গল্পঃবেলা শেষে #পর্বঃ১ #লেখকঃ ইফতেখার সাইফুল্লাহ | #গল্পঃ মেঘমুক্ত নীলাকাশ । #মোঃ সাইফুল ইসলাম । How long does breastmilk stay fresh in the refrigerator?

নাঈমের গার্লফ্রেন্ড আমাকে ২ ঘন্টা ধরে বোঝাচ্ছে , তাদের রিলেশনে ঝামেলার কারনে নাঈম সকাল থেকে কিছু খাই নি।আমি যেন তাকে খেতে বলি !
এদিকে নাঈম দেয়ালে বালিশ দিয়ে আধাশোয়া হয়ে আছে।আজ নাকি খাওয়া বেশি হয়ে গেছে ! শুতে গেলে নাক মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে !

অনু গল্প
আফ্রাহিম খান


 চার বন্ধুর একজনকে টেনে নিয়ে ঘারে কামড় বসিয়ে রক্ত চোষা শুরু করল পিশাচ টা। কি বিদঘুটে চেহারা তার । রক্ত খেয়েই যাচ্ছে আর ছেলেটা হাত-পা ছড়িয়ে ছটফট করছে। বাকীরা ভয়ে কাতরাচ্ছে। কারণ এর পরেই তাদের পালা। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা যেন ঘটনাটা কে আরো অনেকবেশি ভয়ংকর করে তুলেছে।
হঠাৎ টিভিটা বন্ধ হয়ে গেল। লোডশেডিংয়ের জ্বালায় শহরবাসী অতিষ্ট। এখন অবশ্য বাইরে বেশ ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে৷ তাই হয়ত লোডশেডিং হয়েছে।
রাফি তার বন্ধু প্রত্যয় কে নিয়ে টিভিতে হরর মুভি দেখছিল। রাফির বাসার সবাই বেড়াতে গিয়েছে শহরের বাইরে। রাফিকে রেখে গিয়েছে ব্যাপারটা এমন না বরং রাফি নিজ ইচ্ছায়ই যায়নি। বোরিং ফিল যেন না করে সেজন্য প্রিয় বন্ধু প্রত্যয়কে নিয়ে এসেছে বাসায়। দুইজনই হরর মুভি দেখতে পছন্দ করে। এখন সময় রাত ১২ টা বেজর ৩৫ মিনিট। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঠিক সেই মূহুর্তে কলিং বেল বেজে উঠল। রাফি কিছুটা আতকে উঠল। এই মুহুর্তে ত কেও আসার কথা না। বার বার কলিংবেল বাজিয়েই যাচ্ছে। রাফি ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে দড়জা খুলে মানুষ তো দূরে থাক ত্রিসীমানায় কোন জীবজন্তুর ও অস্তিত্ব খুজে পেলো না। "কে" বলে বার বার চিৎকারও করলেও কিন্তু কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দড়জা বন্ধ করে দিল। এই মাঝরাতে কার এত বাঁদরামি করার সখ জেগেছে কে জানে। এর কিছুক্ষণ পর আবার কলিংবেল বাজানো শুরু হলো। এবার দুই বন্ধু মিলে গিয়ে দরজা খুলল। এবারও কেও নেই। তবে ঘরে সজোরে বাতাস প্রবেশের আভাস পাওয়া গেল। বাতাস এত জোরে প্রবেশ করেছে যে দড়জার সুজোসুজি টেবিলে থাকা কাচের গ্লাস টা নিচে পরে ভেঙ্গে গিয়েছে। দড়জা লাগিয়ে দিল। কিন্তু এবার অদ্ভুত অদ্ভত সব কান্ড হচ্ছে। বাথরুমে কেও যায়নি অথচ হঠাৎ করেই বাথরুমের টেপ থেকে পানি পড়ছে। রাফি গিয়ে পানি বন্ধ করে। বাথরুম থেকে বের হতে না হতেই আবার টেপ থেকে পানি পড়া শুরু হয়। টেবিলের থালা বাসন নিজে নিজেই সরে যাচ্ছে। ইজি চেয়ারটা নিজে নিজেই দোলছে। ফ্ল্যাশের আলোতে দেয়ালে কিছু একটার ছায়া দেখা গেল আবার মুহূর্তেই ভ্যানিস ও হয়ে গেল। ওদিকে দড়জায় কলিংবেল বেজেই চলেছে। ঠিক যখন দড়জা খুলতে যাবে তখন ই কলিংবেল বাজা বন্ধ। রাফি আর প্রত্যয় দুজনেই অনুভব করতে পারল ওদের পিছনে কিছু একটা আছে হয়তবা। কিন্তু ঘার ঘুরাতে ভয় পাচ্ছে দুজনই। যদি ঘার মটকে দেয়। তবে সাহস করে ধীরে ধীরে ঘার গুরাচ্ছে।
"সাজিদ! সাজিদ! এই সাজিদ! "
গল্পটা পড়ায় আর মনোযোগ দিতে পারল না সাজিদ। ওর বাবা ওকে ডাকতে ডাকতে রুমে প্রবেশ করল। রুমে ঢুকে আবার সেই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করা শুরু করে দিয়েছে। যেন সাজিদকে বিয়ে করিয়েই ছাড়বে। সাজিদ বেচারাও নাছোর বান্দা। কোন মতেই এই মুহূর্তে বিয়ে করতে রাজি না সে। সাজিদের বাবা তার জন্য মেয়েও পছন্দ করে রেখেছে।
" এই বিয়েতে রাজি না হলে আমি তোকে ত্যাজ্যপুত্র করবো৷ সকল সম্পত্তি এতিমখানায় দান করে দেবো। আমার পছন্দ করা মেয়েকেই তোর বিয়ে করতে হবে। নইলে তুই নিজের রাস্তা নিজেই দেখতে পারিস।"
বাক-বিতন্ডার মাঝখানে হঠাৎ বাবার এমন কথা শুনে বেশ অবাকবনে গেল সাজিদ। এরপর আরো কিছুক্ষণ বাক-বিতন্ডা চলার পর সজোরে হেটে ঘর থেকে সোজা বাইরের পথ ধরলো । আজ আর বাসায় ফিরবে না, রাতটা কাটিয়ে দিবে প্রিয় বন্ধু আবিরের বাসায়।

সাজিদ ধনী ব্যাবসায়ী বাবার একমাত্র ছেলে।একটা মাত্র বোন আছে ওর। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ছেলেটা বেশ আদর আর বিলাসিতায় বড় হয়েছে। টাকা-পয়সা বেশি থাকার কারণে বন্ধুমহলে তার প্রভাবটাও কম না। মর্ডান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেও বেশ মর্ডান হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছে। সাজিদ গল্প পড়তে বেশ ভালোবাসে।
বিশেষ করে ভৌতিক গল্প। কিছুক্ষণ আগেই ইফতেখার সাইফুল্লাহর লেখা একটা ভৌতিক গল্প পড়তেছিলো। এর মধ্যেই ওর বাবা রুমে আসে আর বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা শুরু করে দেয়।
কিছুদিন আগে গ্রামে বেড়াতে গিয়ে সাজিদের বাবা তার ছেলের বউ হিসেবে তার এক বন্ধুর মেয়েকে পছন্দ করে। মেয়ের সরলতা আর সৌন্দর্য সাজিদের বাবাকে মুগ্ধ করেছে। সাজিদ মেয়েটার ছবিটা পর্যন্ত দেখতে রাজি না। কারণ সে তার ইউনিভার্সিটির শ্রাবনী নামের একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করে। তাছাড়া সে এখনই বিয়ে করতে চায় না। তার ইচ্ছা গ্রাজুয়েশন কম্প্লিট করার পর বিয়ে করবে। ছন্নছাড়া জীবনই তার ভালো লাগে। বউয়ের প্রেশার এখনই নিতে ইচ্ছুক না।সাজিদের বাবার চিন্তা ঠিক উল্টো, গ্রামের ঐ মেয়েটা বউ হিসেবে ঘরে আসলে ছেলের ছন্নছাড়া জীবন সুন্দর হবে। মেয়েটা একই সাথে গুনবতী ও রূপবতী।
সাজিদ বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরের দিন বাসায় ফিরে। এমনটা আজকে নতুন না। এর আগেও বহুবার রাগ করে বাসার বাইরে রাত কাটিয়েছে। 

আজ সাজিদকে কে নিয়ে পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা। কিন্তু সাজিদ কোনমতেই যেতে রাজি না। "দেখতে গেলেই ত আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না" এভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে সাজিদের মা তাকে যেতে রাজি করালো। সাজিদ একরকম জোরপূর্বকই সাহেবদের মতো লুক নিয়ে সাজিদের বাবা, চাচা সহ বেশ কয়েকজন রওনা হলো মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এমন অভিজ্ঞতা এর আগে ওর হয়নি একদমই। সাজিদ মনে মনে ভাবছে মেয়ে যত সুন্দর ই হোক না কেন মুখের উপর না করে দেবো, পারলে একটু খারাপ আচরণ করে আসবো যেন বিয়ে দিতে পাত্রী পক্ষই রাজি না হয়। সাজিদ এসব ব্যাপারে শ্রাবনী কে কিছুই জানায়নি। জানালে আবার কেমন রিয়েক্ট করবে তার কোন ঠিক নেই।

পাত্রীর বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে গেল সবাই। রঙিন টিনের সুন্দর দেখতে একটা বাড়ি। বেশ বড়সর ও খোলামেলা। সম্ভবত একান্নবর্তী পরিবার হবে হয়তবা। মেয়ের বাড়ির মানুষজনের আপ্যায়নের কোন ঘাটতি নেই। বারান্দায় বেশ ভালো বসার ব্যাবস্থা করেছে। বেশ ভালো নাস্তার ব্যাবস্থা করেছে। 

 মেয়ের বাবার ব্যাবহার অমায়িক এবং বেশ আন্তরিক। সেই সাথে একটা ছেলে বেশ যত্নআত্নি করছে। মেয়ের চোট ভাই হবে হয়ত। সাজিদ খেয়াল করল দূর থেকে একটা ঘরের আড়াল থেকে কয়েকটা মেয়ে চিড়িয়াখানার প্রানীর মতো সাজিদকে দেখে হাসছে। যাইহোক আরো কিছু সৌজন্যতার পর পাত্রীকে নিয়ে আসা হলো। টকটকে নীল শাড়ি পরিহিত। হাতে আসমানী রঙের চুড়ি। মেয়েটার মুখটা দেখে সাজিদের মন চাচ্ছে পড়িদের সাথে তুলনা করতে। মুখ থেকে চোখ সরানো দায় হচ্ছে বেশ। এমন মায়াবী চেহারার সম্মুখীন সাজিদ কখনো হয়নি এর আগে। 

যেন সৃষ্টিকর্তা তাকে সৃষ্টি করার সময় সৌন্দর্যের কোন কমতি রাখেননি। মেয়েটার নাম মেহরুমা। এই মেয়েকে যে পুরুষ রিজেক্ট করবে তার কপালের ফাটল বুঝি কোনদিনই দূর হবে না। সাজিদের জায়গায় অন্য কেও থাকলে হয়ত বিয়ে করতে আর বিলম্ব করতো না। এমনটাই মনে হচ্ছে সাজিদের তবে সাজিদ শ্রাবনীকে ধোকা দিতে পারবে না। মন প্রান দিয়ে ভালোবেসেছে শ্রাবনী কে। বাসায় গিয়ে সাজিদ তার বাবাকে না বলে দিবে তাতে যা হবার হবে। তবে সাজিদের বাবার পরিকল্পনায় ভিন্ন কিছু ছিল। উনি সাজিদকে পাত্রী দেখাতে নয় বরং বিয়ে করাতে নিয়ে এসেছিল। পাত্রীর বাড়ির লোকজনও সেই প্রস্তুতিতেই ছিল।সাজিদের বাবা তাদেরকে জনিয়েছেন সাজিদ ছবি দেখেই পাত্রী পছন্দ করেছে। এসব কথা শুনার পর সাজিদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। 

অনেক চেষ্টা করেও কোন কাজ হলো না। বাবার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের জালে আটকে পরে বিয়ে করতে বাধ্য হলো সাজিদ। বিয়ে করতে হলো রূপবতী এক অপরিচিতা কে। বউ নিয়ে বাসায় এসে সাজিদ দেখল তার বাড়ি বিয়ে বাড়ির মতো করে সাজানো। তার মানে সাজিদের আজ বিয়ে হবে তা শুধু সাজিদ ছাড়া বাকি সবাই ই জানতো। বাসায় এসে কিছুটা রাগারাগি শুরু করলো সাজিদ। তবে এখন আর রাগারাগি করেও কোন কাজ হবে না। এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিবে বা কি হবে তা ভেবে কূল পাচ্ছে না সাজিদ। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে ওর। ওদিকে শ্রাবনী একের পর এক কল করেই যাচ্ছে। তাহলে কি শ্রাবনী ব্যাপারটা জানতে পেরে গেল?
#চলবে......
#গল্পঃবেলা_শেষে
#পর্বঃ১
#লেখকঃ ইফতেখার সাইফুল্লাহ
পরের পর্ব আগামিকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ।

Source: Adapted from seventh Edition American Academy of Pediatrics (AAP) Pediatric Nutrition Handbook (2014); second Edition AAP/American College of Obstetricians and Gynecologists (ACOG) Breastfeeding Handbook for Physicians (2014); Academy of Breastfeeding Medicine (ABM) Clinical Protocol #8 Human Milk Storage Information for Home Use for Full-Term Infants (2017); CDC Human Milk Storage Guidelines (2018).

Guide to storing fresh breastmilk for use with healthy, full-term babies

Place

Temperature

How long

Things to know

Countertop, table

Room temperature (up to 77°F)

Up to 4 hours

Containers should be covered and kept as cool as possible. Covering the container with a clean cool towel may keep milk cooler. Throw out any leftover milk within 2 hours after the baby is finished feeding.

Refrigerator

40°F

Up to 4 days

 

Store milk toward the rear of the cooler. When at work, it's OK to put breastmilk in a common fridge. Make certain to name the compartment obviously.

 

 

 

 

 

Freezer

 

 

 

 

 

0°F or colder

 

Within 6 months is best.

 

 

 

 Up to 12 months is acceptable.

Store milk rearward of the cooler where the temperature is generally steady. Milk put away at 0°F or colder is alright for longer lengths, yet the nature of the milk probably won't be as high.milk toward the rear of the fridge. When at work, it's OK to put breastmilk in a common fridge. Make certain to name the compartment obviously.

 

Store milk rearward of the cooler where the temperature is generally consistent. Milk put away at 0°F or colder is ok for longer spans, however the nature of the milk probably won't be as high.


মৃত্যুর সময় আমার মা আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, " সজীব এই চিঠিটা তোর কাছে রেখে দে বাবা , আমার মৃত্যুর কিছুদিন পরে পড়িস । এর মধ্যে তোর বাবার আর আমার জীবনের কিছু গোপন কথা লেখা আছে । বেঁচে থাকতে সেগুলো বলার সাহস পাইনি তোর কাছে, তাই চিঠিতে লিখে দিয়ে গেলাম ৷ আমি জানি তুই চিঠি পড়ার পরে আমাকে হয়তো অনেক ঘৃণা করবি । কিন্তু পৃথিবীতে এমন সত্য কথাগুলো তোর জানা দরকার তাই লিখে দিতে বাধ্য হলাম ৷ তবে চিঠিটা পড়া না পড়া সম্পুর্ণ তোর নিজের ইচ্ছে, জোর করবো না । "
মা মারা গেছে ৬ বছর হয়ে গেছে কিন্তু আজও আমি সেই চিঠি পড়িনি । কারণ চিঠি পড়ে মা'কে ঘৃণা করতে হবে সেটা আমি চাই না । তাই কিছু কৌতুহল নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে চিঠিটা যত্ন করে সবসময় কাছে রাখতাম ৷ মাঝে মাঝে যখন পৃথিবীতে কেউ নেই জেনে আত্ম চিৎকার করি তখন পড়তে খুব ইচ্ছে করে ৷ কিন্তু অজানা এক বাঁধা পেয়ে আবারও ভাজ করে রেখে ঘুমিয়ে পরি । কিন্তু আজকে হঠাৎ মনের মধ্যে হতে বারবার কেবল চিঠিটা পড়ার জন্য ইচ্ছে জেগে উঠছে । তাই ৬ বছর ধরে জমিয়ে রাখা কৌতূহল দমন করে চিঠি খুলে পড়া শুরু করছি ।
বাবা সজীব ,
আমার মৃত্যুর পরে কেমন আছো তুমি? পৃথিবীতে থাকতে কষ্ট হচ্ছে খুব তাই না ? আজকে এই চিঠিতে কিছু অপ্রিয় সত্যি ঘটনা তোমাকে জানাতে চাই । আশা করি তুমি সম্পুর্ণ চিঠি পড়বে, এরপর যদি আমাকে ঘৃণা করো তাহলে সমস্যা নেই কারণ আমি অপরাধী । আমার অপরাধের শাস্তি এই পৃথিবীতে আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন । বাকিটা হয়তো মৃত্যুর পরে আবার শুরু হবে কারণ পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না ।
তুমি ছোটবেলা থেকে জানতে তোমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে এবং এই পৃথিবীতে তোমার আর আমার আপন বলতে কেউ নেই । আসলে কথাটা সত্যি নয় । তোমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যায় নি বরং আমি তোমাকে নিয়ে তোমার বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম । তোমার দাদার বংশে ও নানার বংশের অস্তিত্ব আছে । কিন্তু আমার করা ভুলের জন্য আজকে তোমার জীবনটা এলোমেলো ।
আমাদের বিয়ের আগে থেকে তোমার বাবা বিদেশে থাকতেন । ৫ বছর বিদেশে থাকার পরে দেশে ফিরে আসলে তখন তোমার বাবার সাথে আমার বিয়ে হয় । আমি তখন একটা ছেলেকে ভালবাসতাম, কিন্তু আমার মা-বাবার মুখের ওপর কথা বলতে পারিনি বলে তোমার বাবাকে বিয়ে করেছিলাম । কিন্তু মন থেকে তোমার বাবাকে কখনো মেনে নিতে পারিনি তাই সবকিছু তাকে খুলে বললাম । তোমার বাবা আমাকে অনেক ভালবাসতো সেটা আমি আগেও স্বীকার করতাম এবং আজও স্বীকার করি । তাকে ছেড়ে চলে এসেছি তাই বলে যে তাকে মিথ্যে দোষ দেবো সেটা আমি ভাবতেও পারিনা । তুমি এতদিন ধরে জানো তোমার বাবার নাম ইকবাল কিন্তু সেটা ভুল, তোমার আসল জন্মদাতার নাম মোঃ মোশতাক সরোয়ার (মিজান) ।
মিজান আমাকে সবসময় ভালবাসা দিয়ে আমার অতীতকে ভুলানোর চেষ্টা করতো । কিন্তু আমি কখনো অতীতকে ভুলতে পারিনি বলে তোমার বাবাকেও ভালবাসতে পারিনি ৷ বিয়ের পরে ৫ মাস তোমার বাবা বাংলাদেশে ছিলেন আর তখনই তুমি আমার গর্ভে চলে এলে ৷ তোমার জন্মের আগমন বার্তা তোমার বাবা দেশে থাকতে শুনে গেছেন । তবে আমি তখন তোমাকে জন্মদিতে চাই নাই কারণ আমি অন্য কাউকে ভালবাসি । তাই আমি তোমার বাবা মিজানের সন্তানের জননী হতে চাইনি । কিন্তু তোমার বাবা ইচ্ছে করে তোমাকে পৃথিবীতে আনতে চেয়েছে কারণ তার ধারণা ছিল যে, একটা সন্তান হলে আমি স্বাভাবিক ভাবে সংসার করবো ।
কিন্তু আমি স্বাভাবিক হতে পারি নাই । তোমার জন্ম হয়েছিল তোমার দাদা বাড়িতেই তখন তোমার দাদী জীবিত ছিল কিন্তু দাদা মৃত কবরবাসী । আমি কিন্তু তোমাকে নষ্ট করার জন্য অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু তুমিও শপথ করেছিলে হয়তো যে তুমি পৃথিবীতে আসবেই ৷ তাই বারবার বিভিন্ন ঔষধ খাবার পরেও তোমাকে নষ্ট করতে পারি নাই ৷ তোমার জন্মের পরে আমি তোমাকে দেখে অনেক খুশি হলাম । প্রথমে ভেবেছিলাম তোমাকে তোমার দাদীর কাছে ফেলে রেখে আমি আমার পছন্দের মানুষের সাথে পালিয়ে বিয়ে করবো । কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা আর করতে পারি নাই ।
তোমার বয়স যখন এগারো মাস তখন তোমাকে নিয়ে আমি আমার নিজের ব্যাবহৃত গহনাপত্র এবং তোমার বাবার পাঠানো অনেকগুলো টাকা নিয়ে পছন্দের মানুষের হাত ধরে এই ঢাকা শহরে চলে আসলাম । মিরপুরের জনতা হাউজিংয়ের মধ্যে একটা এক রুমের বাসা ভাড়া করে আমরা থাকতে শুরু করলাম । তোমার বাবাসহ পৃথিবীর সকল পরিচিত মানুষের সাথে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম ।
এর ঠিক ৭ মাস পরে তখন তোমার বয়স ছিল আঠারো মাস । আমার পেটের মধ্যে প্রচুর ব্যাথা করতো আর হঠাৎ হঠাৎ করে ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে পরতাম । আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো, ডাক্তার সবকিছু পরীক্ষা নিরিক্ষার পরে বললেন আমার পেটের মধ্যে ছোট্ট একটা ক্যান্সার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু ভয়ের কিছু নেই । কারণ অপারেশন করলেই রোগী সুস্থ হয়ে যায় তবে কিছু টাকা খরচ করতে হবে । আমার কাছে টাকা অবশিষ্ট ছিল না কারণ সবকিছু আমি ওকে দিয়ে দিছিলাম কিন্তু গহনাপত্র ছিল । আমি তাকে বললাম, গহনাপত্র বিক্রি করে আমার অপারেশনের ব্যবস্থা করতে । সে গহনাপত্র বিক্রি করেছে ঠিকই কিন্তু সেটা আমার চিকিৎসার জন্য না । সে সেই মুহূর্তে আমাকে ওই হাসপাতালে ফেলে রেখে গহনা বিক্রির টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল । তুমি তখন আমাদের বাসার পাশের ফাতেমা ভাবির কাছে থাকতে । ফাতেমা ভাবি পরবর্তীতে সবকিছু জেনে তার স্বামীর কাছে বলে । তার স্বামী বিষয়টা বাড়ির মালিকের কাছে বলে । বাড়ির মালিক সেই বছর হজ্জ করে এসেছেন, তিনি আমার চিকিৎসার জন্য ৪২ হাজার টাকা খরচ করেছেন । এবং তিনি আমাকে বলেছেন যে, আমি যতদিন তার বাসায় থাকবো ততদিনে কোন ভাড়া দিতে হবে না । একটা মানুষ এত ভালো হয় কিভাবে ? আমি জানিনা, তবে সেদিনই বিশ্বাস করেছি জগতে এখনো ভালো মানুষ আছে , তার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ ।
এরপর থেকে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত শুরু হয়ে গেল, আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম বারবার কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা পারিনি । ফাতেমা ভাবির মাধ্যমে যোগাযোগ করে মিরপুরেই গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করলাম । গার্মেন্টসের জব কতটা গালাগালি সহ্য করে করতে হয় সেটা শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকরাই জানে । সারাদিন অফিসের মধ্যে কাজ করতাম আর গালাগালি করলে কান্না করতাম । বাসায় ফিরে রান্না করে তোমাকে নিয়ে বুকে জড়িয়ে সুয়ে থাকতাম ৷ তোমার বাবার সেই নিশ্বার্থ ভালবাসাকে স্মরণ করে বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতো ।
তোমার মনে পরে ? মাঝে মাঝে তুমি ঘুম থেকে উঠে দেখতে আমি কান্না করি । তুমি বলতে " মা তুমি কান্না করো কেন ? সুমন কি তোমাকেও মেরেছে ? " সুমন ছিল ফাতেমা ভাবির ছেলে , আমি অফিসে গেলে তোমাকে সবসময় মারতো আর তুমি কান্না করতে । তাই আমি কান্না করলেও তুমি মনে করতে যে সুমন মনে হয় আমাকে মেরেছে ।
আস্তে আস্তে কান্না করতে করতে চোখের নোনাপানি শুকিয়ে গেল । তুমি বড় হয়ে গেলে আমিও আর আগের মতো কান্না করতাম না । কলোনির সবার বাবা যখন আদর করতো তখন তুমি তোমার বাবার কথা জানতে চাইতে । কলোনির সবাই জানতো যে, ইকবাল তোমার বাবা কিন্তু কথাটা মিথ্যা । ওহহ তোমাকে বলা হয়নি, যার সাথে পালিয়ে এসেছিলাম তার নাম ইকবাল । তোমাকে এগারো মাসের শিশু অবস্থায় নিয়ে এসেছি তাই সবাই জানতো যে তুমি ইনবালের সন্তান । তাই কলোনির সবাই এবং আমি এতদিন তোমাকে ভুল জানিয়ে এসেছি । তুমিসহ কলোনির সবাই জানে যে তোমার বাবা একজন বিশ্বাসঘাতক বেঈমান । কিন্তু আজকে আমি তোমার কাছে প্রকাশ করছি, তোমার জন্মদাতা পিতা বেঈমান ছিল না । বেঈমান ছিল সেই মানুষটা যাকে আমি বিশ্বাস করে তোমার বাবাকে ঠকিয়েছি ।
তুমি বড় হয়ে যখন মাঝে মাঝে তোমার বাবাকে ঘৃণা করার কথা বলতে । তখন বারবার আমি বলতে চেয়েছিলাম যে তোমার বাবাকে ঘৃণা করো না কারণ সে ফেরেশতার মতো মানুষ । কিন্তু আমি তখন ভয়ে বলতে পারিনি তাই এ জীবনে বেঁচে থাকতে তোমাকে বলা হলো না ।
আমার মৃত্যুর পরে তুমি বড় একা হয়ে যাবে তাই আমি চাই তুমি তোমার বাবার কাছে ফিরে যাবে । আমার বিশ্বাস আজও তোমার বাবা তোমাকে ভালবাসবে । আমাকে এখন সে ভালবাসে কিনা জানিনা, তবে তুমি যদি সত্যি সত্যি যাও তাহলে তার কাছ থেকে চুপিচুপি জেনে নেবে । সে কি আজও আমাকে ভালবেসে নাকি ঘৃণা করে ? জানার পরে গভীর রাতে আকাশে দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে দিও আমি শুনতে পাবো ।
জেলা;- বাগেরহাট ।
থানা;- মোড়েলগঞ্জ ৷
গ্রাম ;- সূর্যমুখী ।
গ্রামের মধ্যে গিয়ে তোমার বাবার নাম বললে সবাই দেখিয়ে দেবে । বলবে তালুকদার বাড়ি মোশতাক সরোয়ার মিজানের বাড়ি যাবো । বাজারের কাছে প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা । সেই রাস্তা দিয়ে সামান্য ভিতরে গেলে দেখবে রাস্তার বাম হাতে দোতলা পাকা বাড়ি । তোমার বাবা বিদেশে যাবার এক বছর পরেই টাকা পাঠিয়ে পাঠিয়ে ১০ মাসের মধ্যে ওই বাড়ি করেছিলেন । বাড়ির সামনের দিকে লাল রং করা আছে তবে এত বছর পরে রং হয়তো খসে গিয়েছে তাই নতুন কালার করতে পারে । তোমার বাবার কাছে গিয়ে আমার সবকিছু খুলে বলবে । বলবে যে তাকে ছেড়ে আসার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি তার কাছে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি । আমি চাই যেদিন তুমি চিঠিটা পড়বে সেদিনই তুমি গ্রামের বাড়ি চলে যাবে । ঠিকানাটা মনে রেখো কিন্তু আবার ভুলে যেও না ।
ইতি,
তোমার আম্মু
ফারজানা কবিতা ।
★★
চোখের পানি মুছে বাহিরে তাকিয়ে দেখি এখনো অন্ধকার হয়ে আছে । মসজিদের ইমাম সাহেব সবাই কে মাইকে বলছেন , " প্রিয় এলাকাবাসী আজকে পবিত্র রমজানের শেষ দিন , সবাই তাড়াতাড়ি সেহরি খেতে উঠুন ৷ "
কলোনির মধ্যে ২৩ টা পরিবার থাকতো, তাদের মধ্যে ১৭ টা পরিবার ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে । তাই কলোনির মধ্যে তেমন হইহট্টগোল শোনা যাচ্ছে না । আমি রুমের বাতি অন করে ব্যাগের ভেতর কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছি । এমন সময় দরজায় ঠকঠক করে কড়া নেড়ে উঠলো, নিশ্চয়ই বৃষ্টি এসেছে সেহরির খাবার নিয়ে । মা মারা যাবার পরে আমি বৃষ্টিদের বাসায় খাওয়া দাওয়া করি বিনিময়ে প্রতিমাসে চার হাজার টাকা তাদের দেই ।
- দরজা খুলে দিলাম বৃষ্টি আমাকে ব্যাগে কাপড় ভরতে দেখে বললো , কি করো এগুলো ? (বৃষ্টি)
- কাপড় গোছাচ্ছি গ্রামের বাড়ি যাবো । (আমি)
- কার কাছে ?
- বাবার কাছে !
- মানে কি ? তোমার বাবার খবর পাওয়া গেছে ? এত বছর পরে আবার কোই থেকে বের হলো ?
- সবকিছু পরে বলবো , আমাকে এখনই বের হতে হবে তুমি খাবার রেখে যাও আমি খেয়ে তারপর সাথে সাথে বেরিয়ে পরবো ।
- আমিও তোমার সাথে যাবো ।
- পাগল নাকি তুমি ? আমার নিজের সেখানে কেমন অবস্থা হবে জানিনা তারমধ্যে আবার তুমি ?
- তুমি খুব ভালো করে জানো যে আমি তোমার জন্য গ্রামের বাড়ি যাইনি । মা-বাবা যেতে চেয়েছে তবুও আমি যাবনা বলে তারাও যায়নি । আর সেই তুমি আমাকে রেখে চলে যাবে ?
- দেখো বৃষ্টি, আমি যদি ফিরে আসি তাহলে সবকিছু আর কাউকে কিছু না বললেও তোমাকে বলবো ।
- কিন্তু তোমাকে একা কোথায় ছেড়ে দেবো আমার যে খুব ভয় লাগে ।
- চিন্তা করো না তুমি , আমি ফিরে আসার চেষ্টা করবো ।
- মানে কি এসবের ? চেষ্টা করবো মানে কি ? বলো তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে ।
- বৃষ্টি তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো যে, আমি একটুতেই অনেক রেগে যাই । তাই এই মুহূর্তে আমার রাগ বাড়িয়ে দিও না প্লিজ প্লিজ ।
- সারাক্ষণ কল দিয়ে কথা বলবে তো ?
- তা হয়তো পারবো না, কিন্তু আমি ঝামেলা শেষ করে তোমার সাথে যোগাযোগ করবো । তুমি সেই বিশ্বাস রাখতে পারো ।
- ঠিক আছে তাহলে তুমি খাও আমি তাকিয়ে দেখি ।
- কোন দরকার নেই তুমি রুমে গিয়ে সেহরি খাও ৷
★★★
বৃষ্টি আমাকে ভালবাসে, কলোনির মধ্যে আমরা একসাথে বড় হয়েছি । ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকে ও গার্মেন্টসে চাকরি করা শুরু করে । আমি অবশ্য এসএসসি পাস করেছিলাম, তারপর মা মা'রা গেল আর আমারও পড়াশোনা সমাপ্ত হয়ে গেল । মা যখন মা-রা গেছে তখন আমার বয়স সতেরো বছর আর আজ ছয় বছর পরে আমার বয়স তেইশ ।
বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুর থেকে সরাসরি চলে গেলাম যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় । আমাদের কলোনির এক লোকের বাড়ির বাগেরহাট মোংলা তাই সে বলেছেন যে যাত্রাবাড়ী হয়ে গেলে নাকি সুবিধা হবে । অবশ্য আমার ইচ্ছে ছিল এখন থেকে কাছেই গাবতলী বাস স্টেশন থেকে যাবো ।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এসে দেখি হাজার হাজার মানুষের বাড়ি ফেরার প্রচেষ্টা । আমি ঠিক কি রকম গাড়ির মধ্যে উঠবো সেটা ভাবছি আর তখন চোখ পরলো একটা মহিলা তার স্বামীকে ঝাড়ি দিচ্ছে । মহিলার কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা, মহিলার স্বামী বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে ।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে আসলাম মাওয়া ঘাটে তারপর ফেরি পার হয়ে মাইক্রোবাসে করে সরাসরি বাগেরহাট । বাগেরহাট থেকে আবার লোকাল বাসে করে মোড়েলগঞ্জ বাস স্টেশন । সেখান থেকে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে, সূর্যমুখী গ্রাম এখান থেকে ৮ কিঃমিঃ দুরত্ব । মোটরসাইকেল করে ২০০ টাকার চুক্তিতে আমি উঠে বসলাম এবং প্রায় ২৫ মিনিট পরে আমি তালুকদার বড়ি মোশতাক সরোয়ার মিজান মানে আবার বাবার বাড়ি এসে পৌছলাম ।
মায়ের বলা বর্ননা সবকিছু ঠিক আছে, বাড়ির রং লাল ঠিকই কিন্তু সচ্ছ ঝকঝকে মনে কিছুদিন আগে রং করা হয়েছে । আমি বাড়ির মধ্যে গেলাম, দুই সাইডে ফুলের গাছ তার মধ্যে দিয়ে ইট বিছানো রাস্তা ঘরের সাথে মিলেছে ৷ রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘরের সামনে সিঁড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম । সিড়ির উপর একটা লোক বই হাতে বসে আছে, চোখে চশমা বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন ।
- আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আবারও বইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন , কাকে চাই ? (লোকটা)
- আমি মোশতাক সরোয়ার মিজান সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই ৷
- লোকটা বই থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন । বাম হাত দিয়ে চোখের চশমা খুলে নিলেন কারণ চশমা শুধু বইয়ের জন্য । মানুষের সাথে কথা বলার জন্য না । বললেন , মোশতাক সরোয়ার কে তুমি চেনো না ?
- জ্বি না কখনো দেখিনি তবে আমার মা দেখলে চিনতে পারবে ।
- তোমার মায়ের নাম কি ?
- জ্বি ফারজানা কবিতা, আমি মোশতাক সরোয়ার সাহেবের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব ।
- ওহহ আচ্ছা ৷
- "এবার তিনি বসা থেকে উঠে সিঁড়ির সামনে গিয়ে দোতলার জানালায় তাকিয়ে ডাক দিলেন, মাহি কোই তুমি ? "
- উপর থেকে চিকন কন্ঠে একটা মেয়ে বললো, জ্বি বাবা বলো ৷ ( মনে হয় মেয়েটির নাম মাহি )
- তোমার আম্মুকে নিয়ে নিচে আসো , তাকে বলো তোমার বড় আম্মুর ছেলে সজীব এসেছে ৷
আমি সিঁড়িতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম , তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন , তুমি থাকো তাহলে আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি ৷ বলেই তিনি পিছনের দিকে ফিরে রাস্তার দিকে হাটা শুরু করলো ।
একটু পরে ১৫/১৬ বছরের একটা মেয়ে ও মায়ের বয়সী এক মহিলা মাথায় কাপড় দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো । আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেউ কিছু বলছে না , আমি একটু ইতস্তত বোধ করে নিজেই বললাম ; " আসসালামু আলাইকুম , কেমন আছেন আপনারা ? "
- এবার মহিলাটা মুখ ফুটে জবাব দিয়ে বললো, ওয়া আলাইকুম আসসালাম, আমরা সবাই ভালো আছি । তুমি কেমন আছো বাবা ? "
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ।
- বাইরে দাড়িয়ে আছো কেন ? চলো ভিতরে চলো , ও মাহি তোর ভাইয়ের কাছ থেকে ব্যাগটা হাতে নে কত কষ্ট করে শহর থেকে এসেছে ।
আমি তাদের পিছনে পিছনে দোতলায় উঠলাম, উপরে গিয়ে একটা তালাবদ্ধ ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । "মহিলা বললো, ও মাহি ! তোর বাবার টেবিল থেকে এই রুমের চাবি নিয়ে আয় । "
মাহি চলে গেল চাবি আনার জন্য দুই মিনিটের মধ্যে আবারও চাবি নিয়ে হাজির । তালা খুলে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলাম, ভেবেছিলাম বদ্ধ ঘরে মনে হয় ধুলো ময়লা জমা থাকবে । কিন্তু আমার ধারণা ভুল কারণ রুম ঝকঝকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন । বিছানা ধবধবে সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা, চারিদিকে আসবাবপত্র সবকিছু অনেক নতুন নতুন লাগে ।
আমি খাটের ওপর বসলাম, মাথার উপর সিলিং ফ্যান চালু করা হলো । মহিলাটা আমার পাশে বসে বললেন, " তুমি বিশ্রাম করে গোসল করো, আমি রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছি । মাহি তোমার কাছাকাছি আছে কিছু দরকার হলে ওকে বলবে । "
- " আমি বললাম, আসলে আন্টি আমি তো আগে কখনো আসিনি তাই কাউকে চিনিনা । এমনকি আপনাদের সাথেও তো পরিচয় নেই । "
- " শোন কথা ছেলের , আমি তোমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আর তোমার ছোট মা আর এ হচ্ছে তোমার বোন মাহি । আর বাহিরে যার সাথে প্রথম দেখা হয়েছে সেই হচ্ছে তোমার বাবা । "
আমি অবাক হলাম, বাবাকে চোখের সামনে দেখে কিছু বলতে পারিনি । আমাকে দেখে বাবা রাগ করেছে নাকি খুশি হয়েছে মনে নেই । বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে আছে, অবশ্য এটাই হওয়ার ছিল । আমার মা নিজের ভুলের জন্য শাস্তি ভোগ করতে করতে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে । কিন্তু বাবা তো ভুল করেনি তাই পুনরায় বিয়ে করে সুখী হবার অধিকার বাবার আছে । ভাবছি রাতে বাবাকে জিজ্ঞেস করবো আমার মা'কে সে ক্ষমা করতে পেরেছে কিনা ? তারপর গভীর রাতে এই বাসার ছাঁদে দাঁড়িয়ে মা'কে জানিয়ে দেবো । সৎ মা হলেও তার ব্যবহার আমার কাছে খুব ভালো লাগলো যা সচারাচর সবসময় দেখা যায় না । মাহি আমার বোন , সম্পুর্ণ নাম জানা হয়নি , সে আমার সাথে কথা বলতে একটু কেমন সঙ্কোচ বোধ করে । তার জড়তা কাটিয়ে দিতে হবে কিন্তু তার আগে নিজে ফ্রেশ হতে হবে ।
★★★
রুমটা খুব পছন্দ হয়েছে আমার , এতক্ষণে দেয়ালে তাকিয়ে দেখি আমার মা ও বাবার একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি ঝুলছে । বাবার মুখটা হাসিহাসি কিন্তু মায়ের মুখটা কালো মনে হয় ছবি তোলার সময়ও মা মনে মনে বাবাকে সরিয়ে রেখেছে । অনেক্ক্ষণ ধরে রুমের চারিদিকে তাকিয়ে রইলাম তারপর জানালা খুলে দিলাম । দক্ষিণ ও পশ্চিমে দুটো জানালা যা এই রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট । দক্ষিণের জানালা দিয়ে বাতাস আর পশ্চিমের জানালা পড়ন্ত বিকেলের অপরুপ চিত্র দেখা যাবে ৷
ইফতার করলাম মাগরিবের নামাজ আদায় করছি কিন্তু বাবা বাসায় আসলো না । আগামীকাল ঈদের দিন তাই বাহিরে মানুষের বাজি ফাটানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে । চাঁদ চাঁদ বলে বাচ্চারা চিৎকার করে করে দৌড়চ্ছে মনে হয় । ছোট মা'কে জিজ্ঞেস করে জানলাম বাবা নাকি প্রতিদিন বাড়িতেই ইফতার করতেন কিন্তু আজকে হঠাৎ বাড়িতে এলেন না । আমি মনে মনে ভাবলাম, তবে কি আমার জন্য এমন করা হয়েছে ? তাহলে কি আমি ভুল করছি ?
রুমের মধ্যে এসে মায়ের কিছু স্মৃতি কল্পনা করতে করতে তন্দ্রা লেগেছিল । মাহির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল , " মাহি বললো ভাইয়া মা তোমাকে খেতে ডাকছে ।
- " বললাম, বাবা এসেছে ? "
- "হ্যাঁ, বাবা খাবার টেবিলে বসে আছে । "
- " আচ্ছা চলো তাহলে । "
খাবার টেবিলে আমি বাবা আর মাহি একসাথে বসলাম , ছোট মা খাবার বেরে বেরে দিচ্ছেন । নানা ধরনের তরকারি রান্না করা হয়েছে , সবার প্রথম আমার প্লেটে ইলিশ মাছের মাথা আর মাছের ডিম দেয়া হলো ।
- নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছি হঠাৎ করে বাবা বললো , তারপর কি খবর তোমার ? কেমন আছো ?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ।
- হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে কি মনে করে আসলে ? তোমার তো এ বাড়িতে আসার কথা না । কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছো সেটা বোঝা যাচ্ছে ।
- আমি এবার দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম, তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে আবার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন । কারণ বাবা পরবর্তীতে কি বলে সেটা জানার জন্য । বললাম, তেমন কোন উদ্দেশ্য নেই হঠাৎ করে চলে এসেছি । একটা কাজের জন্য এসেছিলাম বাগেরহাট তাই ভাবলাম ঘুরে যা-ই ।
- ওহহ আচ্ছা, তাইতো বলি যে, ফারজানার ছেলে হঠাৎ আমার বাড়িতে কি করে ? তা ঈদের দিন মায়ের কাছে থাকতে মন চায় না ?
- এবার আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেল , তাই কোনমতে নিজেকে সামলে বললাম , আমার মা মারা গেছে ছয় বছর আগে ।
- এবার বাবার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম ! বাবা বললো, তোমার মা মা-রা গেছে তা আমি জানি । আমি বলছি দীর্ঘ এক মাস রোজার পরে ঈদের দিন মায়ের কবরের কাছে সন্তানের যাওয়া উচিৎ ছিল ।
- জ্বি তা ছিল , কিন্তু আপনি আমার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ জানেন ?
- হ্যাঁ জানি, কেন জানতে পারি না ?
- জ্বী পারেন ।
- তাহলে আর কি ? আচ্ছা যে দরকারে এসেছো সেবা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে তো কালই চলে যাবে মনে হয় ?
- জ্বি আমি কালই চলে যাবো ।
★★
বাবা হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলেন আমি দুচামচ ডাল নিয়ে বাকি ভাত গুলো খেয়ে উঠে পরলাম । আমার জন্য বরাদ্দ করা রুমের মধ্যে গিয়ে দক্ষিণ জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছি । বাবার প্রতিটি কথা কানের মধ্যে বেজে উঠল, আমি এসে তাদের মাঝে একটা ক্ষনিকের অশান্তি সৃষ্টি করেছি । ফসলের মাঠের মধ্যে আগাছা হয়ে ঢুকে গেলাম কিন্তু যেটা উচিত ছিল না । বাবার কাছে মায়ের শেষ প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করে কিন্তু সাহস পাচ্ছি না । পরিস্থিতি সেই সুযোগ তৈরী করে দেয়নাই আমাকে, তবে যতটুকু বুঝতে পারছি ততটুকু বা কম কিসে ? আমি যত দ্রুত সম্ভব চলে যাবো, কারণ আগামীকাল ঈদের দিন বাবার অনেক পরিচিত ব্যাক্তি অথবা গ্রামের অনেকে আসবেন । 

তাদের সামনে হয়তো আমি ফারজানা কবিতার ছেলে পরিচয় দিয়ে দাড়াতে পারবো না । বাবা হয়তো আমার জন্য লজ্জিত হবে তারচেয়ে আজকে সকালে যেভাবে সূর্য ওঠার আগে ঢাকা থেকে রওনা দিলাম । ঠিক তেমনি করে আগামীকাল সূর্য ওঠার আগেই এই সূর্যমুখী গ্রাম ত্যাগ করতে হবে ।

আমার মায়ের কোন সম্মান হয়তো কারো কাছে নেই , মায়ের সাথে সাথে আমিও আজ দুর আকাশ পথের যাত্রী । বাবা ভালো থাকুক, ছোট মা আর মাহি কে নিয়ে তার জীবন পেরিয়ে যাক আনন্দে । আমি নাহয় ব্যাস্ত শহরের মাঝে দিনশেষে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়ালে দুফোঁটা চোখের পানি ফেলে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পরবো । জীবন এমন কেন ? মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে চায় না কেন ? আজকে আমি এভাবে কেন ?
- নিজের কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি ছোট মা দাঁড়িয়ে আছে । বললেন, বাবার কথায় কষ্ট হচ্ছে তাই না ?

- একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, " না মা সত্যি মেনে নিতে আমার তেমন কষ্ট হয়না কারণ ছোটবেলা থেকে কষ্টের মাঝে বড় হয়েছি । "
- " তোর বাবার উপর রাগ করিস না বাবা । "
- " তুই হচ্ছে আদরের ডাক, তাই ছোট মায়ের মুখে তুই শুনে ভালো লাগলো , রাগ করার ক্ষমতা আমার নেই মা । "
- তোর বাবাকে যতটা কঠিন মনে করছিস তিনি কিন্তু ভিতর সম্পুর্ণ বিপরীত । তোর মায়ের জন্য আর তোর জন্য রাতের পর রাত কষ্ট পাচ্ছে ।
- একটা কথা বলবেন মা ?
- বল ।
- বাবা আমার মায়ের মৃত্যুর খবর কিভাবে জানে ?
- তোর বাবা তোদের খবর সবসময় রাখতেন সেই ২২ বছর আগে থেকে ।
- মানে ?
- " তোর মা তোকে নিয়ে চলে যাবার মাস খানিকের তোর বাবা দেশে ফিরে আসে । তারপর বিভিন্ন যায়গা খোঁজ খবর নেয় কিন্তু খবর পেতে পেতে ৬/৭ মাস লেগে গেল । তোর মা যাকে বিয়ে করেছিল তার বাড়ি তোর নানাবাড়ির পাশের গ্রামে । তাকে খুঁজে বের করা হলো কিন্তু তখন তোর মা হাসপাতালে । ছোটবেলায় নাকি তোর মা একবার অসুস্থ হয়েছিল তখন তোর মা যাকে বিয়ে করেছিল সে নাকি সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেল । তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তার সাথে তোর বাবা যোগাযোগ করে । সে তখন তোর আর তোর মায়ের ঠিকানা বলে তখন তোর বাবা খবর নিয়ে জানেন যে তোর মা হাসপাতালে ভর্তি । তোর বাবা বাড়ির মালিকের কাছে বলে টাকা দিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করে । তোদের জন্য বাড়ি ভাড়া মাফ করে দিতে বলে কারণ প্রতি মাসে তোর বাবা ভাড়া দিয়ে দিত । তোর বাবা তখন তোর মা'কে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে কিন্তু তোর দাদী জীবিত ছিল বলে পারে নাই । তোর দাদী পালিয়ে যাওয়া পুত্রবধূকে পুনরায় ঘরে তুলতে পারবে না । এবং তারই জোরাজোরিতে আমাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসে । তোরা যে বস্তিতে থাকতি সেখানে সবাই তোকে তোর মা যার সাথে পালিয়ে গেল তার সন্তান জানে তাই তোর বাবা কখনো সামনে গিয়ে দাবি করেনি । কারণ তোর বাবা যদি সবার সামনে গিয়ে সবকিছু বলে তারপর তোকে নিয়ে আসতে চাইতো তাহলে সেইখানের সবাই তোর মা'কে অপমান করতো । তোর মা'কে সবাই খারাপ মনে করতে আর তোর মা কষ্ট পেত । তাই তোর বাবা এতটা বছর ধরে নিজের কষ্ট নিজের কাছে রেখে দিয়েছে কখনো প্রকাশ করেনি । তোর মা যখন মারা গেছে তখন সে অনেক কান্না করছে কিনা জানিনা তবে কয়েকটা রাত ছাঁদে কাটিয়ে দিয়েছে । 

তুই এই-যে রুমের মধ্যে আছিস এটা তোর মায়ের রুম । তোকে নিয়ে এগারো মাস এই রুমের মধ্যে থাকতো তোর মা । এই রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শুধু তোর জন্য ৷ আমি বউ হয়ে আসার তিন মাস পরে তোর দাদীর মৃত্যু হলো । আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর পরে তোর বোন মাহির জন্ম হয়েছিল ।
তুই তোর বাবার সাথে রাগ করে চলে যাসনে বাবা, কারন তোর বাবা তোকে পেয়ে কতটা আনন্দিত সেটা আমি বুঝতে পারছি । হয়তো অনেক অভিমান নিয়ে বসে আছে তাই এমন করে কথা বলে তাই বলে বাবার সাথে রাগ করে চলে যাসনে ।
- আমি হতবাক হলাম, বললাম ঠিক আছে মা তাহলে আপনার কথাই রাখবো । আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, আমি যেন বাবাকে জিজ্ঞেস করি বাবা কি মা'কে ভালবাসে নাকি ঘৃণা করে ?

- আজও তোর বাবা খুব ভালবাসে তোর মা'কে, তার সাথে সংসার করতে করতে অনেক বছর পার হয়ে গেছে । তাই আমি জানি তোর বাবা তোকে আর তোর মা'কে কতটা ভালবাসে । আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পর তাড়াতাড়ি কাল সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে কিন্তু ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ।
★★★

বাতি বন্ধ করে বিছানায় সুয়ে আছি নতুন অপরিচিত স্থান তাই ঘুম আসছে না । এমন একটা উত্তেজনা পূর্ণ রাতে ঘুম আসার কথা নয় তবুও বৃথা চেষ্টা করছি । মায়ের কথা খুব মনে পরছে, কি অপরাধ তার ? সে একটা মানুষকে ভালবেসে স্বপ্ন দেখেছিল আর স্বপ্ন পূরণ করতে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে । এটাই তার অপরাধ ? যার সাথে পালিয়ে গেল সে যদি মা'কে ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতো তাহলে মায়ের জীবনের গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো । কিন্তু হয়নি কারণ প্রকৃতি সবকিছুর হিসাব রাখেন । সবকিছু সবাইকে ফিরিয়ে দেবে ।
দরজা খুলে কে যে অন্ধকারে প্রবেশ করলো , রুমে অন্ধকার তবুও চোখ সয়ে গেছে । বাহিরে জোৎস্না নেই কারণ আজকে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ উঠেছে । সেই চাঁদের আলোয় জানালার উপরের ভেন্টিলেটর দিয়ে আলো আসা সম্ভব না । 

তবুও ঘরের মধ্যে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে বাবা প্রবেশ করেছে । কারণ মা অথবা মাহির দেহ এতটা লম্বা আর সাস্থ্যবান না । আমার খাটের পায়ের কাছে টেবিলের কাছে গিয়ে কি যেন রাখলেন । আমি নিঃশব্দে তাকিয়ে আছি , টেবিলের কাছ থেকে আমার মাথার আসলো । মশারিটা আস্তে আস্তে তুলে আমার কপালে হাত রাখলেন । আমি ঘন ঘন নিশ্বাস ছেড়ে দিচ্ছি, বাবা তার মাথা নিচু করে আমার কপালে আস্তে একটা চুমু দিল । তারপর হাত সরিয়ে মশারী ঠিক করে দিয়ে পিছনে ফিরে যেভাবে এসেছে সেভাবেই চলে গেল । আমি অন্ধকারের মত সবকিছু গোপনে দেখলাম, বাবা গোপনে এসেছে তাকে গোপনেই যেতে দিলাম । সাড়া দিয়ে তাকে অপ্রস্তুত করে কি লাভ হতো ?
★★
সকাল বেলা মাহির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল, গতকাল সারাদিনের ক্লান্তি আর গভীর রাতে ঘুমানোর জন্য ভাঙতে চায় না । তবুও চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলাম । জানালা খোলা তবুও বাহিরে অন্ধকার মনে হচ্ছে মনে হয় আকাশে মেঘ জমেছে । আজকে ঈদের দিন বৃষ্টি নামলে মানুষের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে তাই প্রার্থনা করি বৃষ্টি না আসুক ।
- মাহি বললো, ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি গোসল করে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে নিচে আসো । বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ?
- বললাম, আমার তো পাঞ্জাবি নেই মাহি ।

- বারেহহ বাবা তোমার জন্য রেখে গেছে ও-ই যে টেবিলের উপর, তাড়াতাড়ি করো ।
- আমার জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবি কিনলো কখন ?

- গতকাল তুমি আসার সাথে সাথে বাবা বেরিয়ে গেল মনে আছে ? বাবা তখন মোড়েলগঞ্জ বাজারে গিয়ে তোমার জন্য এগুলো কিনে এনেছে । আমরা তো প্রথমে ভেবেছিলাম বাবা হঠাৎ আজকে ইফতার করতে এলো না কেন ? কিন্তু পরে যখন জানলাম তোমার জন্য এগুলো কিনতে গেছে তখন সবকিছু বুঝতে পারছি । এখন তুমি কথা না বাড়িয়ে খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হও মা নাস্তা রেডি করেছে, নাস্তা খেয়ে বাবার সাথে ঈদগাহ ময়দানে নামাজ পড়তে যাবে ।
- আচ্ছা তুই যা আমি আসছি ।

মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে গোসল করে বেরিয়ে পরলাম আর তাড়াতাড়ি করে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে রেডি হচ্ছি । পাঞ্জাবি ঠিকই আছে কিন্তু লম্বা একটু বেশি হয়ে গেছে তবুও ব্যাপার না ঠিক আছে ।
নিচে গিয়ে দেখি ছোট মা নাস্তা টেবিলে সাজাচ্ছে, বাবা পাঞ্জাবি পরে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছে । আমিও একটা চেয়ার টেনে বসে পরলাম । নাস্তার প্লেট সামনে নিয়ে খাওয়া শুরু করছি তখন মা বললো ,
- কিরে পাঞ্জাবি ঠিক মত হয়েছে তো ?
- হ্যাঁ ঠিক মত হয়েছে সমস্যা নেই ।
- পছন্দ হইছে তোর ? তোর বাবা নিজে পছন্দ করে কিনে এনেছে ।
- হ্যাঁ খুব সুন্দর, সাদা পাঞ্জাবি অন্যরকম একটা অনুভূতি ।
- এখন নাস্তা করে তোর বাবার সাথে নামাজ পড়ে আয়, তারপর তোর অনেক কাজ আছে আজকে ।
- কি কাজ ?

- আগে নামাজ পড়ে আয় পরে বলছি ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ।
,
,
জীবনের প্রথম বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়তে যাবো, মনের অনুভূতি অন্যরকম লাগছে । মনে হচ্ছে আকাশ থেকে মা আমাকে আর তার স্বামীকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে । এলাকার আরো দুজন মানুষ আমাদের সাথে হাঁটছে । আমার দিকে একবার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন রেখে হাঁটছে ৷
বাবার পাশাপাশি সবার সাথে ঈদগাহ ময়দানে
 বসে নামাজ পড়লাম । খুতবাহ্ শেষে মুনাজাত ধরা হলো, বাবার চোখে পানি দেখতে পেলাম । আমিও দুফোঁটা চোখের পানি বের করে আল্লাহর কাছে মা-বাবার জন্য দোয়া করলাম ৷ মুনাজাত শেষ করে দাঁড়িয়ে বাবা কয়েকজনকে ডাক দিলেন । সবার সাথে এক এক করে কোলাকুলি করলেন তারপর আমার দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাকলেন । আমিও দুহাত বাড়িয়ে বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম । 

আমার চোখে আবারও পানি বের হয়ে গেল বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে সবাইকে বললো , " আমার সন্তানকে সবাইকে চিনতে পেরেছ ? কারো উত্তর দেবার আগে সে আবারও অন্য প্রসঙ্গ তোলে । এক এক করে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে । আমি শক্ত করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি । মনে মনে বলছি, মা তুমি কি তোমার উত্তর পেয়েছ ?
সকালে আকাশ মেঘলা ছিল কিন্তু এখন মেঘ দেখা যাচ্ছে না বরং নীল আকাশটা দেখা যাচ্ছে । মিষ্টি মিষ্টি রোদ গায়ে পরছে, বাহহ চমৎকার পরিবেশ " মেঘমুক্ত নীলাকাশ " ।
(সমাপ্ত

#গল্পঃ_মেঘমুক্ত_নীলাকাশ ।
#মোঃ_সাইফুল_ইসলাম ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url