
#তানজিলা তাজবি

Breastfeeding Attachment (Spanish) - Breastfeeding Series

#চৈত্রিকা
#অন্তিম_পর্ব (প্রথম অংশ)
#বোরহানা_আক্তার রেশমী
_________________
নিস্তব্ধ রাত্রী। আশে পাশে মানুষের ছায়াও দেখা যায় নাহ। চারপাশ থেকে ঝিঁঝি পোকা ডেকে চলেছে অনবরত। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে চিকন একটা চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে। চৈত্রিকার পুরো গা থেকে কেরোসিনের গন্ধ আসছে। একবার নিজের ভেজা গায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে সামনে তাকায় চৈত্রিকা। নিজের থেকে কিছুটা দুরে সনিয়া বেগম আর আজম আলীকে বাঁধা অবস্থায় দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কোনো দিকে না তাকিয়ে আগে ছুটে যেতে নেয় মামা মামীর কাছে। পেছন থেকে হাতে টান পড়তে আর এগোনো হয় নাহ। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে চয়ন তার হাত ধরে আছে। চৈত্রিকার চোয়াল শক্ত হলো। সামান্যও ভয় ভীতি মনে না রেখে জোড় গলায় বলে,
'হাত ছাড়ুন!'

চয়ন কু'টিল হাসি হাসে। এক হাতে গাল চুলকে অন্য হাতে শক্ত করে চৈত্রিকার হাত চেপে ধরে বলে, 'এতো সহজে তো ছাড়বো না বড় বউ। এতো কিছুর পর তোমারে হাতের কাছে পাইছি। এতো সহজে ছেড়ে দিলে হবে?'

চৈত্রিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিজের ধরে রাখা হাতের দিকে তাকায়। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে, 'হাত ছাড়েন! আমার মামা মামীরে এখানে বেঁধে রাখছেন কেন? আপনার শ'ত্রুতা না হয় আমার সাথে। ওদের সাথে তো নাহ। তাহলে আটকে রেখেছেন কেনো ওদের?'

'ওদের না আটকালে তোমারে আটকাতাম কেমনে? তুমি যে একা সব করতে পারতেছো না এটা তো আমি টের পেয়েই গেছিলাম কিন্তু নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে আমারই বড় পুত্র এসব করতেছে এটা ধরতে পারি নাই। যখন ধরতে পারছি ততক্ষণে তুমি আর প্রহর মিলে আমার ছেলে, ভাইরে মে'রে ফেলছো। এখন তোমার ছাড় নাই। আজ তোমার শিরা উপশিরা থেকে র'ক্ত শু'ষে নিয়ে তবেই ক্ষ্যা'ন্ত হবো।'

রাগে চয়নের চোয়াল শক্ত হয়। চৈত্রিকা কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাগে উন্মাদ হওয়া চয়ন সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে চৈত্রিকাকে ক'ষে থা'প্প'ড় মা'রে। চৈত্রিকা দু পা পিছিয়ে যায়। ঠোঁটের ফিনকি বেয়ে র'ক্ত গড়াতে থাকে। থা'প্প'ড়টা এতোটাই জোড়ে পড়েছে যে মাথার মধ্যে একটা সুক্ষ্ম ব্যাথা অনুভূত হয়। গালে জ্বা'লা করে রীতিমতো। মিনিট খানেকের মতো লাগে থা'প্প'ড়ের ধা'ক্কাটা সামলাতে। চৈত্রিকা ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে চয়নের দিকে তাকানোর আগেই চয়ন চৈত্রিকার চুলের গোছা টেনে ধরে। এক হাতে পেঁচিয়ে নিয়ে শক্ত করে ধরে থাকে। চৈত্রিকা ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে। আজম আলী আর সনিয়া বেগম চেঁচাতে থাকে। বার বার বলতে থাকে চৈত্রিকাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু পা'ষাণ চয়ন সেদিকে কানই দিলো নাহ। আরো শক্ত করে চৈত্রিকার চুল ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

'খুব সাহস তোর তাই না! অনেক বড় কলিজা! এখন তোরে কে বাঁচাবে? তোর প্রহরও আমার সাথে করা বি'শ্বা'স'ঘা'ত'ক'তার শা'স্তি পাচ্ছে। এতক্ষণে না ম'রলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই ম'রে যাবে। সবগুলোকে আমি পু'ড়িয়ে মা'রবো।'

এতক্ষণে চৈত্রিকা মুখ খোলে। ব্যাথাটুকু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে, 'পিছন থেকে আ'ঘাত করে নিজেকে বীরপুরুষ ভাবাটা বোকামো চয়ন রেনওয়াজ। কার শা'স্তি কে পাবে আর কে কাকে পু'ড়িয়ে মা'রবে তা তো শুধু সময়ের দেখা।'

এরকম বি'পদের মুহুর্তেও চৈত্রিকার তেজ, সাহস দেখে যেমন অবাক হয় তেমনই রাগে ফেটে পড়ে চয়ন। চৈত্রিকার চুল ছেড়ে দিয়ে ধা'ক্কা দেয়। অনাকাঙ্খিত ভাবে চৈত্রিকা নিজের কোমড়ে রাখা ছোট্ট ছু'ড়ি চেপে ধরে চয়নের গলায়। আকস্মিক ঘটনায় চয়ন চমকালেও একটা টু শব্দও করে নাহ। বরং চৈত্রিকাকে ভয় পাওয়ানোর জন্য নিজে হাসে। চৈত্রিকা চয়নকে ভয় পেতে না দেখে সত্যিই খানিকটা চমকায়। তার কিছু বুঝে উঠার আগেই কত গুলো লোকজন তাকে ঘিরে ধরে। চৈত্রিকা অবাক হয়। হঠাৎ করে এতো গুলো লোকের মুখোমুখি হয়ে ভেতরে ভেতরে ভয় পেতে শুরু করে। এতোগুলো লোকের সাথে সে কিভাবে পেরে উঠবে! জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সাথে সাথেই চয়ন তার হাত থেকে ছু'ড়ি ফেলে দিয়ে হাত শক্ত করে চেপে ধরে। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে যায় যে চৈত্রিকা বুঝতেই পারে নাহ। চয়ন হাত মু'চড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
'তোর কলিজাটা একটু বেশিই বড়! আমারে মা'রার চেষ্টা!'

চৈত্রিকার হাত এমন ভাবে ধরে যেনো হাতটা এখনই ভে'ঙে যাবে। ব্যাথায় চোখ মুখ নীল বর্ণ ধারণ করে। তবুও চৈত্রিকা মুখ দিয়ে কোনো রকম শব্দ বের না করে দাঁতে দাঁত চেপে থাকে। এর মাঝেই একটা ছু'ড়ি এসে লাগে একজনের বুক বরাবর। চয়নসহ সবাই চমকায়। লোকটির চোখ মুখ উল্টে যায়। ক্ষ'ত স্থান থেকে অনবরত রক্ত বের হতে থাকে। চয়ন আঁতকে ওঠে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারপাশে চোখ বুলিয়েও কাউকে চোখে পড়ে নাহ। একবার চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে আরেকবার তাকায় দরজার দিকে। বিড়বিড় করে বলে,

'কে? কে মা'রলো ওকে? প্রহর তো এতক্ষণ বাঁচার কথা না। তাহলে কে? কোনোভাবে প্রহর!'
ভাবতেই গায়ের শিরা উপশিরা কেঁপে ওঠে। লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে ছু'ড়ি ছুড়ে মা'রা সেই লোকটাকে খোঁজার জন্য। চৈত্রিকা এই সুযোগে লা'থি বসিয়ে দেয় চয়নের পেট বরাবর। আকস্মিক আঘাতে চয়ন হাত ছেড়ে দেয়। চৈত্রিকা নিচ থেকে ছু'ড়ি তুলে কোনো কিছু না ভেবেই আ'ঘাত করে চয়নকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা চয়নের বুক বরাবর না পড়ে চয়ন সরে যাওয়ায় বাহুতে পড়ে। ব্যাথায় গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠে চয়ন। চৈত্রিকা মুখ হাত দিয়ে চয়নের থেকে খানিকটা সরে যায়। সনিয়া বেগম আর আজম আলী চেঁচিয়ে তাদের বাঁধন খুলতে বলে। 

চৈত্রিকা চয়নকে র'ক্তাক্ত অবস্থাতে ফেলেই আগে সনিয়া বেগম আর আজম আলীর হাতের, পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। তারা উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই চৈত্রিকার আঁচলে আ'গুন জ্ব'লে ওঠে। সনিয়া বেগম হায় হায় করে ওঠে। চৈত্রিকা নিজের শাড়ির আঁচলে আগুন দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায়। গায়ে কেরোসিন থাকায় সহজেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আজম আলী আর সনিয়া বেগম হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়েই আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। 

চৈত্রিকার গায়ে ততক্ষণে আ'গুন লেগে গেছে। চোখের সামনে ঝাপসা ভাবে নিজের বাবার মুখটা ভেসে ওঠে। সেই মুহুর্তেই সেখানে প্রহর আসে। উন্মাদের মতো ছুটে এসে জ্ব'লন্ত আগুনেই হাত দিতে যায়। আজম আলী ছুটতে শুরু করে পানির খোঁজে । সনিয়া বেগম আর প্রহর মিলে পাশে পড়ে থাকা বস্তাসহ যা পায় তা দিয়েইআগুন নেভানোর চেষ্টায় মত্ত থাকে। কঠিন সত্তার প্রহর চৈত্রিকার এই অবস্থায় যেনো এখনই কেঁদে ফেলবে। 

চোখের জ্বলন, হৃদয়ের চিনচিনে ব্যাথায় যেনো শরীর ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম। নিজের সাথে লড়াই করেই প্রহর আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকে। চয়ন প্রহরকে দেখেই হা হয়ে যায়। পাশে পড়ে থাকা তার তলোয়ার হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নিজের ব্যাাথা উপেক্ষা করে এগোতে নিলে অন্য আরেকটি তলোয়ার তার ভে'তর এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয়। হাত থেকে তলোয়ার পড়ে যায় চয়নের। স্তব্ধ হয়ে শরীর ছেড়ে দেয়। উল্টে পড়ে যায়। তাকিয়ে দেখে পল্লবী দাঁড়িয়ে আছে। চয়নকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই পল্লবী দৌড়ে আসে চৈত্রিকার কাছে। 

প্রহর আর সনিয়া বেগম ততক্ষণে আগুন প্রায় নিভিয়ে ফেলেছে। আজম আলীও কোথা থেকে এক বালতি মতো পানি নিয়ে আসে। সরাসরি ঢেলে দেয় চৈত্রিকার গায়ে। আগুন যেহেতু অনেকটাই নিভে গেছিলো তাই পানিতেও কাজ হয়। চৈত্রিকা অনেকক্ষণ আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। প্রহর কোনো কিছু ভাবে না কিচ্ছু দেখে নাহ। চট করে চৈত্রিকাকে আগলে নেয়। বুকের মাঝে শক্ত করে আগলে ধরে। সনিয়া বেগম হাউমাউ করে কাঁদছে। চৈত্রিকা নিস্তেজ হয়ে গেছে। শরীরের চার ভাগের প্রায় তিন ভাগই একটু একটু করে পু'ড়েছে। গলা থেকে শুরু করে মুখের একাংশ আর কানের দিক দিয়েও পু'ড়ে গেছে। চয়ন তখনো মা'রা যায়নি। জানটা ছটফট করছে। প্রহর এক পলক দেখে সেদিকে। সনিয়া বেগম আর পল্লবী দ্রুত হাসপাতালে নিতে বলে। প্রহর শোনেও। এক ফোঁটাও দেড়ি করে নাহ। শরীরে, মাথায় ক্ষ'ত থাকা স্বত্তেও কোলে তুলে নেয় চৈত্রিকাকে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের সমস্ত ব্যাথা সহ্য করে চৈত্রিকার পো'ড়া মুখের দিকে তাকায়। বিড়বিড় করে বলে,
'তোমার সমস্ত পু'ড়ে যাক! শুধু তোমার প্রাণটুকু আমার জন্য থেকে যাক বউজান।'
চয়নের প্রাণ যায় যায় অবস্থা তবুও সে প্রহর আর চৈত্রিকাকে মা'রা নিয়ে ব্যস্ত। এক হাতে আবার তলোয়ার তুলে নিলে এবার আজম আলী তার বুকে একবার, দুবার করে বহুবার আঘাত করে। চয়ন মুখ থেকে অস্পষ্ট কিছু আওয়াজ করে। মুখ থেকে টপটপ করে র'ক্ত পড়তে থাকে। আজম আলী হিং'স্রতা নিয়ে বলে,

'তোরে মা'ইরা জীবনে সব থেকে ভালো একটা কাম করলাম। আজীবন তোর গোলামি করা সত্বেও তুই আর তোর মেজো পুত্র আমার মাইয়ারে বাঁচতে দিস নাই। চৈত্রিকার গায়ে আ'গুন লাগাইয়া দিলি! তোর মতো প'শুরে মা'ইরা আমি স্বার্থক।'
সনিয়া বেগম আজ আর অভিযোগ করলেন নাহ। পল্লবী তাকায় চয়নের দিকে। এতোগুলো বছরের পর তার সেই প্র'তি'শো'ধ পূর্ণ। মনের ক্ষো'ভ যেনে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। চয়নের মৃ'ত দেহটা ওখানে ওভাবে ফেলেই সবাই ছুটে চললো প্রহর আর চৈত্রিকার উদ্দেশ্যে।
৪৩.

চৈত্রিকাকে নিয়ে প্রহর, পল্লবী, সনিয়া বেগম আর আজম আলী যখন শহরের হসপিটালে পৌঁছায় সময় তখন রাত ১ টার কোঠায়। প্রহর উন্মাদের মতো হসপিটালে ঢুকে ডাক্তারকে ডাকতে থাকে৷ এতো রাতে কোন ডাক্তারই বা ডাকার সাথে সাথে চলে আসে! প্রহরের ডাকাডাকিতে কমবেশি হাসপাতালে থাকা সবাই সজাগ হয়ে যায়। চৈত্রিকার পু'ড়ে যাওয়া ক্ষ'ত বি'ক্ষ'ত শরীরটা ততক্ষণে পুরোপুরি এলিয়ে গেছে। হাসপাতালের সবাই দেখছে আর বলাবলি করছে নিজেদের মাঝে। প্রহরের চেচামেচিতে একজন ডাক্তার আর নার্সও আসে। প্রহর শুধু পাগলের মতো একটাই কথা বলতে থাকে, 'চৈত্রকে বাঁচিয়ে দিন ডাক্তার!' ডাক্তার অনেক চেয়েও শান্ত করতে পারে নাহ প্রহরকে। সনিয়া বেগম আর পল্লবীও কান্না শুরু করেছে। আজম আলী রীতিমতো পা ধরতে বসে ডাক্তারের। সবার এমন অবস্থা দেখে কোনো কথা ছাড়াই ডাক্তার ভর্তি করে নেয় চৈত্রিকার। চৈত্রিকার এই অবস্থা দেখে হয়তো মায়া লাগে লোকটার! চিকিৎসা ব্যবস্থা তখনো এতোটাা উন্নত হয়নি। চৈত্রিকাকে জরুরী বিভাগে রাখা হয়। প্রয়োজনীয় সকল রকমের চিকিৎসা তখনই শুরু হয়। প্রহর হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতেই বসে পড়ে। দিক বেদিক পুরোটাই তার শূণ্য মনে হলো। বার বার মাথায় একটা কথা-ই বাজছে,
'চৈত্র বাঁচবে তো! ওর কিছু হবে না তো?'

উত্তর নেই। পল্লবী ছেলেকে আগলে ধরে বসে। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে, 'আব্বাজান এমন কইরো না। দোয়া করো চৈত্রিকার জন্য। এই মুহূর্তে তুমি শক্ত না হলে তো চলবে নাহ।'
প্রহর জবাব দিলো নাহ। এক পলক মায়ের দিকে তাকিয়ে মায়ের বুকেই ঠায় করে নেয়৷ ফাঁকা মস্তিষ্কে তার ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করে। ছোট বাচ্চারা যেভাবে হাউমাউ করে কাঁদে তারও ভীষণ ইচ্ছে করে ঠিক সেভাবেই কাঁদতে। কিন্তু কান্না আসে নাহ। চোখের ভেতরটা জ্ব'লে ওঠে তবুও তার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জলও গড়ায় নাহ। ভেতর থেকে হাজারটা কষ্ট উপচে আসে অথচ মুখ থেকে একটা আওয়াজও বের হয় নাহ। সারা রাত মায়ের বুকে লেপ্টে থাকে ওভাবেই যেনো কোনো ছোট বাচ্চা তার মায়ের কোল ছেড়ে যাবে নাহ।
কখন ওভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি। ঘুম ভাঙে সকলের চেচামেচিতে। ঝাপসা চোখ ভালো মতো পরিষ্কার করে নিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। কিছুক্ষণের জন্য মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। যখন গত রাতের সবটা এলোমেলো ভাবে মনে পড়ে তখনই নিজ জায়গা থেকে উঠে ছুট লাগায়। পল্লবী পেছন থেকে ডাকে। সে ডাকে সাড়া দেয় না প্রহর। জরুরী বিভাগের সামনে এসে দাঁড়ায়। দুর থেকে দেখে শুভ্র রঙা চাদরের ওপর নিস্তেজ চৈত্রকে। মুখের একাংশের সেই পো'ড়াটুকু ভ'য়ং'কর লাগছে অথচ প্রহর মন ভরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজের চৈত্রকে দেখছে। একটু খানিও বিরক্তি নেই, ঘৃণা নেই। কুঁচকানো চোখ মুখ নেই। প্রহর যখন নিজ ভাবনায় ব্যস্ত তখন গত রাতের ডাক্তারটি আলগোছে এসে তার পাশে দাঁড়ায়। কাধে হাত রেখে বলে,
'এই পোড়া মুখ, শরীরের একটা মেয়ের সাথে কি আজীবন কাটাতে পারবেন? ঘৃ'ণা লাগবে না পো'ড়া অংশ দেখলে!'
প্রহর অদ্ভুত ভাবে তাকায়। ঠোঁট নাড়িয়ে ক্লান্ত গলায় বলে, 'নিজের প্রাণকে কি কেউ ঘৃ'ণা করে ডাক্তার সাহেব? নিজের প্রাণ ছাড়া কি কেউ বাঁচার কথা ভাবে?'

চলবে..

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভেবেছিলাম আজই শেষ পর্ব দিবো কিন্তু এক পর্বে এতোটা হবে নাহ। তাই এটা প্রথম অংশ আর কাল শেষের অংশ পাবেন। যারা প্রণয় বর্ষণ-২ পড়েন! তাদের বলে রাখি কাল প্রণয় বর্ষণ আসবে নাহ। ওটার দু পর্ব লেখা ছিলো পোষ্ট করেছি বাকিটা লিখতে হবে কিন্তু একই দিনে দু পর্ব লিখে উঠতে পারবো নাহ। তার জন্য দুঃখিত।)
======= 00 ============ 00 =============== 00 =============== 00 =========
আমার আর আমার ভাইয়ের কোন সু-সময়ের স্মৃতি নেই। তার কারণ আমাদের বাবা-মায়ের ডির্ভোস। যেদিন ভাইটা প্রথম দুনিয়াতে এলো তখন নাকি আমি খুশিতে নেচেছি। কথাটা আমার মা আমায় বলেছিল অবশ্য আমার মনে পড়ে না। তারপর বহুবছর আমরা আলাদা ছিলাম। ভাই ছিল মায়ের কাছে, আমি ছিলাম বাবার কাছে। যখন খুব ইচ্ছে হতো ভাইকে দেখার তখন ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতাম। কারণ ভাই গ্রামে, আর আমি শহরে। সময়ের স্রোতে আমরা একদিন এক সাথে হলাম। কত খুশি হয়েছি সেদিন বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক ভাই-বোনের ছিল না, ছিল দূর-দূর একটা সম্পর্ক। কেন জানি আমি ওর সাথে সহজ হতে পারতাম না! আর ও, ওতো আমার কাছে আসতেই চাইতো না। আসলে আমাদের কোন দোষ নেই, দোষ আমাদের পরিস্থিতির। একজন আরেক জনের সাথে ঝগড়া করা, মারামারি করা, কোন জিনিস নিয়ে টানাটানি করা, কিনবা খাবার কেঁড়ে নেওয়ার মতো কোন স্মৃতি আমাদের নেই। একজনের কষ্টে অন্যজন কষ্ট পাওয়ার মতো কোন কিছুই নেই আমাদের। এরপর একদিন সময় এলো নিজের ঘর ছেড়ে অন্যের ঘরে যাওয়ার।এটা যে নিয়ম। বিয়ে হয়ে গেল আমার।ভাইয়ের সাথে স্বাভাবিক হওয়ার আগেই আবারও আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেল।আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম নিজের সংসার নিয়ে, ভাই নিজের লেখাপড়া। একদিন ভাই আমাকে নিতে এলো। ভাই আসতে চায়নি কিন্তু বাবা জোর করেই পাঠালেন।ভাই যখন আমাদের বাড়ির চৌকাঠে পা দিলো তখনই আমার ননদী আমার গালে থাপ্পড় দিলেন। এই দৃশ্য আমার ভাইয়ের চোখের সামনেই ঘটে গেল আচমকা। ভাই আমার এই দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো দুয়ারে। আমি কোন রকম নিজেকে সামলে চোখের জল মুছলাম। দৌড়ে গিয়ে ভাইয়ের সামনে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে আমার ননদী ভয়ে সরে গেছেন। কিন্তু ননদী তো জানে না, আমার ভাই সব ভাইয়ের মতো না। আমার সাথে তার অতটা ভালো সম্পর্কও না যে আমাকে মারার অপরাধে তাকে শাসাবে। আমি মুখে হাসি তুলে বললাম,
"তুমি এখানে, কোন দরকার?"
কিন্তু ভাই আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললো,
"উনি তোর গায়ে কেন হাত তুলেছে?"
আমি খুব আশ্চর্য হয়ে বললাম,
"তেমন কিছু না, তুমি চলো ভেতরে চলো।"
কিন্তু ভাই আমার রেগেমেগে চিৎকার শুরু করল। তার চিৎকারে আমার স্বামী, শ্বশুর, ননদী, শাশুড়ী সবাই ঘরের বাহিরে চলে এলেন। সবাই আসতেই আমার ভাই একটা কাজ করে বসলো। আর কাজটা হলো ঠাস করে আমার ননদীর গালে থাপ্পড় মেরে বসলো। ওরা সবাই এমন কান্ডে রেগে গিয়ে যেই আমার ভাইকে কিছু বলতে যাবে ওমনি আমার ভাই বলল,
"বোনটা আমার আপনাদের দেখেশুনে রাখতে দিয়েছি, অত্যাচার করতে নয়। ভুল হলে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিতে দিয়েছি, ছোট ননদ হয়ে বড়ো ভাবির গায়ে হাত তুলবে বলে দেইনি। যে থাপ্পড় আমার বোনকে দিয়েছ, সেটা ফেরত দিলাম। অবশ্য এর চৌগুন কষ্ট পাওনা হয়ে রইল। কিন্তু সেটা তুলে রাখলাম সময় দিবে বলে।আমার বোন আমি নিয়ে গেলাম নিজের বোনকে শুধরে আমার বোনকে আনতে যাবেন। তার আগে না আমার বোন আসবে, না আপনারা কেউ আমাদের বাড়ির চৌকাঠে পা রাখবেন।"
ভাই সেদিন এক কাপড়েই আমাকে ওই বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল। আর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,
"আমাদের দু'জনার সময়ের বিচ্ছেদ হয়েছে, কিন্তু ভালোবাসার নয়। তুই যতটা আমায় ভালোবাসিস, ঠিক ততটা আমিও ভালোবাসি।"

সমাপ্তি

অনুগল্প

#সময়ের_বিচ্ছেদ_ভালোবাসার_নয়
#সমুদ্রিত_সুমি

কপি করা নিষেধ এবং অনুমতি বিহীন ভিডিও শুট করা-ও নিষেধ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url