ফেসবুক পাসওয়ার্ড | অরণী মেঘ | Facebook Password: Story | Writer: Oroni Megh

ফেসবুক পাসওয়ার্ড | অরণী মেঘ 
 

"তুমি এক্ষুণি তোমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড দিবা।"
রিদি রেগে কথাটা বলল।
শান্ত তার নামের মতই শান্ত স্বভাবের। এবারেও সে রাগ করল না। শান্ত ভঙ্গিতেই বলল,
"ঠিক আছে, তুমি আমার সাথে দেখা করো।"
"দেখা করতে পারব না। এক্ষুণি তুমি পাসওয়ার্ড দেবে। তুমি চাইলে আমার পাসওয়ার্ডও নাও ।"
"তোমারটা লাগবে না। আমার পাসওয়ার্ড দিচ্ছি, নাও।"
শান্ত নিজের পাসওয়ার্ড দিয়ে দিল। রিদি সাথে সাথেই তার আইডিতে লগ ইন করল। এপাশ থেকে শান্ত মুচকি হাসলো।
রিদি আর শান্ত মুখোমুখি বসে আছে। রিদি বলল,
"কিছু বলবে তুমি? কখন থেকে চুপ হয়ে আছো।"
রিদি এখন শান্তর উপর অনেকটাই খুশি। কারণ সে জানে শান্ত তাকে ছাড়া অন্য কারোর সাথে কথা বলে না। তার আইডি জুড়ে কোথাও সন্দেহজনক কিছু পায়নি।
"হ্যাঁ, একটা গল্প শুনবে?"
রিদি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
"তুমি গল্প বলার জন্য এখানে এনেছ?"
"বলতে পারো সেরকমই।"
"ঠিক আছে, বলো।"
শান্ত বলতে শুরু করল,
"ছোটবেলায় আমার মা এই গল্পটা বলত। হুবুহু পুরোটা গুছিয়ে হয়ত বলতে পারব না। তবে চেষ্টা করব।
গল্পটা অনেকটা এরকম, এক বাড়িতে এক কাজের লোক ছিল। তার হাতটানের অভ্যাস ছিল। তাকে যা ই বাজার করার জন্য দেয়া হোক না কেন সেখান থেকে কিছু না কিছু সে চুরি করতোই। তো একবার তার মালিক ভাবলেন তাকে একদম মাপ মত টাকা দেবেন। টাকা দেয়ার পর তাকে একটা কুলফি আইসক্রিম কিনে আনতে বলা হলো।
এখন দেখা যায় সে আর টাকা চুরি করতে পারে না। একদিন মালিক গর্বের সাথে বলেন, " কিরে এখন তো চুরি করতে পারিস না। খারাপ লাগে না?"
তখন সেই লোক উত্তর দিয়েছিল, "আমি আপনার আইসক্রিম রোজ একটু একটু করে খাই।"
শান্ত গল্প বলা শেষ করল। একজনের মুখের আইসক্রিম আরেকজন খাচ্ছে এটা ভাবতেই গা গুলিয়ে আসলো রিদির। নিজেকে সামলে সে শান্তকে বলল,
"এই গল্প শুনানোর মানে?"
"এই গল্পটার সারমর্ম কী জানো?"
"কী?"
"যার চুরির অভ্যাস সে চুরি করবেই। তুমি আমার এক আইডির পাসওয়ার্ড নিয়েছ। অথচ আমি চাইলে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ফোন কল, ভাইভার, টেলিগ্রাম আরো অনেক ভাবেই কথা বলতে পারি। পারি না?"
রিদি চুপ হয়ে গেল। শান্ত আবার বলল,
"এখন চাইলেই অনেকগুলো ফেসবুক আইডি খুলা যায়। আমি চাইলেই অন্য আইডি থেকে অন্য মেয়েদের নক দিতে পারি। পারি না?"
রিদি মাথা নিচু করে বলল,
"হ্যাঁ, পারো।"
"তাহলে তোমার এই আইডির পাসওয়ার্ড তোমার কাছে থাকলেই কি আমার লয়ালটি পরীক্ষায় পাশ করে যাবো?"
"আসলে বিষয়টা তা না..."
"বিষয়টা কী সেটা আমি জানি।"
অতঃপর রিদির সামনে বসেই শান্ত তার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পাল্টালো। আর নতুন পাসওয়ার্ড রিদি জানতেও চাইলো না।
বাসায় যেয়ে শান্ত, সোমাকে টেক্সট করল,
"আমার আইডি হ্যাকার থেকে ব্যাক আনতে পেরেছি। এখন থেকে আমরা হোয়াটসঅ্যাপে না, এখানেই কথা বলতে পারব।"
 
(সমাপ্ত)
========= 00 ============= 00 ============= 00 =========== 
থানার নতুন ওসির ইমার্জেন্সি এক লাখ টাকার প্রয়োজন। অথচ কেউ তাকে টাকা দিতে চাচ্ছে না।

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন থানায় বদলি হয়েছেন সপ্তাহ খানেক হলো। বদলি হওয়ার বদৌলতে অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে পড়েছে। আবার, যে থানায় তিনি এসেছেন সে থানায় নেই ইমার্জেন্সি টাকা উঠানোর কোন মাধ্যম। তাই তিনি পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে। একটু আগে তার সহধর্মিনী কান্না মাখা কণ্ঠে ফোনে বলেন," ওগো... তোমার শশুড় আব্বা হাসপাতালে ভর্তি আছে। ইমার্জেন্সি এক লাখ টাকার প্রয়োজন। না হলে অপারেশন করা যাবে না। প্লিজ, কিছু একটা করো। 

" ওসি সাহেব বউকে ম্যানেজ করছেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি টাকা ম্যানেজ করতে পারছেন না। উনার বউ বর্তমানে শশুড় বাড়িতে। সেখান থেকে ওসির বাড়ি অনেকদূর। বাড়িতে থাকলে লাখ টাকা জোগাড় করা কোনো ব্যাপার ছিল না। আর এছাড়াও তিনি কিছুদিন আগে ধার দেনা করে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন, তাই পরিচিতদের কাছ থেকে এতগুলা টাকা পাওয়া সম্ভবপর নয়; তাই যা করতে হবে এ থানা থেকে করতে হবে।

তিনি এসআই শফিক সাহেবকে ডেকে বলেন," শফিক সাহেব! আমি খুব বিপদে পড়েছি! আমার এক লাখ টাকা প্রয়োজন! আপনি কি একটু কাইন্ডলি ম্যানেজ করে দিতে পারবেন। একসপ্তাহ পরই আপনাকে দিয়ে দেবো।" শফিক সাহেব কথাটাশুনে তিনি মনে মনে ভাবতে থাকেন, এক লাখ টাকা কেন এক কোটি টাকাও দেয়া উনার পক্ষে অসম্ভব নয়। কিন্তু কথা হলো নতুন ওসি যদি ঘুষখোর এসআইদের তালিকা করেন! তাহলে? তাহলে তো তার আমও যাবে আঁটিও যাবে। তাই তিনি লজ্জিতভাবে প্রত্যুত্তর দেন,

" স্যার! আমি সামান্য এসআই। বেতন সীমিত। আপনার থেকে অনেক কম বেতন। আপনার কাছে টাকা নাই, আমার কাছে ওতগুলা টাকা থাকবে কীভাবে? "
মোয়াজ্জেম সাহেব বিষয়টা বুঝতে পারেন। তিনি লজ্জিতভাবে বলেন,
" আসলে আমার শশুড় আব্বা ভীষণ অসুস্থ। অপারেশন না করাতে পারলে, বাঁঁচবেন না! বলেন তো এখন এ রাতের বেলা এতটাকা কোথায় থেকে পাই?"
শফিক সাহেব সহমর্মিতা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন," চিন্তা করবেন না স্যার। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। ইনশাল্লাহ! উনি ব্যবস্থা করে দেবেন।"

মোয়াজ্জেম সাহেব শফিক সাহেবের হাতদ্বয় জোর করে ধরে বলেন,
" যেভাবে হোক একটা ব্যবস্থা করে দেন না। আমার অনেক উপকার হবে। "
একজন ওসি সাহেব একজন সামান্য এসআই'এর কাছে এমন অনুনয় করছেন, তাই শফিক সাহেব খুবই আবেগময় হয়ে পড়েন। তিনি তড়িঘড়ি করে, " দেখছি" বলে উঠে যান। তিনি সোজা উঠে গিয়ে থানার স্টাফ রুমে চলে যান। 

সেখানে সবাইকে বিষয়টা অবহিত করেন। থানার আরেক এসআই কাশেম সাহেব বলেন," মাত্র এক লাখ ট্যাহা! ওসির কাছে এক লাখ ট্যাহা নাই, সেটা কেউ বিশ্বাস করব না-কি? শালার সব ভন্ডামি।" এএসআই করিম সাহেবও তিনি একই কথা বলেন। তদন্ত অফিসার ফরিদ উদ্দিন বলেন," যেটাই হোক না কেন যদি উনার সত্যিই টাকার প্রয়োজন হয়? আর যদি টাকার কারণে উনার শশুড়ের মৃত্যু হয়? তাহলে? ভাবুন, তারপর তো তিনি আমাদের সাথেই চাকরি করবেন। উনি সহযোগিতা না পাওয়ার কথা মনে করেই প্রতিনিয়ত আমাদের উপর রাগের স্টিমরোলার চালাবেন। তাই উনাকে সহযোগিতা করা উচিত। "
কনস্টেবল মোখলেস পান চিবুতে চিবুতে বলেন,

" সাহায্য করেন। তয় নিজে বিপদে পড়ন যাইব না। মানে হইতাছে উনারে টাকা জোগাড় কইরা দেন অন্যের কাছ থাইকা। যাতে সাপও না মরে, লাডিও না ভাঙে। কি কন সবাই?"
সকলে কথাটা পছন্দ হয়৷ সবাই একত্রিত হয়ে থানার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তারেক সাহেবের কাছে ফোন দেন। এসআই শফিক সাহেব ফোন দিয়ে বলেন," তারেক সাহেব না-কি? কেমন আছেন?"

তারেক সাহেব জবাব দেন," ভালো স্যার! স্যার এত রাতে? কোনো বিশেষ কারণ?" এসআই গম্ভীরভাবে বলেন," ভাই! ইমার্জেন্সি এক লাখ টাকা প্রয়োজন। আমাদের ওসি সাহেবের শশুড় অসুস্থ। আপনি যদি একটু ম্যানেজ করে দিতেন!"

তারেক সাহেব চতুর প্রকৃতির মানুষ। তিনি তাই বিষয়টা উল্টোভাবে নেন। কিছুদিন আগেও থানার শফিক সাহেবসহ থানার অন্যদের তার ব্ল্যাকব্যবসার জন্য কয়েক লাখ টাকা ঘুষ দেন৷ অথচ শালারা নতুন বুদ্ধি করেছে টাকা খাওয়ার! শালারা ঘুষ খাওয়ার আর মাধ্যম পেল না। ওসির না-কি এক লাখ টাকা নাই। হা হা হা। এটাও না-কি বিশ্বাস করতে হবে! তিনি নিজের হাসিকে কোনোরকম কন্ট্রোল করে ফোনে জবাব দেন," না ভাই! ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দাভাব যাচ্ছে। তাই টাকা-পয়সা হাতে নাই। আমাকে ক্ষমা করবেন।"

এসআই ফোন কেটে, " হারামজাদা!" বলে ওঠেন। তিনি ফোন ঘুরান আরেক ব্যবসায়ী মালেকের কাছে। মালেক সাহেব ওসি সাহেবের ফোনে টাকা ঋণ দেয়ার কথাশুনে তিনি মনে মনে ভাবেন, "টাকা দেয়া তো বড় কথা নয়, কিন্তু এ টাকা তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না। ওসি সাহেব যদি টাকা না দেন, তাহলে তো আর জোর-জবরদস্তিও করা যাবে না, এ হালা! আমার টাকা দে! নইলে মাইরা তোর নকশিকাঁথা উলোট কইরা ফালামু নে! হালা ভণ্ড!" এগুলা তো আর একজন ওসিকে বলা যাবে না।

এই কথাগুলো মালেক সাহেব মনে মনে ভেবে প্রত্যত্তুর দেন," স্যার! আমার কাছে এখন টাকা নেই। যদি থাকত অবশ্যই দিতাম। দুই ঘণ্টা আগে যদি বলতেন তাহলে দিতে পারতাম। বর্তমানে পকেট একেবারেই ফাঁকা। সরি স্যার! ক্ষমা করবেন!"
এসআই সাহেব কথাটাশুনে হতাশ হয়ে পড়লেন। ফোনটা রেখে তিনি আবার সবার সাথে যুক্তি করতে লাগলেন। তিনি বললেন," টাকা তো ওসি সাহেবের জন্য পেলাম না। এখন কী করা যায়!" একজন একেক রকম মত দিতে থাকলেন। ঠিক তখন থানায়, একজন কান্না মাখা চোখে বাবা এলেন। তিনি অভিযোগ করার জন্য এএসআই করিম সাহেবের সামনে বসলেন।

করিম সাহেব বললেন," আপনি কাঁদছেন কেন?"
জনৈক বাবা বলেন," আমার মেয়েটাকে একটা
ছেলে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে স্যার! আমার মেয়ে হাসপাতালে। আমি ছেলেটার বিচার চাই!"
- "কোন ছেলে? মানে ছেলে গরীব না ধনী?"

পুলিশের কথাশুনে থতমত খেয়ে যান মেয়ের বাবা। ধর্ষকের পরিচয় তো ধর্ষক। সে গরীব, না ধনী তা জানতে চাওয়ার মানে তো হয় না। তিনি হা করে তাকিয়ে থাকলে, এএসআই আবার বলেন," কি বলছেন না যে? বলছি, ধর্ষণ চেষ্টাকারি ছেলেটা ধনী না গরীব?
ভিক্টিমের বাবা বলেন," গরীব। ছেলেটা গ্যারেজে কাজ করে।"
কথাটাশুনে এএসআই মন খারাপ করে ফেলেন। তিনি মনে মনে ভাবেন, শালার! ধর্ষণকারীটা গরীব না হলে দশ লাখ টাকা উসুল করা যেত। আর এত রাতে ধর্ষককে ধরে এনেও তো লাভ নেই, ওসি সাহেবের এক লাখ টাকা তাকে এনে সেলে সারারাত
পিটালেও পাওয়া যাবে না। 

তার চেয়ে ভালো আস্তে আস্তে বিষয়টা নিয়ে ভাবা। তাই ভিক্টিমের বাবার কাছ থেকে জিডির তথ্য নিয়ে বিদায় করে দেন,তাকে। এদিকে ওসি সাহেব বারবার শফিক সাহেবকে তাগাড়া দিচ্ছেন টাকা জোগাড় হলো কি-না! শফিক সাহেব লজ্জিত হয়ে বারবার বলছে, না স্যার! এখনো হয়নি। ওসি সাহেব এবার গম্ভীর হয়ে বলেন," যে করেই হোক শফিক সাহেব আমার এক লক্ষ টাকা চাই -ই। না হলে, শশুড় বাড়ি ও আপনার ভাবীর কাছে মুখ দেখাতে পারব না। "

শফিক সাহেব কথাটাশুনে ওসি সাহেবের সামনে রাখা চেয়ারে গিয়ে বসেন। তিনি ওসি সাহেবকে বলেন," স্যার! এক লাখ টাকা রাত নয়টা বাজে জোগাড় করা খুবই কঠিন বিষয়। তবে...?"
ওসি সাহেব তবে কথাটাশুনে বলেন," তবে কী শফিক সাহেব?"
-আমার বলতে ইতস্ততবোধ হচ্ছে।

- আপনি কোনো সংশয় করবেন না। নির্ভয়ে বলুন। আপনি তো আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। প্লিজ। আমাকে এ যাত্রায় রক্ষা করুন। আমি সবসময় আপনার পাশে থাকব।
ওসি সাহেবের পাশে থাকার কথাশুনে শফিক সাহেব কিছুটা আস্তা খুঁজে পেলেন। তাই তিনি বললেন," স্যার! বলছিলাম কি! বিষয়টা আনলিগেল।"
- আমার টাকা চাই। সেটা অপরাধ হলে অপরাধ।

- স্যার। আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। আমাদের থানায় একজন নাম করা চোর আছে। সে প্রায় সময় চুরির অপরাধে হাজতে থাকে। যদিও সে এখন হাজতের বাইরে আছে। তার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। সে আমাদের বলতে পারেন ভালো সোর্স। তার থেকে বিভিন্ন খবরাখবর আমরা নিই। আপনি চাইলে তার থেকে হেল্প নিতে পারি।
- চোরের কাছ থেকে হেল্প!
- জি স্যার। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
-কেমন হেল্প?

- সে চোরকে আমরা এক বাড়িতে চুরি করতে পাঠাব। সে চুরি করে টাকা এনে দিবে।
- কী বলেন? এটা সম্ভব না-কি?
- স্যার, এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এ রাতের বেলা এক লক্ষ টাকা জোগাড় করা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমি সব চেষ্টা করেছি। শুধু এ পথটাই খোলা আছে। স্যার, আপনি যদি আপনার শশুড়ের জীবন বাঁচাতে চান, তাহলে এটা করতে হবে। জীবন বড়, না স্যার সততা? আর এতে আমাদের গুনাহও হবে না। যা হবে চোরের হবে। আর সে তো চোর, চুরি করাই তার ধর্ম। আপনি প্লিজ না করবেন না স্যার। যার শশুড় নেই, সে-ই বুঝে শশুড় হারানোর বেদনা কতটুকু।

ওসি সাহেব অনেক ভাবনায় পড়ে যান। এ ছাড়া তার প্রাণপ্রিয় শশুড়ের জীবন বাঁচানো আর পসিবল নয়। আর জীবন বাঁচানো তো ফরজ। তাই তিনি একটা ফরজ আদায় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তবে, তিনি একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন,

- তবে, চোর যদি জনগণের হাতে ধরা পড়ে। আর যদি পুলিশের কথা বলে?
- স্যার। আপনি নিশ্চিত থাকুন সে ধরা পড়বে না। কালা চোরকে এখানে সবাই এক নামেই চিনে। সে এত কালা যে আমরাও তাকে ধরতে হিমশিম খেয়ে যাই। তার চুরি বিদ্যা জগৎ বিখ্যাত। আর আমরা তাকে পাঠাবো নির্জন একটা বাড়িতে। সেখানে আর
কেউ নেই। সে শুধু চুরি করে টাকাটা এনে দিবে। আপনি রাজি কি-না বলেন?
ওসি সাহেব আর কিছু ভেবে পান না। তিনি বলে দেন, " রাজি!" বলে। ওসির মুখে রাজিশুনে, শফিক সাহেন আনন্দিত হয়ে পড়েন। কালা চোরকে ধরতে যান বাসায়।

কালা চোরের আজ হলুদ। তার কাল বিয়ে। শফিক সাহেব গিয়ে দেখেন কালা চোর পাঞ্জাবি পরে স্টেজে বসা। শফিক সাহেব গিয়েই তাকে গাড়িতে জোর করে নিয়ে আসেন। তার মা-বাবা কান্না করতে লাগলে বলেন," আপনারা চিন্তা করবেন না। আপনাদের ছেলেকে এরেস্ট করা হচ্ছে না। তাকে আমাদের কাজে নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা বিয়ের কাজ এগোতে থাকুন। সে ঠিক সময় আবার চলে আসবে।

কালা চোর থানার চেয়ারে বসা। এ প্রথম তার এত আদর-আপ্যায়ণ। তার জন্য কোল্ড ড্রিংক্স আর চায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে মনেমনে ভাবছে হয়তো নতুন বর, এজন্য বোধয় এত আপ্যায়ন সে পাচ্ছে।
শফিক সাহেব কালা চোরের কাছে এলেন। বললেন," কালা চোর কেমন আছো? বিয়ে করছো না-কি?"
- জে স্যার।
- মেয়ে দেখতে কেমন?
- স্যার সুন্দর আছে।
- তাহলে তো তোমাদের দু'জনকে মানাবে ভালো। লোকে আসলে ঠিকই বলে, কালো মানুষে সুন্দর বউ পায়।
- স্যার। আমার বিবাহ। আমি বাড়িত যাবো।
- তুমি কি আমাদের একটা উপকার করতে পারবা?
- কী স্যার?

- এক বাড়িতে থেকে চুরি করতে পারবা?
- তওবা স্যার। কী কন? গতবার আপনে যে মাইরডা আমারে মারছেন, এখন সিধা হইলে মাঞ্জায় ধরে। মাইর খাইয়া তওবা কইরা বর্তমানে বিয়ের পিড়িত উঠতাছি৷ আর আপনে কন চুরি করতে? আপনি কি আমার লগে মশকারি করতেছেন না তো? বিয়ের পাত্রের সাথে মশকারি বড়ই খারাপ বিষয়। বলতে পারেন গুনাহের বিষয়। তওবা! তওবা!
- হে কালা চোর! তুমি কি চাও না, তোমার একটা চোরের নাম থাকুক? তুমি কি চাও না, আকাশে বাতাসে তোমার চুরির কথা ভেসে বেড়াক? তুমি কি চাও না তোমার চুরি বিদ্যা দিয়ে সংসার চলুক? কি চাও না?

-চাই স্যার। তয় আপনারা পিডেন। হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা দেন।
- আমি ওয়াদা দিচ্ছি, আজ থেকে কেউ তোমাকে ধরবে না। মারবে না। তুমি হলে আজ থেকে থানার চোর। তুমি কি থানার চোর হইবা?
- হুমু চোর। তয়, আমার তো আজ বিবাহের হলুদ।
- আরে কাল তো তোমার বিবাহ হয়েই যাচ্ছে অন্তত আজকে তোমার গায়ে হলুদকে স্মরণীয় করতে এক টিপ তো মারায় যায়। কী বলো কালা চোর?
- জে স্যার। আমি এক টিপ চুরি করবাম। তয়, স্যার আমারে চুরি করার সার্টিফিকেট দেওন লাগব। কেউ আমারে ধরলে সেডা দেখাইয়া যাতে ছুটবার পারি। দিবেন কি না কন, নইলে আমি হলুদে গেলাম।
- আরে না। দিতাছি।

একটা জিডির কাগজ-এ দেয়া হলো কালা চোরকে চুরির স্বীকৃতি। কালা চোর ফোনে সেলফি তুলে রাখল। কালা চোর, পুলিশে অবিশ্বাস করে। তাই তার এই টেকনিক। আর ধরা পড়লেও কোনো চিন্তা নাই।

পুলিশের গাড়ি করে, পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় চুরি করতে গেল কালা চোর। দূরে একটা গলিতে নামিয়ে দেয়া হলো কালা চোরের কথামতো। তাকে বলে দেয়া হলো যেভাবে হোক এক লক্ষ টাকা চুরি করে আনতে। তার সব কিছু মুখস্ত কোন বাড়িতে শুকনো রুটি আছে আর কোন বাড়িতে লাখ লাখ টাকা আছে।

তবে, এ প্রথম একটা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হলো, কেউ হলুদ অনুষ্ঠান থেকে পাঞ্জাবি পরে চুরি করতে গেল। কালা চোর তা ভেবেই নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করল।
থানার সবাই কালা চোরের জন্য চিন্তিত। সে ঠিকভাবে চুরি করতে পারছে তো! সে কি পারবে এক লাখ টাকা চুরি করে আনতে? ওসি সাহেবের শশুড় কালা চোরের কারণে বাঁচবে তো?
এমন টেনশন কেউ ভাইভা বোর্ডেও হয় না, যতটা টেনশন কালা চোরের জন্য হচ্ছে পুলিশের।

ঘণ্টা খানেক পর, ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে ফেরত এলো কালা চোর। একদম ঘরের সব কিছু থানায় নিয়ে এসেছে। সবাই কালা চোরের ট্যালেন্ট দেখে অবাক।
কালা চোর সবকিছু থানায় জমা দিলো। শফিক সাহেব ১০ লক্ষ টাকা ওসি সাহেবের সামনে রাখলেন। এক লক্ষ টাকা কালা চোরকে দিতে চাইলে, সে বলে," চোর হতে পারি তবে আত্মসম্মান বোধ আছে। চুরির সার্টিফিকেট দিছেন, এটাই অনেক। আর কিছু চাই না আমার।"
টাকা পেয়ে কালা চোরকে জড়িয়ে ধরলেন। আর বললেন," তোমার এ ঋণ কখনই আমি ভুলব না। "
কালা চোর আবেগফ্লুত হয়ে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে থানার গাড়ি করে তাকে আবার হলুদ অনুষ্ঠানে নামিয়ে দেয়া হলো। সবাই কালাকে অনুষ্ঠানে পেয়ে উচ্ছ্বসিত পরিবার।
এদিকে, শশুড়ের জন্য দুই লাখ টাকা বিকাশ করে বাকি টাকা সবার মাঝে বিলিয়ে দিলেন ওসি।
ওসির বউ খুশিতে ফোনে চুমু খেতে থাকে এলোপাতাড়ি। যাক! আর কোনো প্রবলেম থাকল না।
কিন্তু সকালে সংবাদপত্রে হেইডলাইনে নিউজে আসলো,
জেলার এসপির বাড়ি থেকে ঘরের সবকিছু চুরি। চোরকে খুঁজছে পুলিশ।
ওসি সাহেব ও থানার সবাই পত্রিকার নিউজটার দিকে চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে রইলেন। এ তাকানো কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে!!

#চোরে_চোরে_মাসতুতো_ভাই।
#লেখাঃআজিজুল_হক_শাওন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url