গল্পঃস্বামী | লেখকঃ পারভেজ ইসলাম | Giving My Fiance A Brazilian Wax..| MY BOYFRIEND GIVES ME A BRAZILIAN WAX!!



গল্পঃস্বামী
পর্বঃ১
লেখকঃপারভেজ_ইসলাম
(ভালো লাগলে বলবেন)

করূণ চাহনীতে সোফায় বসে থাকা দুইজন ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে তাদের প্রেমলীলা দেখেই যাচ্ছি।দুইজন ব্যক্তির একজন হলেন আমার স্বামী রাইহান চৌধুরী আর অন্য একজন হলেন আমার স্বামীর অফিসের বস হৃদিতা তাসমিন।হৃদিতা আমার স্বামীর বুকের উপর শুয়ে তাকে কিছু বলে চলেছে।আর রাইহান হৃদিতার বাহু ধরে গভীর মনেযোগে তার কথা শুনছে।আমি নামের এক প্রাণী যে তাদের সামনে তাদের প্রেমলীলা দেখছি দুইজনে খুব ভালো করেই জানে।তাও তাদের আমার উপস্থিতি নিয়ে কোনোরকম মাথাব্যথা নেই।কারণ একটু আগেই আমি ডিভোর্স পেপারসে সাইন করে রাইহানকে চিরদিনের জন্য মুক্ত করে দিয়েছি।রাইহান হেসে হেসে হৃদিতার কথা শুনতে শুনতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

রাইহানঃতুমি এখনো আমার বাসায় দাঁড়িয়ে আছো?এখনি নিজের সবকিছু নেও নিয়ে বেরিয়ে যাও।
আমিঃ......

রাইহানঃকিহ হলো আমি কিছু বলেছি শুনতে পাওনি জান্নাত?
"জান্নাত" ৭ বছরের পরিচয়ে প্রথম রাইহানের মুখ থেকে নিজের সম্পূর্ণ নাম শুনলাম।কাল অবধি সে আমাকে জান বলেই ডেকেছে।কিন্তু আজকে আমি এক দিনের ব্যবধানেই অন্য সবার মতো তার কাছেও জান্নাত।আমি কাঁদতে কাঁদতে তাকে বললাম,
আমিঃআমি চাইতেও আমার সব নিতে পারব না রাইহান।আমার সব কিছু যে তুমিই।আর সেই তুমিই যে আজ অন্যকারো।

রাইহান বিরক্তি মাখা চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললঃএসব সিনেমার ডায়ালগ আমার সামনে বলে কোনো লাভ নেই।তোমার উপর থেকে মন অনেক আগেই উঠে গেছে।এখন সবই শুধু হৃদিতা।

কথাটুকু বলেই হৃদিতার মুখের উপরে থাকা চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিয়ে হৃদিতার নাকের সাথে নিজের নাকটা ঘষে নিলো।

আমি আর কিছু বললাম না।নিজের চোঁখ মুছে আমার রুম না এখন আর আমার রুম বলে সম্বন্ধোন করা চলে না।হৃদিতা আর রাইরানের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।রুমে ঢুকতেই চোঁখ পড়ল দেয়ালে টাঙানো আমার আর রায়হানের ছবিটার দিকে।প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে রাইহানের থেকে উপহার পেয়েছিলাম।এখন সবই শুধুমাত্র স্মৃতি।

রাইহানের সাথে পরিচয় হয়েছিল বাসের মধ্যে।দুইজনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ার খাতিরে বাসেই যাতায়াত করতাম।বাসের মধ্যে এক লোক বেয়াদবি করলে আমিও প্রতিবাদ করি।কিন্তু সেই লোক উলটো আমাকে কথা শুনাতে শুরু করে।বাসের মধ্যে কেউ আমার হয়ে সেই লোককে কিছু বলে না।আমিও সেই লোককে কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছিলাম।কিন্তু হঠাৎ করে দেখি একজন আমার সামনে এসে আমার ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।সেই অসভ্য লোকটার কলার ধরে অনেক বকুনি দিয়েছিল। তাকে বলেছিল"যখন কোনো নারীকে দেখে মনে অসভ্যতামি জন্ম নেবে তখন সেই মনকে বলবি আল্লাহ চাইলে তুইও কিন্তু সেই নারীর গর্ভ থেকেই দুনিয়ায় আসতিছ"কথাটুকু বলেই লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেই।প্রথম দিন তাকে ভাইয়া বলেই ডেকেছিলাম।

এরই পর থেকে রোজ বাসে দেখা হতো।প্রায় দিন তার পাশে বসতাম,আবার প্রায় দিন সে উঠে আমাকে বসার জায়গা করে দিতো।একসাথে যাতায়াত করতে করতেই প্রথমে ভালোলাগা তারপরে ভালোবাসা।

এসব ভাবতে ভাবতেই আলমাড়ি খুললাম।খুলতেই চোঁখ আটকে গেল বিয়ের শাড়িটার দেখে। একটা সবুজ রঙের সুতির শাড়ি। আসলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। আমার আব্বু মেনে নেননি আমাদের সম্পর্ক। অনেক বড় এক ঘরের ছেলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।তার সাথেই ঠিক হয়েছিল বিয়েটা।লোকটাকে একবারই দেখেছিলাম। সে নাকি আমাকে একদিন রাস্তায় দেখে।তারপর প্রস্তাব পাঠায়।

কিন্তু আমরা দুইজন জানতাম পরস্পরকে ছাড়া সুখী থাকা অসম্ভব। তাই তো পালিয়ে আসি বিয়ের আগের দিন রাতে।প্রথম প্রথম খুব কষ্টে দিননিপাত করেছি। আমি আর রাইহান মিলে টিউশনি করেছি সংসার চালিয়েছি।তখন আমাদের টাকা না থাকলেও দুইজনের জন্য দুইজনের মনে অনেক ভালোবাসা ছিল।কিন্তু আজ রাইহানের কাছে টাকা থাকলেও ভালোবাসাটা আছে শুধু আমার একার মনেই রয়ে গেছে।আম্মু আব্বু আর আমাকে মেনে নেননি।বিয়ের এই ৩ বছরে একবারের জন্যও আব্বু আম্মুর মুখ দেখা তো দূরে থাক কণ্ঠ পর্যন্ত শুনতে পায়নি।আম্মু আব্বু কার এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছেন ৪ মাস।তাদেরকে শেষ দেখা দেখিনি আমি।খুব কেদেছিলাম সেই দিন রাইহানকে জড়িয়ে ধরে।রাইহান আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেছিলঃপ্লিজ এইভাবে কেদো না জান।তুমি জানো না তুমি কাদলে আমার খুব কষ্ট হয়।আমি তো আছি তোমার সাথে এই যে তোমাকে জড়িয়ে ধরে।

আমিঃতুমিও যদি ছেড়ে চলে যাও তখন?
রাইহানঃতোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব কল্পনাতেও আনতে পারিনা।
আজকেও এই আমি কাদছি তাও রাইহানের সামনে,রাইহানেরি জন্যে।কিন্তু রাইহানের কাছে আমার চোঁখের পানির আর কোনো মূল্য নেই।আমার এই কান্না মাখা চাহনি এখন আর তার হৃদয়ে আঘাত হানে না।বেশ কয়েকদিন ধরেই তার অবহেলা নজর কেড়েছিল আমার।ভেবেছিলাম অফিসের কাজে ব্যস্ততার জন্য।

কিন্তু আজ সকালে তার অফিসে গিয়ে অজন্তেই তার কেবিনে ঢুকে পরি সারপ্রাইজ দিতে।কিন্তু কে জানত তাকে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাবো।হুম রাইহান চেয়ারে আর তার বস তার কোলে বসে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে দুইজনে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ।হঠাৎ করে রাইহানের চোঁখ পড়ে আমার উপর।আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে এবার হৃদিতাও ঘুরে আমার দিকে তাকায়।আমাকে দেখেও সে রাইহানের কোলে বসে থাকে।আসলে আমার স্বামী মাশাল্লাহ যেকোনো রমণীই তার প্রেমে প্রথম দেখাতেই পড়ে যেতে পারে।আমি আর কিছু না বলেই কাঁদতে কাঁদতে চলে আছি।

ড্রয়ংরুমের সোফায় বসেছিলাম।ভেবেছিলাম রায়হান এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে"ভুল করে ফেলেছি।অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি প্লিজ মাফ করে দেও।শেষবারের মতো মাফ করে দেও।আমিও আমার মনকে রাইহানকে মাফ করার জন্য মানিয়ে নিয়েছিলাম।একটু পরেই কলিংবেল এর শব্দ পেতেই গেটের দিকে ছুটে যাই।গেট খুলতেই দেখি রাইহান।তার পাশেই দাঁড়িয়ে হৃদিতা।হৃদিতার পাশে দেখি তার ট্রলি ব্যাগ।রাইহান আমাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই ভিতরে চলে যাই।পিছন পিছন হৃদিতা সবার শেষে আমি গেট লাগিয়ে এসে দাঁড়ায় দুইজনের সামনে।আমি যেতেই রাইহান আমার সামনে একটা কাগজ রাখে।আমি গিয়ে কাগজটা উঠাতেই দেখি ডিভোর্স পেপার।রাইহানের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই বলে,
রাইহানঃসাইন করে দেও।

আমিঃরাইহান তোমার কিহ মাথা ঠিক আছে?কি বলছো কি তুমি?ডিভোর্স পেপারস।
রাইহানঃতুমি বাচ্চা না।সব বুঝো।আজকে অফিসে আমাদের দেখার পর আশা করি বুঝেছো।তুমি জানো খুব ভালো করেই জানো আমি যা বলার সরাসরি বলি।আমি তোমার থেকে ডিভোর্স চাই।

আমিঃকিন্তু হঠাৎ করে।কালকেও তো সব ঠিক ছিল।সকালেও যাওয়ার সময় বললে রাতে জলদি ফিরে আসবে এখন?
রাইহানঃএতো কথা না বাড়িয়ে সাইনটা করে দেও।
আমিঃকারণ না বললে আমি সাইন করবনা রাইহান।
রাইহানঃতাহলে শোনো এখন আমার আর ভালো লাগে না তোমাকে।বোর হয়ে গেছি তোমার সাথে থাকতে থাকতে।স্মার্টনেস বলতে কিছু নেই তোমার মধ্যে।তোমাকে নিয়ে যখন লোকজনের সামনে যাই লজ্জা লাগে আমার।

আমিঃকিন্তু রাইহান আমি তো এমনি।আর এইজন্যই তো তোমার আমাকে এতো পছন্দ।
রাইহানঃতখন ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল।আমি তখন সামান্য ইমপ্লই ছিলাম আর এখন আমি এতো বড় অফিসে কাজ করি।তোমার মতো আনস্মার্ট,মিডিলক্লাশ ফ্যামিলির মেয়ের সাথে কোথাও গেলে আমার নাক কাটা যাই।শুনেছো আমার নাক কাটা যাই।
আমিঃতুমি এই সামান্য কারণে আমাকে ডিভোর্স দিবে?
রাইহানঃকারণটা তোমার কাছে সামান্য হলেও আমার কাছে সামান্য নয়।আর তাছাড়াও আই ডিজার্ভ সামওয়ান লাইক হৃদিতা।সো সাইন করে দেও।আর ডিভোর্স এর সব ফর্মালিটি পূরোণ করে দেবো আমি।টাকাও দিয়ে দেবো।

আমি আর কথা নাহ বলে সাইন করে দিলাম।এর পরেই সব ঘটনা উপরেই বলেছি।
নিজের বলতে যা ছিলো সবই হৃদিতাকে দিয়ে দিয়েছি।এখন আর নিজের বলতে কিছুই নেই।আমি একটু একটু করে পরম যত্নে সাজিয়েছিলাম এই সংসারটাকে।কিন্তু এই এক হৃদিতা নামের ঝড়ের কোবলে পড়ে সাজানো গোছানো সংসারটা ধ্বংস হয়ে গেল।আলমারির ড্রয়ার খুলে প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্টটা ব্যাগে ভরে নিলাম।আমি প্রেগন্যান্ট জেনেছি সপ্তাহ খানেক আগে।রাইহানের ব্যস্ততা আর অবহেলা সামলাতে গিয়ে বলার সময় হয়ে উঠেনি।এখন চাই না রাইহান আর জানুক।নিজের কয়েকজোড়া কাপড় নিতে নিতেই আওয়াজ পেলাম রাইহান বলছেঃআর কতোক্ষন।প্লিজ একটু জলদি করো।আমি আর হৃদিতা একান্তে কিছু সময় কাটাতে চাই।

আমি আবার জোরে জোরে কেদে দিলেও নিজেকে সামলে নিলাম।ভাবতেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠছে যার জন্য একদিন সবছেড়ে এসেছিলাম,,আজকে তার জন্যই সব ছেড়ে চলে যাচ্ছি।এটাই আমার ভাগ্য।

রুম থেকে বের হতেই দেখি দুইজনে টি টেবিলের উপর পা তুলে বসে আছে।হৃদিতা আপেল খাচ্ছে আর রাইহান টিভির চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।আমি তাদেরকে কিছু বললাম না চুপচাপ চলে আসলাম।

কাঠফাঁটা রোদের মধ্যে ফুটপাত দিয়ে হাটছি।অন্যদিনের তুলনায় আজকে গরমটা অনেক বেশি।বেসামাল গরম আজকে।সহ্য হচ্ছে না।তাও হাটছি।কোথায় যাবো জানি না।পরিচিত বলতে এই পৃথিবীতে কেউ নেই।রাইহান এতিম।তাই শ্বশুরবাড়ি বলতে কোনো বাড়ি আমার জন্যে নেই।আল্লাহ রিজিকের মালিক।আর হাটতে পারছি নাহ।হঠাৎ করে মাথার মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন ঘটেছে।মাথা ঘুরছে প্রচুর।আর কিছু বুঝতে পারলাম না।

=️================== 0 0 0 0 ==================

অনুভবে_তুমি
লেখক_আশিক_খান
পর্ব_০১

বাচ্চা ন*ষ্ট করার ১ মাস পর আজ রিয়াকে দেখতে আসছে ছেলেপক্ষ। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে পরখ করছে রিয়া। জ্বানালা দিয়ে হালকা ঝোড়ো হাওয়া রিয়ার শাড়ির আচঁলটা নিচে ফেলে দিল।
!
!
!
ফর্সা চেহারার পেটের দিকটাই ফুটে উঠল সেলাই এর অস্পষ্ট দাগগুলো। দাগগুলোর মাঝে নিজের হাত বুলিয়ে রিয়া ভাবতে লাগল সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা ।
ইন্টার এক্সাম শেষ। সাড়া দিন ফোনে হেডফোন দিয়ে গান শোনা ছাড়া আর কোন কাজ নেই রিয়ার। একদিন সন্ধ্যার পর আম্মু বাসা থেকে খালাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যাওয়ার পরই আশিক কে কল দিল রিয়া। কিছুসময় ধরে মিষ্টি কথোপকথন এর পর রিয়া আশিকে বাসাই আসতে বলল।
"
"
"
রিয়ার কথা শুনে আকাশ পুরোপুরি আত্নহারা হয়ে উঠল । কোনরকম শার্ট গায়ে দিয়ে ছুটে চলল রিয়ার কাছে । কিছুসময় পর আশিক নিজের গন্তব্যে উপস্থিত হইল।
রুমের ভেতরে প্রবেশ করে রিয়াকে একটানে নিজের কাছে টেনে নিল। প্রথমে কিছুটা সংকোচ বোধ করেছিল রিয়া। পরে ভেবে দেখল আর কিছুদিন পরই তো আমি আশিকের এর সাথে পালিয়ে যাব। ভালোবাসা প্রমান এর জন্য রিয়া আজ নিজেকে বিলিয়ে দিল আশিকের কাছে।
নিজের কার্য শেষ করে আশিক চলে গেল। যাওয়ার পরই রিয়ার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আছে ।
-আমার ফোন চার্জ নাই ফোন বন্ধ পেলে তুমি কিছু মনে কর না । কাল কথা হবে।
শুধু এত টুকুই লিখা ছিল। সেইদিনের ম্যাসেজ পর আর আশিকের আর কোন খোঁজ নেই । অধীর আগ্রহে সারাদিন মোবাইলের পাশে বসে থাকে রিয়া।পরীক্ষা শেষ তাই কোচিং এর নাম করে বাসা থেকেও বের হতে পারছে না রিয়া ।
এইভাবে আর কতদিন ২০ দিন পরও যখন আশিকের কোন দেখা মিলল না। রিয়া তার আসল রুপ দেখতে পারল। দেহের টান ছিলো ওর মুখ্য উদ্দেশ্য। রেজাল্ট এর দিন ও ঘনিয়ে এলো ।
ওই দিন বাসা থেকে বেড়নোর সুযোগ হলো রিয়ার। আশিকের খোঁজে যাই ওদের এলাকাই কিন্তু এই নামে এখানে কেউ থাকে না। এক এক করে ওর সব বন্ধুদের কাছে গিয়ে খোঁজ নিয়ে রিয়া জানতে পারল। আশিক একটা বখাটে ছেলে বাবা-মা মারা গেছে অনেক আগে । এখন মামাদের কাছে থাকে হয়ত।
""
""
""
""
ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাস্তার কোন দিয়ে হেঁটে চলছে রিয়া। আশিকের চিন্তায় আজ যে রেজাল্ট দিবে সেটাও ভুলে গেছিলো সে। বাসাই পা দিতে না দিতেই আপু দৌড়ে এসে বলল
-কিরে কোথাই ছিলি এতোক্ষন ? তুই A+পেয়েছিস ।
আপুর কথার উত্তর না দিয়ে সোজা বাথরুমে গিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার শেষে বালিশ এ মাথা রেখে চুল শুকাচ্ছে রিয়া। একটু পর রুমে রিয়ার আব্বু এসে বলল,
-কিরে মা ! কি হয়েছে তোর? রেজাল্ট ভালো অথচ তুই ঘরে মন খারাপ করে বসে আছিস ।
-কই বাবা কিছু হয়নি তো ।
-তাহলে আমি যা বলল সেটা শুনবি তো ।
-হুম বলো ।  

-ঈদের পর আমি তোর সাথে আমার বন্ধুর ছেলের বিয়ে দিতে চাই । তুই প্লিজ না করিস না ?
-নিজের বুকের ভিতর হাজার কষ্ট রেখে মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো রিয়া ।
রিয়া ভেবেছিল হয়ত আর কোন সমস্যা হবে না। তার ধারনা সম্পূর্ন পাল্টে গেল । ১ মাস পর নিশু খেয়াল করল এই মাসে তার পিরিয়ড হয়নি। বুকের হার্টবির্ট বাড়তে থাকল রিয়ার। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না ? কথাটি গোপন রেখে দিন পার করছিল রিয়া। ৪ মাস পর মাঝে মধ্যে রিয়া খাওয়ার পর বমি করে । আপুর কাছে সব কিছু খুলে বলল রিয়া। পরের দিন ডাক্তার এর কাছে গিয়ে জানতে পারল রিয়া প্রেগন্যান্ট। লোক লজ্জার ভয়ে তাই বাধ্য হয়ে রিয়া এক সপ্তাহ পর বাচ্চা নষ্ট করে দেয় ।

কলিং বেল এর শব্দে নিজের কল্পনা জগৎ ছেড়ে বাস্তবে ফিরল রিয়া। এইসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল রিয়ার। যে ছেলেটি আসবে তার নাম রহান। একটা কোম্পানিতে জব করে। আজ যদি রিয়াকে দেখে পছন্দ হয় তাহলে আজই ওদের কাবিন নামা ।

এই ভেবে শাড়ির আঁচলটা উঠিয়ে রিয়া নিজেকে পরিপাটি করে তুলল। কিছুক্ষন পর রিয়া ছেলেপক্ষের সামনে উপস্থিত হলো। সবাই রিয়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেল। রিয়া যা মনে মনে ভাবছিল ঠিক তাই ।

আজই ওদের কাবিন নামা। অবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ন হলো । নববধুর স্বাজে সজ্জিত হয়ে খাটের মাঝে বসে আছে রিয়া। আর একটু পর হয়ত তার স্বামী ভেতরে প্রবেশ আসবে। চারিদিক থেকে ফুলের সুবাস নাকে আসছে রিয়ার।একটু পর কারও আসার শব্দে রিয়া নড়ে চড়ে বসল ।

চলবে________
=========== 00 =============== 00  =============

মাতৃত্ব(১) , মাতৃত্ব (২)
রিমঝিম রিনি

আমি কখনো মা হতে পারবোনা। তা জেনেও আমাকে বিয়ে করলেন কেন?
বাসর রাতে এমন একটা প্রশ্নের আশা হয়তো করেনি আমার বর।তারপরেও আমি তার উত্তরের আশায় আছি।জেনে শুনে কেন সে আমাকে বিয়ে করলো আমাকে জানতেই হবে।সে আমার দিকে না তাকিয়েই শেরোয়ানি খুলতে খুলতে উত্তর দিলো।

: কারন ....আমি বাবা হতে চাইনা।আমি চাইনা নতুন করে কোন বন্ধনে জড়াতে।মায়ের কথা রাখতেই বিয়েটা আমি করেছি।মায়ের এই বাড়ির বৌ প্রয়োজন আর তোমার একটা স্থায়ী ঠিকানা।সো যে যার প্রয়োজন মেটাও। নিজের মত থাকো।অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পরো
: আর আপনি...?

: তোমাকে একটা কথা বলছি ভালোকরে মাথায় বসিয়ে নাও।তুমি শুধু এই বাড়ির বৌ।আমার স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করোনা।আমার কোন বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে।শুয়ে পরো...
মানুষটা একটি বার আমার দিকে তাকালোওনা।শেরোয়ানি টা খুলে সোফার উপর ছুরে ফেলে একটা টিশার্ট হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।তার যাওয়ার পথে চেয়ে আছি।তার এমন আচরনের কারন না জানলেও এটা জেনে গেছি তার এই যাওয়ার পথ ধরেই আমার জিবনে নতুন কোন ঝড় আসতে চলেছে।

সমবয়সী বান্ধবী / বোনেদের কাছে তাদের বাসর রাতের অনেক গল্প শুনেছি কখনো ভাবিনি নিজের বাসরের গল্পটা এমন হবে।যা কাউকে শোনানো যাবেনা।
বেচে থাকাটা যে এতো কঠিন তা মা বেচে থাকতে বুজিনি।মা চলে যেতেই সমাজ হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে বেচে থাকাটা কত কঠিন।এইস এস সি পরিক্ষার পরপর মা এক ভোরে জেগে না উঠায় মাকে ডাকতে গিয়ে গায়ে হাত দিতেই আমার সারা শরীর শিতল হয়ে গেলো।মা নেই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিলামনা।

আর বাবা.... সেতো বরাবরই সংসারের প্রতি উদাসীন। পাশের মানুষটা ঘুমের ঘরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলো অথচ লোকটা বুজতেও পারলোনা।সংসারের হাল ধরার অযুহাতে আমার সব আত্মীয় স্বজন মিলে বাবার বিয়ে দিলেন তাও মায়ের মৃত্যুর চল্লিশ দিন না যেতেই।
যদিও আমি তখন যথেষ্ট বড় সব বুজার জন্য তাও মাকে ছাড়া যেন চারদিক অন্ধকার হয়ে যেত।আর সকলের মত আমার বাবার বিয়ে করা বউ বাবার স্ত্রী হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমার মা হতে তার কোন ইচ্ছা নেই।

উনি আসার মাস খানেকের মধ্যেই আমার বিয়ে নিয়ে খুব তোরজোড় করতে লাগলো।কয়েকটা ঘটককেও বলে রেখেছে পাত্র দেখতে। একদিন সকালে এসে বললো আমার মায়ের কোন জিনিস যদি আমার প্রয়োজন হয় তবে তা রাখতে বাকিসব উনি দান করে দিবেন মৃত মানুষের কিছু রেখে উনি সংসারে অকল্যাণ আনতে চাননা। মায়ের আলমারি খুলে যদিও তেমন কিছুই পাইনি।হয়তো মায়ের শাড়ি গয়না দান করার মত সৎ সাহস উনার হয়ে উঠেনি।মায়ের প্রতিটা জিনিসে এখনো যেন মায়ের গন্ধ লেগে আছে।কি রাখবো কি রাখবোনা ভেবে পাচ্ছিলামনা।যেসকল জিনিসে মায়ের হাতের ছোয়া বেশি লেগে আছে তেমন কিছু জিনিস নিজের কাছে রাখলাম।

ইতিমধ্যে কয়েকদফা পাত্র পক্ষ এসে দেখে গেছে আমাকে।মোটামোটি বিয়ে প্রায় ঠিকই করে ফেলেছে আমার বাবার স্ত্রী ।বাবাকে বলেও কোন লাভ হবেনা।তাই যা হচ্ছে তা ভাগ্য মনে করে চুপচাপ মেনে নিচ্ছি।এই বাড়িতে আমার স্থান হবেনা সেটা বুজতে পারছি।আর কিছু না হোক অন্তত সাথে করে মায়ের কিছু স্মৃতি সাথে নিতে চাই।মায়ের জিনিস গোছাতে গিয়ে হঠাৎ একটা ফাইল চোখে পরলো খুলে দেখলাম আমার নাম লেখা।

আর ডাক্তারের নামটাও পরিচিত।তখনি মনে পরলো মা নিয়ে গেছিলো আমাকে উনার কাছে পেট ব্যাথার জন্য।কিন্তু এসব রিপোর্টের কথাতো মা বলেনি।আর সেদিনের পর থেকে মা কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলো।কি যেন ভাবতো লুকিয়ে কাদতো।মনে একটা কৌতুহল নাড়া দিলো।ফোন করে ডাক্তারের কাছে গেলাম রিপোর্ট গুলো নিয়ে।আমার সিরিয়াল আসলে ভেতরে ডাকলো। ডাক্তারের সামনে বসে আছি।উনি জিগ্যেস করলেন কি সমস্যা। ফাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললাম

: এটায় আমার নাম লেখা। আমি জানতে চাই এটা কিসের রিপোর্ট?
: এটাতো অনেক আগের রিপোর্ট।এতোদিন পর আসছো রিপোর্ট দেখাতে?
: আমি জানতামনা এটার সম্পর্কে। আসলে মা.....
: ও.... মনে পরেছে।তোমার মা এসেছিলো রিপোর্ট নিয়ে।তোমার মা তোমাকে কিছু বলেনি?
: না। কি হয়েছে ডাক্তার?
:তোমার কখনো পিরিয়ড হয়েছিল?
:ইয়ে মানে না।

: তো তোমার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক লাগেনি?
: লেগেছে। কিন্তু মা বললো কারো কারো দেরিতে হয়।
: বুজেছি তোমার মা তোমাকে কিছুই বলেনি।আসলে আমি অনেক দুক্ষিত তোমাকে বেপার গুলি বলতে হচ্ছে।তবে তোমার নিজের বেপারে ক্লিয়ার থাকা উচিৎ।
:আমি কিছুই বলতে পারছিনা।ডাক্তার মাকে কি বলেছে বা আমার কি হয়েছে কিছুই বুজতে পারছিনা।ডাক্তার মলীন মুখে বললেন

: আসলে তুমি কখনো মা হতে পারবেনা।ডাক্তারের মুখে কথাটা শুনে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেলো।চোখ থেকে আপনাআপনি পানি পরছে।
ডাক্তার সান্তনা দিয়ে বললেন

: প্লিস শক্ত হও।এটা কোন রোগ নয় বা লজ্জার ও নয়।তোমার জন্ম থেকেই জরায়ু নেই।এটা অনেকের হয়।আল্লাহ পাক সবাইকেই কিছু থেকে বঞ্চিত করেন তবে তার একশত গুন অন্যভাবে দেন।তোমার জরায়ু জন্মগত ভাবেই তৈরী হয়নি।একে মেডিকেল এর ভাষায় বলে, মুলারিয়ান এজেনেসিস।এই কারনে তোমার পিরিয়ড হয়নি।আর এটা তো চোখ বা কিডনির মতন অর্গান নয়।প্রতিস্থাপন করা যায় তবে তা খুব ব্যয়বহুল।আর বাংলাদেশ এ পসিবল ও নয়।

দেখ এখানে তো তোমার দোষ নেই তাইনা।আসলে শিশু মেয়ে ভ্রুন অবস্থায় মুরারিয়ান ডাক্ট থেকে জরায়ু, ফেলোপিয়ান টিউব, এবং যোনী তৈরী হয়।কোন কারনে তা তৈরী হয়না বা ডেভলপ হয়না।তাই জরায়ুর কার্যক্ষমতা হারায়।একে প্রাইমারী এমোনিয়া ডিউ টু মুলারিয়ান এজেনেসেস বলে।

আজকাল বাচ্চা এডপ্ট নেয়া যায়, টেষ্টটিউব বেবি নেয়।কত উপায় আছে সেখানে এত হতাশার কিছু নেই।বিয়ে মানেই তো বাচ্চা জন্ম দেয়া না তাইনা।
দেখো পুরুষ এর ও শারীরিক অক্ষমথা যেমন আছে তার ও চিকিৎসা আছে তেমনি এর ও চিকিৎসা আছে।

ডাক্তারের কোন কথাই আমার কানে যাচ্ছেনা। আমার বুক ফেটে কান্না আসছে।সারাজিবন শুনেছি নারী তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন সে মা হয়।তবেকি আমি এক অপূর্ণ নারী হয়ে থাকবো?মুহুর্তেই চোখের সামনে সব স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে যেতে দেখছিলাম।
ডাক্তার উঠে এসে আমার কাধে হাত রেখে বললো

: এতো ভেঙ্গে পরোনা।তোমার সামনে এখনো পুরো জিবন পরে আছে।সব মানুষেরই কোন না কোন অক্ষমতা থাকে।তারমানে এই নয় যে জিবন থেমে যাবে।মা হওয়াটাই একজন নারীর জন্য সব না।একজন নারী প্রথমে মা হয় তার মনে।মনে যদি মাতৃত্ব থাকে তাহলে দেখো যেকোন একটা উপায়ে তুমি ঠিকই মা হতে পারবে।নিজেকে শক্ত করো।


ডাক্তারের কথার কোন উত্তর দিতে পারিনি শুধু তাকে জরিয়ে ধরে খুব কেদেছিলাম।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে হাটা ধরলাম।মায়ের বলা কথাগুলো বারবার কানে বাজচ্ছে।তখন মায়ের কথাগুলো বলার কারন খুজে না পেলেও আজ পাচ্ছি।মা প্রায় আমাকে বুজাতো

দেখ মনি... একটা মেয়েকে জিবনে অনেককিছু সহ্য করতে হয়।সব মানুষের মাঝে সব গুন একসাথে থাকেনা।আমাদের সবাইকে আল্লাহ রব্বুল আলামীন কোন কোন দুর্বলতা দিয়েছে।আবার সেই দুর্বলতা দুর করার জন্য অন্য কোন ক্ষমতাও দিয়েছে।কোন একটা দুর্বলতার জন্য নিজেকে কখনো ছোট মনে করবিনা।আল্লাহ আমাদের সৃষ্টির শ্রেষ্ট জিব বানিয়েছেন। আমাদের বিবেক বুদ্ধি ধৈর্য শক্তি দান করেছেন।সেসব কাজে লাগিয়ে নিজের দুর্বলতাকে দুর করতে হবে।যেকোন পরিস্থিতে হোক সেটা কঠিন বা সহজ সবসময় ধৈর্য ধারন করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে তা মোকাবিলা করবি।

বাড়িতে এসে দেখি পাত্রপক্ষ বিয়ের সব জিনিস নিয়ে এসেছে পরশু আমার বিয়ে।কিন্তু এতোবড় একটা কথা না জানিয়ে কিকরে বিয়ে করবো।কি করবো ভেবে পাচ্ছিলামনা।নিজের অক্ষমতার কথা লজ্জায় বলতেও পারছিলামনা।আমাদের সমাজে যাই ঘটুক লজ্জাটা কেবল নারীর হোক সেটা বিয়ে ভাঙ্গা কিংবা ধর্ষণ অথবা মা না হতে পারা সবকিছুর লজ্জার বোঝাটা নারীকেই নিতে হয়।

যতযাই হোক কাওকে অন্ধকারে রেখে নিজের জিবনের নতুন অধ্যায় শুরু করা আমার দ্বারা অসম্ভব। অনেক কষ্টে হবু বরের ফোন নাম্বার যোগার করে বাইরে গিয়ে ফোনের দোকান থেকে কল করে সবটা তাকে জানালাম।মিথ্যা দিয়ে শুরু কোন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কখনো ভালো হতে পারেনা।

পরদিন গায়ে হলুদ লাগার আগেই পাত্রপক্ষ এসে বিয়ে ভেঙ্গে দিলো।তবে একটা উপকার করেছে ভদ্রলোক বিয়ে ভাঙ্গার সঠিক কারনটা আমার বাড়ির কাউকে বলেনি।
বিয়ের জন্য দেয়া শাড়ি গয়না ফেরত যাওয়ায় আমার বাবার স্ত্রী আমাকে অপয়া অলক্ষীর উপাধিতে ভূষিত করে অনেক ভালো ভালো কিছু কথা বলে গেলেন।

তারপরে আরো অনেক বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কিন্তু আমার অক্ষমতা জেনে কেউ বিয়ের জন্য আগায়নি।হয়তো সবার বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্যই বৌ চাই। বংশের প্রদিপ বলে কথা।
মা যাওয়ার পর প্রথম বাবার সাথে কথা বললাম।যেহেতু বিয়ে হচ্ছেইনা আর ভর্তিরও সময় আছে তাই অনেক বুজিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম।পরাশোনায় নিজেকে যতটা সম্ভব ব্যস্ত রাখতাম যাতে এসব কথা মনে না পরে।তার পরেও দিন শেষে নিজের মনের কাছে ধরা দিতেই হতো।মাকে খুব মনে পরতো।

হঠাৎ এক সকালে বাবার স্ত্রী তারাতারি উঠে তৈরী হতে বললেন ।বুজতে পারছিলাম তার অতি উৎসাহের কারনটা।সাধারন একটা জামা পরেই বসার ঘরে গেলাম।একজন মহিলা বসে আছে সাথে একটা ছেলে এক নজর তাকিয়ে বুজতে পারছিলাম সে পাত্র।
ভদ্রমহিলা আমাকে তার পাশে বসিয়ে কথা বলছেন।কিন্তু অবাক হলাম তার কথা শুনে বিগত দিনে আসা পাত্রপক্ষের মত উনি তেমন কোন প্রশ্ন করলেননা।আমার পছন্দ শখ এসব জানতে চাইলেন।এমনকি চুল হাত পা হাটা কিছুই দেখতে চাইলোনা।

পাত্রের সাথে আলাদা করে কথা বলতে আমাদের বারান্দায় পাঠালো আমার ছোট ভাইকে দিয়ে।মা যাই হোক পিতাতো একজনই আর ভাইটা আমাকে অনেক ভালোবাসে।।লোকটার সামনে বসে আছি লোকটা একবারো চোখতুলে তাকায়নি কিছু বলাতো দুর।কথা না বাড়িয়ে নিজেই নিজের অক্ষমতার কথা তাকে জানালাম।কথাটা শুনে লোকটা একবার আমার দিকে তাকিয়ে উঠে বসার ঘরে চলে এলো।বুজতে বাকি রইলোনা ইনিও স্বামী হতে চাননা বাবা হতে চান।ফলাফল জানাই ছিলো তাই উঠে আর নতুন কোন উপাধি পেতে এগিয়ে যাইনি।
অবাক লাগছে সন্ধা হয়ে গেছে এখনো সবকিছু এতো শান্ত কেনো।এই শান্ত পরিবেশটা বড় কোন ঝড়ের আভাস নয়তো? ?

রাতে খাবার টেবিলে অবাক করে দিয়ে বাবা বললো সকালে যারা এসেছিলো তারা বিয়েতে রাজি।সামনের শুক্রবারে বিয়ে।আমি চলে যাবো সেই খুশিতে বাবার স্ত্রী রিতিমত আনন্দে ফুটছেন।সব জেনেও কেন বিয়েতে রাজি হলেন সেটাই মাথায় ঢুকছেনা।অনেক চেষ্টা করেও তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।হলুদ দিয়ে গোসল করিয়ে সেই বিকেল থেকে আমাকে একপ্রকার নজর বন্দি করে রেখেছে বাবার স্ত্রী।তার ধারনা আমি বিয়ে ভাঙ্গতে কিছুনা না কিছু করবোই।

বিয়েবাড়ির হৈচৈ কিছুই আমার ভালো লাগছেনা।মনের মধ্যে একটা কথাই খচখচ করছে বংশ রক্ষার ক্ষমতা নেই জেনেও কেন বিয়ে করছেন ভদ্রলোক।বিয়ের পর বিদায়ের সময় ভাইটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেদেছি।বাবার চোখে পানি দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। এই বাড়িতে বরন করে সব নিয়ম কানুন শেষ করে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেল কয়েকজন মিলে ঘড়িতে রাত ১:১০।

দেহের ক্লান্তির চাইতে মনের ক্লান্তি বেশি ভর করছে।মনটাকে অস্থির করে দেয়া প্রশ্নটার উত্তর জানতে এতোটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম যে মানুষটা ঘরে আসতেই প্রশ্নটা করে বসলাম।

দুর থেকে মোয়াজ্জিনের আযানের শব্দে ঘোর কাটলো।বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতেই বিছানার দিকে চোখ গেলো।ফুলগুলো তাদের সৌন্দর্য হারিয়ে মলিন হয়ে গেছে নেই তাদের সেই মন মাতানো সৌরভ।কেউ হয়তো খুব যত্নকরে সাজিয়েছিলো এই বাসর।তার মনে হয়তো কামনা ছিলো এই ফুলের মত সুন্দর হবে আমার বাসররাত।এভাবেই ভালোবাসার সৌরভে ভরে উঠবে আমাদের দাম্পত্য জিবন।কিন্তু কোন কোন ফুল যে সৌরভ ছরানোর আগেই ঝরে যায়।যেমনটা আমি।
নামায পরে বিছানা পরিস্কার করে বিছানায় শরীর রাখতেই চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।......
চলবে......

মাতৃত্ব(১)
রিমঝিম রিনি
মাতৃত্ব (২)
রিমঝিম রিনি

ঘড়িতে চোখ পরতেই দেখি ৮: ২০।এতো দেরি হয়ে গেছে।ঐ বাড়িতে ছয়টার পর উঠলেই অনেক কথা শুনতে হতো।কোন একদিন দেরি হলে কোন কাজ বাকি থাকলে সেদিন আর ভার্সিটি যাওয়া হতো না।নামায পরে ঘুমালেই এই সমস্যা হয় ঘুম ভাঙ্গেইনা।এটাতো শ্বশুর বাড়ি না জানি কত কিছু অপেক্ষা করছে।ভয়ে ভয়ে নিচে নেমে দেখি আমার শাশুড়ি টেবিল গোছাচ্ছেন।আমি শাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে তাকে সালাম করতে নিলে তিনি আমাকে বাধা দিয়ে জরিয়ে ধরলেন

শাশুরি নামক মানুষটাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।একটা মানুষ এতো সহজে কাওকে নিজের সন্তানের মত আপন করতে পারে তা ওনাকে না দেখলে কখনই জানতে পারতামনা।ওনার নামের মত মনটাও মমতায় পরিপূর্ণ। সবচেয়ে অবাক হয়েছি ওনার মুখে মনি ডাকটা শুনে।স্কুলে কলেজে এমনকি অাত্মীয় স্বজন সবাই আমাকে মনিরা বলে ডাকে শুধু মা আমাকে মনি বলে ডাকতো।শাশুড়ি মায়ের মুখে ডাকটা শুনে মায়ের কথা মনে পরতেই চোখদুটো ঝাপসা হয়ে গেলো।শাশুড়ি মা আমাকে বুকে জরিয়ে মায়ের মত সামলে নিলেন।মা যাওয়ার পর আজ প্রথম কেও আমার চোখের পানি মুছে দিলো।

এই বাড়িতে আমি সহ পাচজন মানুষ।আমার শ্বশুর মারা গেছেন। আমার দেবর সাগর ক্লাস ফাইভে পড়ে আর ননদ সীমানা ক্লাস থ্রীতে।শ্বশুরের রেখে যাওয়া কাপড়ের দোকান সামলান আমার বর।
সাগর সীমান স্কুলে চলে গেলো।সারাবাড়ি জুরে কেবল আমি আর মা।শাশুড়ি মা কড়া করে বলে দিয়েছেন তাকে মা ডাকতে হবে।আর আমিও মা হারিয়ে দ্বিতীয় বার মায়ের আদর পাওয়ার সুযোগ ছাড়তে চাইনা।

যদিও মা তেমন কোন কাজ করতে দেয়নি তাও যতটুক সম্ভব ওনাকে সাহায্য করেছি।মায়ের সাথে থাকলে সময় কখন পার হয়ে যায় বুজতেই পারিনা।
দুপুরে নীল এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।মানুষটা কেমন যেন অদ্ভুত। সে তার নিজের দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত।যে কারনেই হোক যেভাবেই হোক আমাদের বিয়েটাতো হয়েছে।আমি তার স্ত্রী। মানুষটা একটাবার ঠিকমত কথাও বলেনি।স্বামী সংসার নিয়ে কল্পনায় আকা ছবিটার কোন দিক দিয়েই মিল পাচ্ছিনা। তার এমন আচরনের কারন কি শুধুই আমার অক্ষমতা নাকি অন্যকিছু।অন্যসব মেয়ের মত আমিও স্বামী সংসার নিয়ে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম।কিন্তু নিমিষে তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।

সীমানার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম।মা ডাকছে বলেই হাত ধরে টেনে আমাকে সাথে নিয়ে চললো। মেয়েটা দেখতে এতো মিষ্টি যে কেও আদর করবে।আর একদিনেই এমন ভাবে মিশে গেছে যেন কতদিন ধরে চিনে আমাকে।

দুপুরের পর থেকে শুয়ে বসে সময় কেটেছে।সন্ধ্যায় নামাজ পরে মায়ের রুমে গিয়ে দেখি মা কাপড় গোছাচ্ছেন।সাগর আর সীমানাকে পড়ছে।আমাকে দেখে মা ডেকে কাছে বসালেন।কথায় কথায় মা বললেন উনি আমাকে রাস্তায় কোন বাচ্চাকে খাবার কিনে খাওয়াতে দেখেছেন সেখানে দেখেই উনি আমাকে পছন্দ করেন আর সেই দোকানির কাছে খোজ নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।মা চলে যাওয়ার পর থেকে যখনি শুনি কোন বাচ্চার মা নেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।যখনি সুযোগ পাই চেষ্টা করি মা হারা একটা শিশুর মুখে একবারের জন্য হলেও হাসি ফুটিয়ে তুলতে।


:জানিস মনি...তোকে প্রথম দেখেই আমার অনেক পছন্দ হয়েছিলো।যার মনে এতো মায়া তার মনটা নিশ্চয় অনেক সুন্দর।আমি সবসময় তোর মত মিষ্টি একটা মেয়েকেই আমার ছেলের বৌ করতে চেয়েছি।আর আল্লাহ তা কবুল করেছেন।আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই।আল্লাহ আমার সব সন্তানকে ভালো রাখুক সুখে রাখুক এটাই কামনা করি সবসময়।আমি জানি আমার ছেলেটা একটু গম্ভীর স্বভাবের কিন্তু ওর মনটা খুব ভালো।

দেখিস ও ঠিক সংসারি হবে।আর একটা বাচ্চা চলে আসলে আরো দায়িত্ববান হয়ে উঠবে।আমার নাতি /নাতনি হলে আমি সারাদিন তার সাথে সময় কাটাবো তখন কিন্তু তোকেই সংসারের সব সামলাতে হবে।যতদিন নাতি নাতনি না আসছে ততদিন তোর কোন কাজ করতে হবেনা।
মায়ের মুখে বাচ্চার কথা শুনে সারাশরীর কেপে উঠলো।নাতি নাতনি নিয়ে মায়ের আশা আমি কোনদিন পূরন করতে পারবোনা মানুষটার চোখে মুখে খুশির ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠছে। যখন মা জানবে আমি তাকে এই খুশি কখনোই দিতে পারবোনা তখন নিশ্চয় অনেক কষ্ট পাবে।মায়ের কথার কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।


স্কুলে যখন বান্ধবীরা প্রতিমাসের কয়েকটা দিন খুব অসস্থিতে কাটাতো তখন নিজেকে ওদের থেকে আলাদা মনে হতো।কলেজের বান্ধবীরা কোন প্যাড ভালো কোন প্যাড বেশি শোষন করে এসব টপিক নিয়ে কথা বলতো তখন নিরবে তাদের মাঝ থেকে সরে আসতাম।মাসের কয়েকটা দিন মাকে নামাজ পরতে দেখতামনা কিন্তু আমাকে মা ঠিক পরাতো।মা কেন নামাজ পরছেনা জিগ্যেস করলে বলতো আল্লাহ নারীকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন তাই কিছু সময় নামাজ মাফ করে দেন।তখন খুব রাগ হতো আমার নামাজ কেন মাফ করেনা।

তাহলেকি আমাকে আল্লাহ পছন্দ করেননা।যতবার প্রশ্ন করতাম মা ততবার অন্যকোন কথা বলে আমার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতেন।এখনো মনে আছে পাশের বাড়ির কারো ছোট বাচ্চা হলে বারবার সেই বাচ্চাকে কোলে নিতে তাদের বাড়ি যেতাম। মাকে বলতাম আমাদের বাসায় কেন বাবু আনোনা।বাচ্চাদের প্রতি আমার কেমন যেন একটা অন্যরকম টান অনুভব হয়।

কিছু পরার শব্দে তাকিয়ে দেখি নীল নিচে থেকে কিছু তুলে পকেটে রাখলো বারান্দা থেকে রুমে আসতে আসতে নীল বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
আজ বিয়ের সাতদিন হয়েগেছে।এই সাতদিনে একবারো বাবা একটা খোজ নেয়নি।হয়তো আপদ বিদায় হয়েছে ভেবে ভালো আছে

সারাদিন মায়ের সাথে থেকে সময় কেটে যায়।সাগর সীমানা সারাক্ষণ ভাবী ভাবী করে আমার আগে পিছে ঘুরে।ছেলে মেয়ে দুটো খুবই শান্ত।আর পড়াশোনায় খুব ভালো।
এই সাত দিনে নীলের সাথে সাত সেকেন্ডও কথা হয়নি।নিজের কাজে রুমে আসে কাজ শেষে বেরিয়ে যায়।রাতে রুমে থাকেনা হয়তো বাড়িতেই থাকেনা।তবে এই ব্যাপারে মাকে কিছুই বলিনি আমি।

রাত ১২: ৪৫ নীল এখনো ফেরেনি।ফোনও বন্ধ।মা দোকানে গিয়েছিলো সাগরকে নিয়ে খোজ নিতে কিন্তু দোকানও বন্ধ।মা জেগে আছে বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে। মা অনেক বার বলেছে আমাকে শুয়ে পরতে কিন্তু মাকে এভাবে চিন্তায় রেখে রুমে গিয়ে শান্তি পাবোনা।মায়ের সাথেই বসে আছি।সাগর সীমানা মায়ের পাশে বসে থেকে ঘুমিয়ে পরেছে।

ভোরবেলা গেটের শব্দে মা দৌড়ে গিয়ে গেট খুলল।দোকানের ছেলে এসেছে মায়ের হাতে কিছু দিয়ে কিযেন বলে ছেলেটা চলে গেলো।ভেতরে এসে কাগজটা খুলে পড়তেই মায়ের হাত থেকে কাগজটা পরে গেলো মা সেখানেই বসে পরলেন।দৌড়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো।

কি হয়েছে জানতে কাগজটা কুড়িয়ে নিয়ে পড়তে লাগলাম। নীলের চিঠি।সে সব ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে।সে এই সংসারের দায়িত্বের চাপে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে চায়না।মানুষটা এতো সহজে সব বন্ধন মুক্তকরে চলে গেছে ভাবতেই মাথাটা ঝিমঝিম করছে।শুধু তাই নয় সে আমার অক্ষমতার দোহাই দিয়ে আমার প্রতি তার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছে।
আমার হাতের মেহেদির রং উঠার আগেই আমার জিবন থেকে স্বামী নামের ছায়াটা উঠে গেলো।
চলবে....?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url