কাজটা সেরে ফেলি Padma-Hadi-Rakib Story: Kajta Sere Feli
১।
রেশমি বাসায় ফিরছিল। ফ্ল্যাটে একা বোর হচ্ছিল বলে ঘুরতে গিয়েছিল নিউমার্কেটে। কিছুক্ষণ অকারণ ঘুরে টুরে আবার ফিরে আসছে। পথে একটা মসজিদের সামনে একজন ভিখারিকে দেখতে পেয়ে ১০০ টাকার একটা কড়কড়ে নোট দিল ভিখারিকে। ও সবসময় তার পার্সে নতুন নোটের টাকা রাখে। রিকশাওয়ালা, ভিখারি এরকম কাওকে ও কখনো পুরনো নোট দেয় না। এটা ওর বাবা ওকে শিখিয়েছেন। প্রত্যেক সন্তানের কাছে তার বাবা হিরো। কিন্তু ও মনে করে রেশমির বাবা এমন একজন মানুষ যিনি সব মানুষের আদর্শ হবার যোগ্যতা রাখেন।
সমস্যা হচ্ছে আশেপাশের ফ্ল্যাটের পরিবারগুলো এখনো আসেনি। আরও দু'একদিন পর আসবে হয়তো। ফয়সাল অফিস যাওয়া মাত্রই পুরো এপার্টমেন্টে সে একা। দিন-দুপুরে কেমন গা ছমছম করে। ফয়সাল বলেছিল, গ্রামে চলে যাও। বাবা-মা, ভাইবোনের সাথে কয়েকটি দিন কাটিয়ে আসো। রেশমি মানা করে দিয়েছিল।
এখন মনে হচ্ছে কাজটা ভুল হয়েছে। কারণ ও খেয়াল করেছে দুটো যুবক ওর উপর চোখ রাখছে। নোংরা চাহনি। মেয়েরা পুরুষদের তাকানোর ভাষা বইয়ের মতো পড়তে পারে, আল্লাহ মেয়েদের এ ক্ষমতা দিয়েছেন যাতে নিজেদের রক্ষা করতে পারে ভুল পুরুষের হাত থেকে।
২।
চোখে মুখে লালসা ফুটিয়ে তুষার বলল, দোস্ত রেশমি মেয়েটা একলা। ঘরে কেউ নেই। হাসব্যান্ড আসে, সেই সন্ধ্যা সাতটায়। কাজের বুয়া পর্যন্ত নাই। কাজটা সেরে ফেলি দোস্ত। বেশি অপেক্ষা করলে মিস হয়ে যেতে পারে। দেখা যাবে দুই একদিনের মধ্যেই মানুষজন এসে যাবে। তখন আর কিছু করা যাবেনা। এরকম একটা মাল হাতছাড়া হয়ে গেলে আফসোসের সীমা থাকবে না।
সিগারেট থেকে লম্বা এক চুমুক ধোঁয়া টেনে আকাশের দিকে ছাড়ল অভি। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে তাকাল তুষারের দিকে। তুষার প্রায় ৬ ফুট লম্বা। জিমে যাওয়া মজবুত শরীর। আঁটসাঁট গ্যাঞ্জির উপর দিয়ে বুকের হাতের পেশিগুলো কিলবিল করছে। শরীর যেমন তাগড়া আচরণও করে তেমন পশুর মতো। কিন্তু অভির আদেশ নিষেধ তুষার মেনে চলে। সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলেও তুষার আসলে অভির চ্যালা।
অভি শান্ত গলায় বলল, ঠিকই বলছিস। জিনিসপত্র রেডি রাখ। কালকেই ঘটনা ঘটবে। রেশমির কথা কল্পনা করে তুষারের হৃৎপিণ্ড এখনই লাফালাফি করছে।
৩।
পরদিন।
এপার্টমেন্ট থেকে ২০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে ওরা দুজন। অপেক্ষা করছে রেশমির জন্যে। রেশমি বেরিয়েছে সকাল দশটায়। এখন বারোটা বাজে। তুষার অস্থির হয়ে উঠেছে, অভি প্রাণপণ চেষ্টা করছে শান্ত থাকার। আসন্ন ঘটনার সম্ভাব্যতা ভেবে দুজনই উত্তেজিত। অথচ এরকম ঘটনা ওরা আগেও ঘটিয়েছে। কিন্তু শান্ত থাকার চেষ্টা করলেও শরীর বিদ্রোহ করে।
দুজনই কলেজ লাইফ থেকে বন্ধু। কলেজ লাইফেই তাদের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয় এক প্রস্টিটিউট এর সাথে। ওরা দুজনই বডি কনশাস। নিয়মিত জিমে যায়। অভির তুষারের মতো বিশাল শরীর না থাকলেও গড়পড়তা বাঙালির চেয়ে সে অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান।
ওরা এখনো বাবার টাকায় ফুর্তি করছে। ভার্সিটি লাইফ শেষ। কিন্তু ওদের বন্ধুত্ব রয়ে গেছে। এর একটা প্রধান কারণ - দুজনেরই নারীদেহের প্রতি তীব্র নেশা। অসহ্য কামনায় ওরা প্রতিদিন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়। ব্রথেলে গিয়ে ক্ষিধে মেটে, শখ মেটেনা।
এ বিষয়ে ওদের বাছবিচার বলে কিছু নেই। একজনের গার্লফ্রেন্ডকে ভোগ করেছে অন্যজনও। আর বয়ফ্রেন্ড তাকিয়ে হেসেছে খিকখিক করে। তাই মাস না ফুরাতেই গার্লফ্রেন্ড পুরনো হয়ে যায়। বছরে তাদের প্রায় তিন চারজনের সাথে ব্রেকাপ — তুষার বলে সব মাগিই গোল্ডডিগার। কোন মেয়েই প্রতিবাদ করতে পারেনা। নিজেদের নোংরামি ভিডিও করে ওরা জিম্মি করে রাখে মেয়েগুলোকে।
ঘন্টাখানিক অপেক্ষার পর ওরা দেখতে পেল ওদের কাঙ্ক্ষিত শিকার। রেশমির পরনে কালো বোরকা, নীল হিজাব। মেয়েটা লিপস্টিকও দেয়না, অথচ টকটকে লাল দুটো ঠোঁট। মুখখানা এমন লালচে ফর্সা মনে হয় টোকা দিলেই রক্ত বেরুবে।
তুষার বারবার নিচের ঠোঁট কামড়াচ্ছে। নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা আর। সমস্ত শরীর কাঁপছে। অভি ওকে ধমক দিয়ে বলল, এরকম করছিস কেন! শান্ত হ। পানি খা একটু।
উপরে শান্তভাব দেখালেও অভি নিজেও কম উত্তেজিত নয়। অভির মনে হয় সেক্সের আসল সুখ অর্গাসম না। বরং একটা মেয়েকে দমিত ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার মধ্যেই আসল আনন্দ। রেশমিকে টার্গেট করার আগে কোনরকম সম্পর্কহীন একটা মেয়েকে রেপ করার অভিজ্ঞতা ওদের আগেও হয়েছে। রেপ করে চরম আনন্দ পেয়েছে ওরা দুুজন।
৩।
গেট পেরুবার আগেই ওই ছেলেদুটিকে ও খেয়াল করেছে। না, আজকে ওর হাসব্যান্ডকে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে ব্যাপারটা।
ফ্ল্যাটে ঢুকেই ও গোসল করে নিল দ্রুত। নামাজ পড়বে। নামাজ পড়ার অভ্যাস ওর একেবারেই ছোটবেলা থেকেই। বাবা ওকে মসজিদেও নিয়ে যেতো নিয়মিত। একটু বড় হয়ে যাবার পর আর যায়নি।
বিয়ের আগে বাবা বলেছিলেন, সব অবস্থায় শোকর করবে। নামাজ পড়বে নিয়মিত। নামাজ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করার একটা উপায়। নামাজের মতো নামাজ পড়তে পারলে কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরি হয়। তখন মানুষ আর অহংকার করেনা।
স্পাইরাল বাইন্ডিং করা বাবার একটা খাতা রেশমি তার নিজের সাথে নিয়ে এসেছে। বাবা সে খাতায় মহাপুরুষদের বাণী লিখে রাখতেন। রেশমি নিয়মিত সে খাতা পড়ে। ভালো লাগে। মনে হয় বাবা যেন তার পাশে আছে।
ওই ছেলেগুলোর ব্যাপারে ফয়সালকে ফোন করবে কি-না তা নিয়ে চিন্তায় পড়লো ও। শুধু শুধু টেনশন দেয়ার মানে নেই। বাসায় আসলে নাহয় বলা যাবে। তাছাড়া হয়তো এমনিতেই সন্দেহ করছে ও। অনুমান করে কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা ঠিক না — মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।
৪।
দারোয়ানকে ম্যানেজ করে ফেলেছে ওরা। এক হাজার টাকার একটা নোট দারোয়ানের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে অভি বলল, ছাদে যাবো। একঘন্টার মধ্যে চলে আসবো। ওরা কথা এমনভাবে বলেছে দারোয়ান ভেবেছে - যুবক ছেলে, ছাদে বসে হয়তো গাঁজা খাবে। দারোয়ান বলল, একঘন্টার মধ্যে চলে আসবে। ওরা বলল, নিশ্চয়ই।
দরজা খুলতে বেশ কষ্ট হল। একজনের কাছ থেকে মাস্টার কি নিয়ে এসেছিল কয়েকধরনের। ভাল প্র্যাক্টিস না থাকায় ঠিক কখন চাবি মোচড় দিতে হবে তা বুঝে উঠতে পারছিল না। অবশেষে খুট করে আওয়াজ হয়ে খুলে গেল দরজা। ওরা ভেতরে ঢুকে পড়ল শব্দহীন।
ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল আবার। অভি চোখের ইশারা করতেই তুষার কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তলটা নিয়ে নিল ডানহাতে।
জঘন্য এ অপরাধ করার জন্যে ওদের কখনোই কোন অপরাধবোধ হয়নি। আজও নির্বিঘ্নে একটা মেয়ের সর্বনাশ করবে ওরা, তছনছ করে দেবে একটা মেয়ের সুন্দর জীবন। কারণ ওরা মনে করে নারীরা যৌনবস্তু। যেকোনো সময় নারীকে ভোগ করা যায়। এ ভোগ বৈধ। পুরুষের জন্যই নারীর সৃষ্টি। নারী মূলত পুরুষের অধীন। পুরুষের ক্ষমতার চাহিদা মতো নারী সাড়া দিতে বাধ্য। তাছাড়া ওদের কাছে অদম্য যৌনতা দমন করতে না পারা ব্যর্থতা নয়, পৌরুষ।
৫।
রেশমি কিচেনে ছিলো। ফ্রিজ থেকে মাছ নামাচ্ছিল রাঁধবে বলে। কিন্তু তার মনে হলো ঘরে কেউ যেন ঢুকেছে। ফ্রিজের দরজা বন্ধ করে দিয়ে সে বসার ঘরে এসে দেখল ওই ছেলেদুটো। সে রাগি গলায় বলল, কি ব্যাপার আপনারা ঘরে ঢুকলেন কি করে?
রেশমিকে দেখেই অভি চাপা গলায় বলল, চুপ একটা কথাও নয়। যা বলব চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মতো শুনবে। নয়তো খুন করে ফেলব। তুষারের দিকে ইশারা করল অভি। পিস্তলটা এতক্ষণে চোখে পড়ল ওর। রেশমি বলল, আপনারা কি চান? খিকখিক করে হেসে উঠলো দুজন। অভি বলল, বুঝতে পারছোনা? এখনই বুঝে যাবে। ওড়না ফেলে দাও। দেখি জিনিসপত্র কেমন। বোরকার জন্যে তো এতদিন বুঝতে পারিনি। এ বলে আবার খিকখিক করে হেসে উঠলো ওরা।
রেশমির পরনে ঢিলেঢালা সালোয়ার কামিজ। সে ওড়না খুলে ফেলে দিয়ে তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। রেশমি আজকেই তার বাবার খাতায় লেখা শেখ সাদীর একটি বাণী পড়েছিল — "বালা মসিবতে সাহস হারাতে নেই।
সাহসিকতার সহিত মোকাবিলা করো। সাহস শক্তির চাইতে অধিক কাজ করে।"
বাবা চিরকাল তাকে সাহসিকতার ট্রেনিং দিয়েছেন। আজকেও তার খাতার মাধ্যমে মনে করিয়ে দিলেন সাহসিকতার কথা। সে ধীরস্বভাবে তাকিয়ে আছে তুষারের চোখে। তুষার বিষয়টা বুঝতে পারছেনা। পিস্তলের ভয়েই কি মেয়েটা এমন অপলক তাকিয়ে আছে! এরকম পরিস্থিতিতে একটি মেয়ের মুখের এক্সপ্রেশন এরকম হবার কথা নয়। ফর্সা গালের ভাঁজে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার কোন রেখা নেই।
বিষয়টা অভিও খেয়াল করেছে। এ মেয়ে কি ভয় পাচ্ছে না? নাকি সে ইতোমধ্যে রাজি হয়ে গিয়ে নিজেও চাচ্ছে যৌন কর্মে অংশ নিতে? কিন্তু মেয়েরা স্বভাবতই লাজুক বলে সহজে সম্মতি দিতে সংকোচ করছে? অসম্মতির ভাণ করছে? বলামাত্রই সে ওড়না খুলে ফেলে দিয়েছে। ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ — প্রবাদটা তো আর এমনি এমনি আসেনি।
অভি ভাবছে পুরুষ জোর করলেই মেয়েরা সম্মত হয়। মেয়েদের যদি ইচ্ছাই না থাকে তবে বুক,পেট দেখায় কেন? ওড়না না পরা, টি-শার্ট পরা পাতলা শাড়ি বা কাপড় পরা ইত্যাদি কেন? যৌনভাবে আহবান করার জন্যই তো? আর কি কারণ থাকতে পারে?
অভি তুষারকে ইশারা করল কাছে যেতে। অভির কথা মেনে নিয়ে তুষার রেশমির কাছাকাছি যেতেই আচমকা বিদ্যুৎ খেলে গেল রেশমির শরীরে। স্প্রিং এর মতো বেঁকে শূন্যে লাফ দিয়ে একটা "ফ্লাইং ফ্রন্ট কিক" বসিয়ে দিল তুষারের চোয়ালে। বিশাল শরীরটা ধপাস করে মেঝেতে পরে গেল কাটা গাছের মতো। হাত থেকে ছিটকে পিস্তল মেঝেতে পিছলে সরে গেল দূরে। ইতোমধ্যে হতভম্ব অভির কাছে পৌঁছে গেছে রেশমি। কান আর কাঁধের মাঝখানের নার্ভসেন্টারে কারাতের কোপ বসিয়ে দিল সজোরে। বিষ্ফোরিত চোখে চিতপটাং হয়ে মেঝেতে পরে গেল অভি। রেশমির রিফ্লেক্স একশান আর ক্ষিপ্রতায় পুরো ঘটনাটি ঘটতে সময় লাগলো মাত্র এক সেকেন্ড।
রেশমি দ্রুত কিচেন থেকে রশি এনে দুজনের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেললো। ওরা এখনো বেঁহুশ। রেশমি প্রথমে ফয়সালকে ফোন করল, তারপর পুলিশকে।
হতভম্ব পুলিশ বিশ্বাসই করতে পারছিলনা ৫ ফিট ৪ ইঞ্চির ছিপছিপে একটা মেয়ে দু'দুজন বডিবিল্ডারকে মেরে বেহুশ করে ফেলেছে একা। ফয়সাল বলল, স্যার, আমার স্ত্রী একজন কারাটে মাস্টার। সে ওস্তাদ রফিকুল আলমের মেয়ে। ৪ বছর বয়স থেকে টানা ২০ বছর বাবার সাথে প্র্যাক্টিস করেছে মার্শাল আর্ট।
ইন্সপেক্টর সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, আমার মেয়েটাকেও কারাটে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব, সাথে আমার বৌকেও। আমাকে না মারলেই হল। বিধ্বস্ত চেহারার অভি আর তুষারের দিকে তাকিয়ে তিনজন একসাথে হেসে উঠলো।
#পদ্ম
#হাদী
#রকিব
============ 00 ========= 00 ============= 00 ==============
সালটা ২০১০ তখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। বাংলা পরীক্ষা ছিল।
" রিটেন লেখা শেষ। কিছুক্ষণ পরই নৈর্ব্যক্তিক দেওয়া হলো। ৪০ টা নৈর্ব্যক্তিক। সময়ও ৪০ মিনিট।
.
4 মিনিটে 4 টা নৈর্ব্যক্তিক পূরণ করলাম। 5 মিনিটের
মনে করে যেন পাশের এক বন্ধু নাদিমের আন্সার শীট-এর দিকে ঘাড় ঘুরিয়েছিলাম।
ঠিক তখনই ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আমাদের হলের বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব জানালা দিয়ে আমার ঘাড় ঘুরানো
দেখে ফেললেন! সঙ্গে সঙ্গে তিনি হনহন করে হলের ভিতর ঢুকে পড়লেন। এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। আস্তে করে আমার আন্সার শীট-টা হাতে নিলেন। তারপর সেটা নিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলেন। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার হাত-পা কাঁপাকাঁপি
হয়ে শুরু হয়ে গেছে। হলে তিনজন শিক্ষক গার্ড দিচ্ছিলেন।
তারা তিনজনই আমার অপরিচিত।
অন্যকোনো স্কুল এন্ড কলেজের হবে। কোন কলেজের জানি না। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব গার্ড তিন'জনকে হুংকার দিয়ে বললেন- 'খবরদার আমি না আসা
পর্যন্ত এই ছেলেকে শীট দিবেন না!' বলেই তিনি আগের
মত হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেলেন! আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। বুকের ভিতর ধুকপুক
করছে। অপেক্ষায় আছি ম্যাজিস্ট্রেট কখন আবার আসবে। কখন শীট পাবো।
সময় বেড়েই যাচ্ছে তরতর করে। ম্যাজিস্ট্রেট আর আসে না।
আমাকেও আর শীট দেওয়া হয় না। সময় যত বাড়ছে, সেই
সাথে বেড়ে চলছে আমার বুকের ধুকধুকানি! ২০ মিনিট পার হয়ে গেল। ম্যাজিস্ট্রেট এর আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।
দু'জন গার্ড এর মধ্যে একজন স্যার দরজা কিঞ্চিৎ সরিয়ে বাইরে উঁকি দিলেন,ম্যাজিস্ট্রেট আসছে কি-না দেখার জন্য। কারণ ততক্ষণে
৩০ মিনিট মিনিট পার হয়ে গেছে। উঁকি দিয়ে দেখলেন ওই এড়িয়ার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট এর কোনও চিহ্ন মাত্র নেই! আমার বুঝতে বাকি রইলো না, ম্যাজিস্ট্রেট আজ আর আসবেন না। ম্যাজিস্ট্রেট না আসলে আমাকে শীট-ও দেওয়া হবে না। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সত্যই আর আসেনি।
সামান্য ঘাড় ঘুরানোর শাস্তি যে এতটা ভয়াবহ হতে পারে, আমার জানা ছিল না। আমার হাতেরতালু ঘামছে। মাথায় ভনভন শব্দ হচ্ছে...
আর ৫ মিনিট পর ওয়ার্নিং বেল দিয়ে দিবে। আমি তখন
পুরোপুরি আশা ছেড়ে দিলাম। কারণ এই ৫ মিনিট থাকতে শীট দিলেও মাত্র ৫ মিনিটে ৩৫ টা নৈর্ব্যক্তিক আমি সঠিকভাবে পুরণ করতে পারবো না। ফলাফল, নৈর্ব্যক্তিক এ ফেইল আসবে। আর নৈর্ব্যক্তিক এ ফেইল আসা মানে পুরো সাবজেক্ট ফেইল। আর একটা সাবজেক্ট ফেইল মানে
এসএসসি পরীক্ষায় ফেইল! ফেইল করা হয়তো সাধারণ ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু সবাই যখন জানবে আমি বাংলার মত একটা সাবজেক্টে ফেইল করেছি, তখন আমি সবাইকে কি জবাব দিবো?
.
আমার ঠিক সেই মুহূর্তের অবস্থা আমি লিখে বা বলে
বর্ণনা করতে পারব না। নাদিম, সনেট , জাকারিয়া, ওরা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি খেয়াল করলাম আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে শুরু করেছে সাথে আমার বন্ধুদের চোখের পাতাগুলি ভেজা যাচ্ছে , আমি কাঁদছি। চাপা কান্না। কোনও শব্দ হচ্ছে না। তবে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চোখের পানি গাল গড়িয়ে সেদিন গায়ের শার্ট ভিজিয়ে গেছিল। কারণ ততক্ষণে ওয়ার্নিং বেল দিয়ে দিয়েছে।
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। ততক্ষনে রিপন আর নাদিম বের হয়ে গেল। আর সনেট ও জাকারিয়া বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমিও শেষেমেষ ডানে বামে তাকিয়েছি দেখলাম কোনও আশা নেই। তাই বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম....
.
ঠিক তখনই আমার,
পিঠে একজনের নরম হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম।
আমি মাথা তুলেতেই দেখি সেই স্যারটি! যিনি ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন কি-না দেখার জন্য বারবার দরজা ফাঁকা করে বাইরে উঁকি দিচ্ছিলেন। স্যারের হাতে আমার আন্সার শীট। স্যার আন্সার শীট-টা আমার হাতে দিলেন। তারপর নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র টা নিজের হাতে নিলেন। বললেন, 'তোমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় কে?' আমিও রিপন কে দেখিয়ে দিলাম। ও আমাদের হলেই ছিল। স্যার আমার নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র টা নিয়ে সাব্বিরের
কাছে গেলেন। ওর ততক্ষণে সবগুলো নৈর্ব্যক্তিক পূরণ
করা শেষ। কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
রিপনকে বললেন- 'দ্রুত এই নৈর্ব্যক্তিক গুলোর সঠিক উত্তর গুলোর উপর কলম দিয়ে একটা করে "ডট"দিয়ে দাও!!'... ও তাই করলো। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের সঠিক উত্তর গুলোর উপর একটা করে ডট দিয়ে দিলো। ২ মিনিটে। আর মাত্র ৩ মিনিট বাকি আছে। স্যার এবার প্রশ্নপত্রটি
আমার হাতে এনে দিলেন। তারপর বললেন- 'দ্রুত এই ডট চিহ্ন দেখে দেখে আন্সার শীট-এর বৃত্ত গুলো ভরাট করে
দাও'
.
আমি ধূমকেতুর গতিতে বৃত্ত ভরাট করা শুরু করলাম। সবগুলো ভরাট করতে ৬ মিনিটের মত লেগে গেল। ভরাট করে মাথা তুলে দেখি প্রায় সবার শীট জমা দেওয়া শেষ। পুরো হল-এ আমি একাই বসে আছি। আর ওই স্যারটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। সবার শেষে আমার শীট জমা নিলেন তিনি। আমি শীট জমা দিতে গিয়ে আবারও কেঁদে ফেললাম। এবার স্যার
আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই অচেনা ভদ্রলোকটির চোখেও পানি টলমল করছে।
একদমই অপরিচিত কোনো ছাত্রের জন্য কোনো শিক্ষক চোখের জল ফেললেন...!!
আমি তখনও স্বাভাবিক হতে পারছি না। হাত পা আমার তখনও কাঁপছে। আমি হল থেকে বের হয়ে এলাম চোখ মুছতে মুছতে। শুনতে পেলাম
স্যারের শেষ কথাটা- " ভালো থেকো সব সময় আর মন দিয়ে লেখাপড়া কর।
তখন আমি ফোন ব্যবহার করতাম না। মোবাইল নাম্বার রেখে দেওয়ার কোনো চিন্তাভাবনাও আমার মাথায় আসে নি। সেই সময় আমার শুধু এটাই মনে হচ্ছিলো, আমার সামনে কোনো মানুষ রূপে ফেরেস্তা দাঁড়িয়ে আছে।
এরকম ফেরেস্তা
পৃথিবীতে একশ' বছরে একজন জন্মায়। পরের পরীক্ষায় সারা সেন্টারে আমি সেই স্যারকে তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, পেলাম না তাহার দেখা।
আজও পাই নি। তার নাম কি, জানি না। কোন কলেজের শিক্ষক, তাও জানি না। জানি না সে কোথায় থাকে। মানুষটা এখন কোথায় আছে,
কেমন আছে, জানি না কিছুই।
.
এখনও এসএসসি পরীক্ষার সময় আমি আমাদের এলাকার
প্রতিটা সেন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কোনও একদিন সেই মানুষরূপী ফেরেস্তাটার সাথে দেখা হয়ে যাবে, সেই আশাই। যদি আবার কোনোদিন আমাদের একটিবার দেখা হতো। আমার চেয়ে খুশি বোধ করি এই পৃথিবীতে আর কেউ হতো না। আমি আর একটাবার আপনাকে জড়িয়ে ধরতাম। আগের বারের চেয়ে শক্ত করে। আর বলতাম, আমি ভালো আছি স্যার....
অনেক ভালো আছি। আমার আজকের এই
ভালো থাকার দুর্গম পথটা যে সুগম করিয়ে দিয়েছিলেন আপনিই।
আপনার ঐ মহত্ কাজটা আমার হৃদয়ে স্পর্শ করেছে আর তাই পরবতীর্কালে সাহায্য করেছে.... স্যার আজ আমি ম্যাজিস্ট্রেট...
আজ এই কৃতিত্ব আপনার পায়ে উৎসর্গ করলাম। প্রতিবারের মতোই আমি সেই কলেজটাতে যায় আপনার খুঁজে কিন্তু ভাগ্য যে আমাকে দিচ্ছে না ধরা আপনার কাছে আজও.....!