গল্পঃ হলুদ রঙের খাম | পর্ব-০১ | লেখা:আদৃতা কর্মকার | Story: Yellow envelope | Episode-01 | Written by: Adrita Karmakar

(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লেখা) 
গল্পঃহলুদ রঙের খাম
পর্ব০১
লেখা:আদৃতা কর্মকার

আমি মা হতে পারবো না জানার পর সেদিন যখন আমার প্রেমিক আমাকে ধাক্কা দিয়ে বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছিলো, তারপর থেকে আর কোনো পুরুষকে ভরসা করা তো দূরের কথা,কারোর সাথে বন্ধুত্ব পর্যন্ত হয় নি।
তারপর মাঝে কেটে গেছে চার-চারটা বছর। আমিও নিজেকে সময় দিয়েছি, পরিবারকে সময় দিয়েছি,নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি।
 
এরমধ্যে বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য দেখাশোনা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু কোনো ছেলেই বাবা হওয়ার সুখ কম্প্রোমাইজ করে আমায় বিয়ে করতে রাজি হয় নি। ফলত এই নিয়ে বাবা-মা দু'জনেই রোজ চিন্তা করতেন। আমি সবই বুঝতাম কিন্তু কি করবো, কি বলবো কিচ্ছু বুঝতাম না। আমি মূলত বিয়ে জিনিসটাকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতাম।
প্রতি রবিবার আমায় সাজিয়ে গুছিয়ে বসানো হয় ছেলের বাড়ির সামনে আর প্রতিবারই সত্যিটা জানার পর সবাই "আচ্ছা পরে জানাচ্ছি" বলে উঠে যায়।
আমার নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগতো। বাবার মুখের দিকে তাকালেই বুকটা কেমন যেন ভার হয়ে আসতো।
 
প্রতি রবিবারের মতো আজও ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসবে। ছেলে অনিরুদ্ধ বাসু। ইন্জিনিয়ার ছেলে স্বয়ং এসেছে আমায় দেখতে!
কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বলার পর বড়োরা আমাদের আলাদা করে কথা বলার জন্য ছাদে পাঠিয়ে দেয়। আমার কাছে অবশ্য এই দৃশ্য খুব চেনা!
আমি ছাদে এসে সত্যিটা বলবো আর তারপর সবাই নীচে গিয়ে "পরে জানাচ্ছি" বলে কেটে পরে! 
 
ছাদে যেতেই উনি আমায় প্রথম জিজ্ঞেস করেন আমার গান শুনতে ভালো লাগে কি না। প্রথমেই এই প্রশ্ন শুনে আমি কিছুটা অবাক হই কারণ এতদিন যারা এসেছিলেন তারা হয় আমি কি কি রান্না জানি নয়তো আমার অতীতের প্রেম নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। ফলতঃ ওনার এই প্রশ্নে আমার অবাক লাগে। যাইহোক এক কথা-দু' কথায় আমি এবারে আমার সেই সত্যিটা বলে ফেলি। উনি কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ছাদ থেকে নেমে চলে আসে। আমি মনে মনে সেদিন খুব হেসেছিলাম!
আমার কাছে এটা অবশ্য নতুন কিছু ছিল না।
 
পাঁচ বছর ধরে সম্পর্কে থাকা প্রেমিক যখন আমায় দূরে সরিয়ে দিয়েছে সেখানে ওনার এসব জেনে বুঝে আমাকে বিয়ে করাটা একপ্রকার অসম্ভবই বটে!
আমি জানতাম এই সম্বন্ধটাও চলে যাবে। বাবা আবার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের কাছে ফোন করে ভালো ছেলের খোঁজ করবে। এসব ভাবতে ভাবতে ছাদ থেকে নেমে এসে দেখি ওনারা সবাই চলে গেছেন। আমিও কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শাড়ি-গয়না খুলতে শুরু করি। 
 
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াই, নিজের চোখে চোখ রাখতেই বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে! নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, আচ্ছা মেয়ে হয়ে জন্মানো মানেই কি বাচ্চার জন্ম দিতেই হবে?
জন্ম না দিলে কি মা হওয়া যায় না?
নিজের পেটে না ধরলে কি সন্তান সুখ মেলে না?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম মনে নেই!
আজ সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি সকাল সাড়ে নয়টা! আমি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নামতে যাবো তখনি দেখি পাশের টেবিলে একটা গোলাপ আর একটা হলুদ রঙের খাম।
খামটা খুলতেই তাতে লেখা "Happy One Year of Togetherness Mrs. Basu!"
 
চলবে .....
 পর্ব-০১
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url