বকুল ফুল - লেখক আরিফ ইসলাম | সুচনা পর্ব | Bakul Full - Author Arif Islam Part- 01 | -সংসার- লেখনীতে -জাফরিন জেবা


-সংসার-
লেখনীতে -জাফরিন জেবা
 
যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমি সাংসারিক কাজে ভীষন অপটু।কোন কাজই একদম নিখুত ভাবে করতে পারিনা।রান্না যা করতাম তা কেবল খাওয়া যেত!!মাছ কাটতে পারতামনা তাই বর বাজার থেকে কেটে নিয়ে আসতো।আমার শশুরের চাকুরীর সুবাদে আমার শশুর শাশুড়ি অন্য শহরে থাকে।আমি আমার বরের সাথে তার কর্মস্থলের কাছে 
 
একটি ভাড়া বাসায় থাকি। শশুর শাশুড়ি বাসায় বেড়াতে আসে, একসাথে সময় কাটাই।
বিয়ের প্রায় প্রথম দিকে,শশুর শাশুড়ি এসেছ,তা দেখে আমার বর একটা বড় রুই মাছ নিয়ে আসে সাথে আরও অনেক বাজার।বর ভেবেছে মা আছে মা তো মাছ কাটতে পারে,আর এতো বড় মাছ বাবা মা দেখে খুশি হব।তাই মাছ না কেটেই নিয়ে আসে।বাজার গুছিয়ে রেখে আমি মাছ কাটতে বসি।মাছ কাটবো কি! আমিতো মাছ তুলতেই পারছিলামনা!! পরে অনেক কষ্টে কোন মতে মাছ কাটি।মাছ কাটার পুরো সময়টা আমার শাশুড়ি আমার সামনেই দাড়িয়ে ছিলো।আমার যে এতো সমস্যা হচ্ছে দেখেও কিছু বলেনি।যখন মাছ কাটা হয়ে যায় তখন তিনি বলে,মাছ কাটতে পারোনা তাওতো আমারে বললানা মাছ কাইটা দিতে??এ কথা শুনে আমি ভাষাহীন হয়ে গেছিলাম।মাছ কাটায় অদক্ষ হওয়ায় অনেক সময় লেগে যায়।যার কারনে রান্নায় দেরী হয় অনেক।এদিকে আমার শাশুড়ি আমাকে কথা শোনাতে থাকে,কেন এতো দেরী হচ্ছে!!!
 
তখন আমার শশুর আমার শাশুড়িকে বলছে,বউ ছোট মানুষ, তুমি তো ওকে কাজে একটু সাহায্য করতে পারো? একথা বলাতে আমার শাশুড়ি আমার শশুরের উপর চরাও হয়।বলে,কেন? আমি কি ছেলের বাসায় কাজ করতে এসেছি? তোমার কথা শুনে ছেলের বউকে কাজ করে খাওয়াবো!!!এসব কথা আমি রান্নাঘরে দাড়িয়েই শুনতে পাই।এগুলো শুনে খুব খারাপ লেগেছিল কিন্তু কিছু বলার ছিলোনা।
আমার বর যখন খেতে বসে মাছের টুকরো দেখে বুঝতে পারে যে মাছ আমি কেটেছি। কারন মাছ অনেকটা থেতলে গিয়েছিল।
আল্লাহ্‌র রহমতে এখন সব কাজই পারি।কিন্তু সে সময়গুলো মাঝেমাঝে মনে পরে।আমরা মেয়েরা পরকে আপন করে সংসার করেযাই তবুও সারা জীবন তাদের পর হয়ে থেকেযাই।
 
======== 0 =========== 0 ============ 0 =============
#বকুল ফুল
#লেখক আরিফ ইসলাম
#সুচনা পর্ব

 

পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় প্রেমিকের হাতে শরীর সোপে দেয় মিতালি।
ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার জন্য তাকে এই কঠিন কাজটি করতেই হলো।
অনেকবার বুঝানোর পরেও মামুন মিয়ার এক কথা, হয় তার সাথে বিছানায় যাও, না হয় ছেড়ে দাও।
 
মেয়েটা যে বড্ড বেশি ভালোবাসে মামুন মিয়ারে ।
তাই আপোষ থাকা সত্ত্বেও নিজ দেহ সোপর্দ করে তাকে।
মিতালী কে কাছে পেয়ে মামুন মিয়া জংলি জানায়ারের মত লাফিয়ে উঠে। তার শরীরের ঘ্রাণ নিতে থাকে। মিতালীর খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।‌
মামুন তার খায়েশ মিটিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছে মত । মিতালীর চোখ বেয়ে অশ্রু বের হচ্ছে।
কিছুদিন পর হঠাৎ স্কুলে যাওয়ার পথে মিতালী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। 
 
 ওওও মিতালীর মা , তুমাগো ছেড়ি বেহুঁশ হইয়া পইড়া রইছে ওজান ঘাটের রাস্তায়।
পাশের বাড়ির সবুরা বানুর চিৎকার শুনে মিতালীর মা রোমেলা বানু দৌড়ে আসলেন।
__ কি কও বুবু ? আমাগো মিতালী কই আছে এহন? আমারে লইয়া চলো।
সবুরা বানু রোমেলারে নিয়ে দৌড়ে মিতালীর কাছে যায়। মাথায় ৫ কলসী পানি ঢালার পর আস্তে আস্তে চোখ খুলে মিতালী।
___ ও মাইয়া তোর কি হইছে?
মায়ের কথা শুনে মিতালী শুধু চেয়ে আছে।
___ ও রোমেলা মনে অয় তোমার ছেড়ি রে ভুতে পাইছে। সকাল দুপুর মানে না তোমার ছেড়ি , হগোল সময় সাইজা গুইজ্জা থাকে।
 
রোমেলা এইসবে কান না দিয়ে মেয়েরে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। এই মাঝখানের সময়ে মিতালী প্রায় ২০ বারের মত বমি করেছে। রোমেলা ঘাবড়ে গেছে মেয়ের এমন দেখে। রোমেলার সোয়ামী কুদ্দুস মিয়া খেতের কাজ শেষে বাড়িতে এসেছেন ‌। হাত মুখ ধুয়ে শিতল পাটি বিছিয়ে মিতালী কে কয়েক বার ডাক দিয়েছেন তিনি। মিতালী কে বড্ড ভালোবাসেন যে তিনি।
 
___ ও মিতালীর বাপ, আইজ সকাল থাইকা মাইয়াডা কিছুই খায়নাই। সকালে স্কুলে যাওনের সড়কে বেহুঁশ হইয়া পইড়া গেছিলো। তার পর থাইকা খালি বমি করতাছে। আমি কই ওরে একটু ডাক্তারের বোগলে লইয়া যাও না।
"হাত পাখা দিয়ে বাতাস দিতে দিতে কুদ্দুস মিয়ার পাতে আরেকখানি হাঁসের ডিম তুলে দিলো রোমেলা।
___ আইচ্ছা মাইয়াডা আমার কই অহোন ?
খাওয়া শেষ করে কুদ্দুস মিয়া মিতালীর ঘরে ঢুকে দেখে মেয়েটা ঘরের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছে।
 
__ আম্মা, তোমার কি হইছে আমারে কও। হারাদিন কিছু খাওনাই ক্যা?
মিতালী নির্বাক হয়ে ঠাই বসে আছে একই জায়গায়। রোমেলা বানু ও কদ্দুস মিয়া তাদের গায়ের সেরা ডাক্তার মাহমুদ শেখ কে ডেকে নিয়ে আসেন। অনেকক্ষন পরীক্ষা করার পর কদ্দুস মিয়া রে একটু দূরে ডাক দেয়।
__ ও বাপু, কী সমস্যা মইয়াডার?
___ আসলে খালুজান ,,,, মিতালী গর্ভবতী।
কদ্দুস মিয়া শুনে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
__এইডা কেমনে সম্ভব, মাইয়া ডা সবে ৫ ক্লাস পাস কইরা ৬ ক্লাসে উঠছে। তার থাইকা বড় কথা হইলো গিয়া, মিতালীর তো বিয়াও হয়নাই।
__ খালুজান,, কিভাবে হইলো এইডা আমি কইতে পারুম না। কিন্তু আমার পরীক্ষা ভুল হবারই পারে না ‌।
একরাশ নিরবতা কুদ্দুস মিয়াকে আঁকড়ে ধরেছে। দুশ্চিন্তার ছাপ তার চোখে মুখে।
___ বাপু তোমার পায়ে ধইরা কই, এই খবর গায়ে জানি রইটা না যায়।
___ খালুজান চিন্তা করবেন না, আমি এটা বাহিরে জানামু না। এহন তাইলে আমি আসি।
মাহমুদ শেখ চলে যায়। কপাটের খিরকি ধরে দাঁড়িয়ে থাকা রোমেলা ছটফটিয়ে উঠে। কদ্দুস মিয়া রোমেলার দিকে তাকিয়ে বিষন্ন মনে তাকিয়ে থাকে। রোমেলা লুকিয়ে সব শুনেছে। মিতালীও টিনের বেরায় কান লাগিয়ে সব শুনেছে। তার জন্য তার বাপ মায়ের এই অবস্থা দেখে কান্নায় বুক ফেটে আসছে তার।
 
দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা চেয়ারম্যানের ছেলে মামুন মিয়ার কাছে যায়।
___ মামুন, আমার প্যাটে তোমার অনাগত সন্তান । তুমি আমার বাপ মাইরে একটু বুঝাইয়া বইলা আসো, তুমি আমার সন্তানের বাপ।
___ ধুর তুমি কেডা? তোমারে তো আইজকাই আমি পয়লা দেখলাম।
মামুনের এমন বক্তব্য শুনে মিতালী অবাক হয়ে গেছে। আর্তনাদ ভরা কন্ঠে বার বার বলছিল __মামুন তুমি আমারে ঠকাইলা। 
 
কিন্তু এই কান্নার কোনো দাম দেয়নি মামুন ও চেয়ারম্যান পরিবার । এর জন্য কুদ্দুস মিয়া ও রোমেলা বানু কে অপমান সইতে হইছে। মিথ্যা অপবাদ পেয়েছে মিতালী।
এই ব্যাথা সহ্য করার মতো নয়। মিতালী রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। সকাল বেলায় বাপেরে কেউ কাজে নেয়না ‌। একটায় কথা __ মাইয়া নিয়া ব্যবসা কইরা খা, তোর কাজে যাওন লাগতো না।
কদ্দুস ও রোমেলা ঘরের কোনে বসে নিরবে কাঁদতে থাকে। হঠাৎ বাইরে লোকজনের চেঁচামেচির শব্দে ঘর থেকে বের হয় রোমেলা।
 
বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা পুরোনো আম গাছে কে যেনো গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোমেলা ধীর পায়ে এগোতে থাকে সেই দিকে। সকালের সোনালী রোদ রোমেলার চোখে মুখে পড়ছিলো । শিশির বিন্দু ঘাসের সাথে সাতার খেলছে। খালি পায়ে শিশির ছোঁয়ায় অন্য এক অনুভূতি।
রোমেলা গাছের নিচে যেতেই হতস্থম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে। মুখে রাও কারার শক্তি যে হারিয়ে ফেলেছে। নিজের মেয়ের উড়না জড়িয়ে ফাঁস আটকানো অবস্থায় দেখে মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।
কুদ্দুস মিয়া দৌড়ে সেখানে এসে কয়েক বার বেহুঁশ হয়ে পড়ল। অন্তরখানি ফেটে যাচ্ছে তার। রোমেলা শেষ মূহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলো। গায়ের মহিলারা রোমেলাকে ধরে পানি ঢালছে একনাগাড়ে।
__ রোমেলা আর নাই রে। 
 
কুদ্দুসের ভাঙা হৃদয় প্রিয় স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদে পুরো ভেঙে গেলো । তাকেও যেতে হবে, একা একা কী করবে এই বেঈমান পৃথিবীতে থেকে।
চোখ বন্ধ করে স্ত্রীয়ের‌ পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। এই ঘুম আর কেউ ভাঙাতে‌ পারবে না।
___ হায় এই মুখ পুড়ি ছেড়ির লাইগা নিষ্পাপ বাপ মারে মরতে হইলো ‌।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফসোস নিয়ে ‌বুড়ো কাদের গাজি বলে উঠে।
হঠাৎ কারো চোখ পড়ে গাছের গুঁড়ির নিচে একটা সদা জন্ম নেওয়া বাচ্চা পড়ে আছে। মহিলারা খেয়াল করে মৃত মিতালী মরার পর কিংবা মরার আগে সন্তান প্রসব করেছে। এ এক অবাক করা কাহিনী । সবাই আগ্রহ নিয়ে দেখতে আসে বাচ্চাটারে।
__ এই মাইয়াডারে আমি পালমু।
রক্ত মাখা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে সবুরা বানু বলে উঠে।
__ ওর নাম দিলাম বকুল। আমার বকুল ফুল !!
কয়েক বছর পর।।
 
_এই মামা একটু তারাতাড়ি রিকশা চালান না।
শৌখিনের কথায় রিকশাওয়ালা সিমিত গতি বাড়িয়ে দেয়। গার্লফ্রেন্ডের সাথে রুম ডেট করতে যাচ্ছে শৌখিন। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে তার গার্লফ্রেন্ড কে ।
রিকসা থেকে নেমে ভাড়াটা চুকিয়ে তরিঘড়ি ফ্লাটের ৩ তলায় উঠে পরে। যেনো তর‌ সইছে না তার।
__ এতদিন অপেক্ষা করার পর দিনটি চলেই এলো । ও আমার প্রিয় রূপসী আমি আসছি।
কন*ডম আনতে মোটেও ভুলে নাই সে। রুমে ঢুকেই দেখে সেখানে আগে থেকেই তার প্রেমিকা শান্তা সেখানে বসে আছে। 
 
__ জান,, মুখ ঘুরিয়ে বসে আছো কেনো? মুখ ঘুড়াও তোমার সব লাজ লজ্জা আজ ভেঙ্গে দিবো আমি।
দেরি না করে সোজা শান্তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় সে। পকেট থেকে তারাতাড়ি কন*মের পেকেটটি বের করতেই শান্তা হাত দিয়ে সড়িয়ে দেয়।
শৌখিন বুঝতে পারে হয়তো এটাতে সে কমফোর্ট ফিল করছে না।
শৌখিন ঝাঁপিয়ে শান্তার উপরে শুয়ে পড়ে। কিন্তু একি শান্তার শরীর থেকে কেমন পঁচা গন্ধ আসছে।
___ কী হলো থেমে গেলে কেনো? দম কী শেষ। 
 
ভয়ানক কন্ঠে বলে উঠে কেউ। শৌখিন উঠে পরতেই শান্তা তারদিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়।
আরে এটাতো শান্তা নয়। এক ভয়ংকর চেহারার অবায়ব শৌখিনের দিকে তাকিয়ে হাসছে_
 
চলবে ----- ------

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url